ঢাকা শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫

৫ বছরেও নির্মাণ হয়নি সেতু, ভোগান্তিতে ২০ গ্রামের মানুষ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২৫, ০৫:৫৫ পিএম

৫ বছরেও নির্মাণ হয়নি সেতু, ভোগান্তিতে ২০ গ্রামের মানুষ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় বন্যায় ভেঙে যাওয়া দুটি সেতু ৫ বছরেও পুনঃনির্মাণ না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে ৩ ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের মানুষ। সেতুর অভাবে পাকা সড়কটি দিয়ে যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা পায়ে হেঁটেও যাতায়াত করতে পারছে না এসব এলাকার মানুষ।

বিশেষ করে বিড়ম্বনায় পড়েছে ওই এলাকার স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীসহ অসুস্থ রোগীরা। ফলে সড়ক থাকলেও সেতুর অভাবে ব্রহ্মপুত্র নদী বেষ্টিত পূর্ব পাড়ের মানুষ দুই উপজেলা থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার তবকপুর, ধামশ্রেনী ও চিলমারী উপজেলার থানাহাট, বানীগঞ্জ ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত পূর্ব অঞ্চলের মানুষের দুই উপজেলার সাথে যোগাযোগের সুবিধার জন্য  কুড়িগ্রাম-চিলমারী রোডের চুনিয়ার পাড় হতে উলিপুর আজমের মোড় পর্যন্ত ৬.৫০ কিলোমিটার সড়ক ও ২টি সেতু ২০১৫ সালে ৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। ২০১৯ সালের বন্যায় তবকপুর ইউনিয়নের আমতলী সেতু ও চুনিয়ার পাড় সেতুটি দেবে যায় এবং সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সেই থেকে সেতুর অভাবে সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, সড়কটি পাকা করায় দুই উপজেলার সাথে এ এলাকার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধা হয়েছিল। কিন্তু বন্যায় সেতু ২টি দেবে যাওয়ায় আবারও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এলাকাটি। চুনিয়ার পাড় দেবে যাওয়া সেতু দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোনো রকমে চলাচল করা গেলেও আমতলীর দেবে যাওয়া সেতু দিয়ে কোন কিছু চলাচল সম্ভব নয়। গ্রামবাসীরা বাধ্য হয়ে চলাচলের জন্য স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে দেবে যাওয়া সেতুর পাশ দিয়ে বাঁশের সাকো নির্মাণ করে কোন রকমে মানুষ ও বাইসাইকেল পারাপারের ব্যবস্থা করেছিল। কিছুদিন চলাচলের পর সে সাঁকোটিও ভেঙেচুরে শেষ হয়ে যায়। শুকনো মৌসুমে  মানুষজন পায়ে হেঁটে জমি দিয়ে চলাচল করলেও পানি হলে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা বা চার চাকার গাড়ি চলাচল বন্ধ বয়েছে। কেউ অসুস্থ হলে জরুরি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে বিড়ম্বনা সহ দূর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।  শিক্ষার্থীরা পড়েছে বিপাকে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল উপজেলার বাজারে নিয়ে যেতে পাচ্ছেন না।

বিষ্ণু বল্লভ গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, সড়কটি নির্মাণ হওয়ায় পর রিকশা, অটোরিকশা জেএসএ, সিএনজি সহ ছোট বড় যান চলাচল করত। ফলে আমাদের খুব সুবিধা হয়েছিল। এখন সব বন্ধ, তাই পায়ে হেঁটে কষ্ট করে যাতায়াত করতে হয়।

ট্রাক ড্রাইভার বকুল মিয়া বলেন, ডিউটি শেষ করে ট্রাক মালিকের ঘরে রেখে রাত বিরাতে অটোতে চড়ে বাড়ি আসতাম। এখন হেঁটে বাড়িতে আসতে হয়।

উলিপুর সরকারী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় বা কলেজ নেই। সড়কটি নির্মাণ হওয়ায় আমরা এই এলাকার মেয়েরা স্কুল ও কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু সেতু দেবে যাওয়ায় আমাদের কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।

অটোচালক আব্দুল খালেক বলেন, সড়কটি পাকা হলে অটো চালিয়ে সংসার চলাতাম। এখন সে রোজগারে ভাটা পড়েছে।

আমতলী বাজারের ব্যবসায়ী আকবর আলী বলেন, সড়ক নির্মাণ হওয়ার পর গ্রামীন বাজারটি জমজমাট হয়েছিল। কিন্তু সেতু দেবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বাজারে এখন আর আগের মতো লোকজন আসে না, ব্যবসায়ও মন্দা চলছে।

শারীরিক প্রতিবন্ধী আব্দুল কাইয়ুম সরকার বলেন, চুনিয়ার পাড়, আকন্দপাড়া, তামাকুপাড়া, কবিরাজপাড়া, বান্দারঘাট, বানু কিষামতপাড়া, হিন্দুপাড়া, বাজারঘাট, বিষ্ণু বল্লভ, খামার তবকপুর, পাগলারঘাট, বড়ুয়া তবকপুর, আমতলীসহ ২০ গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ সেতুর অভাবে চলাচলের ভোগান্তিতে পড়েছে।

তবকপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান বলেন, সড়কটি পাকা হওয়ায় মানুষের দীর্ঘ দিনের কষ্ট লাগব হয়েছিল। কিন্তু সেতু ২টি ভেঙে যাওয়ায় ২০ গ্রামের মানুষ আবারও সেই কষ্টে পড়েছে। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এপর্যন্ত সেতু নির্মাণের জন্য উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করে যাচ্ছি।

উপজেলা প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার বলেন, আমতলী ও চুনিয়ার পাড় সেতু দুটি পুনঃনির্মাণের প্রস্তাব প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সেতু পূনঃ স্থাপনের ব্যবস্থা হবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!