মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসানুর রহমান তানজির, খুলনা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২৫, ১২:৪৪ এএম

টেন্ডার সিন্ডিকেটে কুয়েট ভিসি

হাসানুর রহমান তানজির, খুলনা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২৫, ১২:৪৪ এএম

টেন্ডার সিন্ডিকেটে কুয়েট ভিসি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) আবারও শুরু হয়েছে নিয়োগ বাণিজ্য ও টেন্ডার সিন্ডিকেট। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাসুদ নিয়োগ পেয়েছেন পাঁচ মাসও পার হয়নি। এ সময়ের মধ্যেই অস্থায়ী ভিত্তিতে তিনি নিয়োগ দিয়েছেন ৪২ জনকে।

সিন্ডিকেট করে নিজের ঘনিষ্ঠজনদের ৩৫ লাখ টাকার দরপত্র ২৪ লাখ টাকায় দিয়ে ১১ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের। আর এসব করে যাচ্ছে চারজন কর্মচারীর মাধ্যমে, যারা তার ‘চার খলিফা’ নামে পরিচিত। তাদের দুজন বর্তমান উপাচার্যের আমলে পদোন্নতি পেয়ে কর্মকর্তা হয়েছেন।

জুলাই আন্দোলনের পর গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ঠিক এক মাসের মাথায় বিশ্ববিদ্যালয়টির অষ্টম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাসুদ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী, বাংলাদেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টাররোল ও এডহক নিয়োগের সুযোগ নেই। অথচ কুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর যোগদানের মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে ৪২ জনকে কোনোপ্রকার দাপ্তরিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে নিয়োগ দিয়েছেন। যার বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী। অভিযোগ রয়েছে, এই প্রতিটি মাস্টাররোল ও দৈনিক হাজিরাভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়েছেন এবং পরবর্তী নিয়োগের ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি প্রক্রিয়াধীন।

এ ছাড়া কোনোকিছুর তোয়াক্কা না করে নিজ ক্ষমতাবলে মো. মনিরুজ্জামানকে ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতি দিয়েছেন বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক মুহাম্মদ মাসুদ। এই মনিরুজ্জামান ডেটা প্রসেসর পদে নিয়োগ পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হয়ে ওঠেন সাবেক উপাচার্যের নিয়োগ বাণিজ্যের হাতিয়ার। স্ত্রী ও আপন ছোট ভাইয়ের চাকরির পাশাপাশি নিজেও কর্মচারী থেকে হয়ে যান কর্মকর্তা। তবে নিয়োগের প্রতিটি ধাপে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন মনিরুজ্জামান। ফলে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের অডিট আপত্তিতে উঠে আসে নিয়োগ আর পদোন্নতিতে অনিয়মের তথ্য। পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষা অডিট শাখা ২০২২-২৩ অর্থবছরের হিসাব নিরীক্ষায় সহকারী রেজিস্ট্রার মো. মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও অনিয়মিতভাবে নিয়োগ প্রদান করায় বেতন হিসেবে নেওয়া ৫৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০০৬ সালে সহকারী সেকশন অফিসার পদের নিয়োগের সময়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা ঘাটতি থাকায় মনিরুজ্জামানের নিয়োগ বাতিল করারও সুপারিশ করা হয়েছে এ অডিট প্রতিবেদনে। এসব কোনো সুপারিশের তোয়াক্কা করেননি বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক মুহাম্মদ মাসুদ।

তবে নবনিযুক্ত ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. মনিরুজ্জামান সাবেক উপাচার্যের কাছ থেকে সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, যা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মেনেই হয়েছে। তার স্ত্রী ও ছোট ভাইয়ের চাকরিতে তার কোনো প্রভাব নেই বলেও দাবি করেন মনিরুজ্জামান।

অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান ভিসি টেন্ডারে করেছেন সিন্ডিকেট। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন ১৬ ও ১৭ নম্বর ভবন দুটি ভেঙে বিক্রির জন্য নিলাম দেয় কর্তৃপক্ষ। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দুটি ভবনের নিলামের বুক ভ্যালু নির্ধারণ করা হয় ১৭ লাখ ৫ হাজার ৯৭৭ টাকা করে মোট ৩৫ লাখ ১ হাজার ৯৫৪ টাকা। এই টেন্ডার সিন্ডিকেট করে নিজের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী মীর কায়সেদ আলীর মালিকানাধীন মেসার্স আর কে এন্টারপ্রাইজকে দুটি ভবন ২৪ লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন উপাচার্য। ফলে ১১ লাখ টাকার ক্ষতি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের।

এদিকে একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুয়েট এখন চলে চার খলিফার ইশারায়, যার প্রধান হলেন এমদাদুল হক ওরফে এমদাদ মোড়ল।

স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা হিসেবে কুয়েটে সবকিছুর ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন তিনি। ডেটা এন্ট্রি প্রসেসর হলেও পদোন্নতি নিয়ে হয়েছেন সেকশন অফিসার। দ্বিতীয়জন জালাল মুন্সী। অফিস সহায়ক থেকে একেবারে সেকশন অফিসার হয়েছেন তিনি। বাকি দুজন ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট আশরাফুল আলম ও অফিস সহায়ক সাইফুলও একধাপ পদোন্নতি নিয়েছেন বর্তমান উপাচার্য মুহাম্মদ মাসুদ যোগদানের পর। এমন কর্মকাণ্ডের ফলে কুয়েটের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাসুদ বলেন, সরকারি নির্দেশনা আছে বুক ভ্যালুর ৬০ শতাংশ মূল্য পেলে বিক্রি করা যাবে। এই আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ দরদাতাকে দেওয়া হয়েছে। কর্মচারী নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারি আইন রয়েছে মাস্টাররোলে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। তবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে কিছু মানুষকে দৈনিক মজুরিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছি। এখানে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি। তিনি আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতির প্রমাণ পেলে আপনারা আমাকে ধরিয়ে দেবেন।

আরবি/জেডআর

Link copied!