আগামী রোববার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে শুরু হয়ে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সনাতন ধর্মালম্বীদের কাছে বিদ্যা, জ্ঞান, বাণী ও সুরের দেবী সরস্বতী। প্রতি বছর গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সনাতন ধর্মালম্ভীদের বাড়ী বাড়ী ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশের মধ্যে দিয়ে এ সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
সরস্বতী পূজাকে কেন্দ্র করে কোটালীপাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিমা নির্মাণ ও বিক্রির হাট জমজমাট হয়ে উঠেছে। প্রতিমা শিল্পী ও দোকানদারদের ব্যস্ততা এখন চোখে পড়ার মতো। প্রতিমা শিল্পী ও দোকানদারদের ব্যস্ততা এখন চোখে পড়ার মতো। আর এই পূজার প্রতিমা বিক্রির জন্য উপজেলার কালিগঞ্জ, পীড়ারবাড়ী, কান্দি, ধারাবাশাইল, শুয়াগ্রাম, চৌধূরীরহাট, ঘাঘর বাজার, বান্দল, রামশীল, জহরেরকান্দি, ওয়াপদারহাট, নৈয়ারবাড়ি, রাধাগঞ্জ, ভাঙ্গারহাট, মনোহর মার্কেট, পশ্চিমপাড়, রাজাপুর, কুশলা, লাখিরপাড় ও হিরণে প্রতিমার হাট বসেছে। হাটে ছোট-বড় নানা আকারের মাটির তৈরি সরস্বতী প্রতিমা সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
প্রতিমাগুলোতে দেবী সরস্বতীকে তার বাহন হাঁসের উপর বসে বীণা বাজাতে দেখা যাচ্ছে। প্রতিমার পাশাপাশি পূজার অন্যান্য সামগ্রী যেমন ধূপ, ধুনো, ফুল, মালা, ফলমূল, নতুন বই, খাতা, কলম ইত্যাদিও বিক্রি হচ্ছে। এসব হাট থেকে সানাতন ধর্মাবলম্বীরা সরস্বতী প্রতিমা কিনে নিয়ে পূজা করবেন।
হিরণ গ্রামের প্রতিমা শিল্পী রমেশ পাল জানান, বছরের এই সময়টায় তাদের ব্যস্ততা অনেক বেড়ে যায়। প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। কয়েক ধাপে হাটে প্রতিমা বিক্রি করা হয়েছে। কিছু কিছু প্রতিমায় এখন শুধু রং করা এবং শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি বাকি। এগুলো আগামীকালের মধ্যে বিক্রির জন্য হাটে নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, এবার প্রতিমার চাহিদা ভালো আছে এবং শেষমুহুর্তে ক্রেতাদের ভিড় আরও বাড়বে বলে আশা করছেন।
কালিগঞ্জ বাজারের প্রতিমা ব্যবসায়ী অজয় মধু বলেন হাটে ১ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন সাইজের প্রতিমা বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, কোটালীপাড়ার এই সরস্বতী প্রতিমার হাট শুধু অর্থনৈতিক কর্মকান্ডই নয়, বরং স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যেরও একটি অংশ। পূজার এই আমেজে গোটা এলাকা উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে।
তারাশী গ্রামের গ্রামের সজল মধু বলেন, আমরা প্রতি বছর আমাদের বাড়িতে সরস্বতী পূজা করে থাকি। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও আমরা বাড়িতে পূজা করবো। এ জন্য উপজেলার ঘাঘর বাজার থেকে ১ হাজার টাকা দিয়ে একটি সরস্বতী প্রতিমা ক্রয় করেছি।
অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী তপতী বিশ্বাস বলেন, প্রতিবছর আমরা সরস্বতী পূজা করি। নতুন বই ও খাতা দেবীর পায়ে রাখি, যাতে পড়াশোনায় ভালো ফল পাই।
কোটালীপাড়া শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী স্বপন বাড়ৈ বলেন, আমরা সনাতন ধর্মের শিক্ষার্থীরা বিদ্যা লাভের আশায় দেবী সরস্বতীর পূজা করে থাকি। প্রতি বছরের মতো এ বছরও আমরা এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূজার আয়োজন করেছি। এ জন্য আমরা বান্দল গ্রামের পাল বাড়ি থেকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি সরস্বতী প্রতিমা ক্রয় করেছি। আশা করছি এই পূজার মধ্যে দিয়ে দেবী সরস্বতী আমাদের জ্ঞান দান করবেন।
শিক্ষক ও কবি মিন্টু রায় বলেন, প্রতিবছর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ঘরে ঘরে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এ পূজাকে কেন্দ্র করে ৪/৫ দিন আগে থেকেই উপজেলার প্রায় ২০ স্থানে প্রতিমারহাট বসে। সেখানে উৎসবমুখর পরিবেশে ক্রেতা-বিক্রেতারা প্রতিমা কেনাকাটা করেন। কোটালীপাড়ায় ঐতিহ্যবাহী প্রতিমার হাটগুলো আরো শত শত বছর টিকে থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
আপনার মতামত লিখুন :