হাসান মাঝি ও তার ভাই ছাবের মাঝি পেশায় নৌকার মাঝি। মাত্র কয়েক বছর আগেও তারা সাগরে মাছ ধরে সংসার চালাতেন এবং তাদের ছিল একটিমাত্র টিনের ঘর। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরাত’ এমন কষ্টের দিন ছিল তাদের। কিন্তু হঠাৎ করেই তাদের জীবন পাল্টে যায়।
এখন তারা বিলাসবহুল গাড়ি চালান, চারতলা বিলাসবহুল বাড়ি ‘শরিফ মঞ্জিল’ গড়ে তুলেছেন এবং তাদের নিজস্ব একাধিক নৌকা রয়েছে। এমনকি নামে-বেনামে তারা অঢেল সম্পত্তির মালিকও হয়ে গেছেন।
স্থানীয়রা জানান, হাসান ও ছাবের মাঝির এই অস্বাভাবিক উত্থান সম্ভব হয়েছে ইয়াবা ব্যবসার মাধ্যমে। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার রায়পুরা ইউনিয়নের দক্ষিণ পরুয়াপাড়া এলাকার মৃত আব্দুল হামিদের দুই ছেলে মো. হাসান ও মো. ছাবেরুল ইসলাম। স্থানীয়দের কাছে মাঝি হিসেবে পরিচিত হলেও তাদের এমন বিপুল সম্পত্তি অর্জনের বিষয়ে অবাক এলাকার মানুষ।
২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করে সিআইডি। সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের উপপরিদর্শক মো. জোনাঈদ হোসেন তদন্তে তাদের বিপুল সম্পত্তির সন্ধান পান।
আসামিদের অবৈধ আয়ে অর্জিত আনোয়ারা থানাধীন দক্ষিণ পরুয়াপাড়া মৌজায় স্থাবর সম্পত্তির সাতটি জমির মোট ৮৩ শতাংশ জায়গার তথ্য উল্লেখ করে তা ক্রোক করার ও রিসিভার (তত্ত্বাবধায়ক) নিয়োগের জন্য আদালতে আবেদন করেন।
শুনানি শেষে গত বছরের ২৩ এপ্রিল সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত চট্টগ্রামের বিচারক আসামিদের স্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়ে সিআইডিকে ক্রোককৃত সম্পত্তির রিসিভার (তত্ত্বাবধায়ক) নিয়োগ দেওয়ার আদেশ দেন। গত সপ্তাহে এসব সম্পত্তি ক্রোক করে রিসিভার নিয়োগ দেয় সিআইডি। ক্রোক করা এসব সম্পত্তির বর্তমান বাজারমূল্য কোটি টাকার ওপরে বলে জানা গেছে।
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানেও ছাবেরুল ইসলামের মোট সম্পত্তি ৯০ লাখ ২২ হাজার টাকা ধরা পড়েছে, যা তিনি প্রথমে ৬২ লাখ ২১ হাজার টাকার দাবি করেছিলেন। অন্যদিকে, হাসান মাঝি ৩৭ লাখ ৪ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে জানিয়েছে দুদক।
সিআইডির মানিলন্ডারিং মামলার পর থেকে পলাতক রয়েছেন মো. হাসান ও ছাবেরুল ইসলাম মাঝি। দুদক জানিয়েছে, ইয়াবা ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত তাদের এই বিপুল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য তারা আদালতে আবেদন জানাবে।
আপনার মতামত লিখুন :