দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে শনিবার (০১ ফেব্রুয়ারি) থেকে আগামী ৯ মাস কোনো পর্যটক প্রবেশ করতে পারবেন না। বন্ধ থাকবে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলও। সরকারি বিধিনিষেধের অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, পর্যটক যাতায়াত বন্ধ থাকার সময়ে দ্বীপটি সুরক্ষায় মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে পরিবেশ অধিদপ্তর। এই কর্মসূচিতে দ্বীপটিকে কয়েক ভাগে বিভক্ত করে প্লাস্টিক বোতলসহ ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারে অভিযান চালানো হবে। এর বাইরে পর্যটক নিষেধাজ্ঞার সময়ে বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি উৎপাদন ও সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হবে। রয়েছে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনাও। একই সময়ে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় স্থানীয় লোকজনকে সচেতন করবে প্রশাসন।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, শনিবার থেকে কেউ সেন্টমার্টিন যাচ্ছেন কিনা, সে বিষয়ে নজরদারি করা হবে। নিষেধাজ্ঞার সময়ে দ্বীপটির বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) অনলাইনে মিটিং ডাকা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, শুক্রবার পর্যন্ত গত দুই মাসে ১ লাখ ২০ হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করেছেন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছিল– নভেম্বর মাসে পর্যটকরা দ্বীপটিতে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসবেন। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে দৈনিক দুই হাজার পর্যটকের জন্য সেন্টমার্টিন ভ্রমণ ও সেখানে রাত যাপনের সুযোগ রাখা হয়
এদিকে জুন, জুলাই, আগস্ট-এই তিন মাসে বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় পর্যটক ও সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা সেন্টমার্টিনে তেমন যান না। এই সময়ে প্রভাবশালীরা দ্বীপের ভ্রমণ নিষিদ্ধ এলাকায় রিসোর্টসহ নানা অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে আসছেন। এসব স্থাপনায় ব্যবহৃত হয় সৈকত থেকে তুলে আনা পাথর। পরিবেশকর্মীরা বলছেন, এবার যাতে পর্যটক না থাকার সময়ে কেউ এ ধরনের স্থাপনা তৈরি করতে না পারেন, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, সেন্টমার্টিনে অবৈধভাবে ২৩০টি হোটেল-রিসোর্ট-কটেজ রেস্তোরাঁ তৈরি হয়েছে। পর্যটন বন্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দ্বীপের মানুষের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কক্সবাজার শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, পর্যটক কমায় দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাচ্ছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, দ্বীপ সুরক্ষায় মাসব্যাপী যে কর্মসূচি, তা ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে। পর্যটক যাতায়াত বন্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় লোকজনের বিকল্প জীবিকার বিষয়টিও ভেবে দেখা হচ্ছে।
এদিকে ফেব্রুয়ারি মাসে পর্যটক যাতায়াত উন্মুক্ত করতে মানববন্ধন করেছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনগণ।তাদের দাবী শুধু ২ মাস ব্যবসা করে দশ মাস চলা অসম্ভব।আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচীতে দ্বীপবাসীর পাশাপাশি স্থানীয় হোটেল-মেটেল ও কটেজ মালিক সমিতি, ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার-টুয়াক, রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতি, সাভিস ট্রলার মালিক সমিতি, স্পিডবোট মালিক সমিতি, ভ্যান গাড়ী মালিক-শ্রমিক সমিতি এবং বাজার ব্যবস্থাপনা ব্যবসায়ি সমিতিসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের কয়েক শত লোকজন অংশগ্রহণ করেছেন।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, চলতি পর্যটন মৌসুমে সরকারি বিধি-নিষেধের কারণে পর্যটক যাতায়ত সীমিত থাকায় এমনিতেই দ্বীপবাসী নানা সংকট ও সমস্যায় জর্জরিত। এতে আগামী বর্ষা মৌসুমে দ্বীপবাসীর দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করবে। তার উপর দীর্ঘদিনের দাবি উপেক্ষা করে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সরকারি নির্দেশনা বহাল রাখায় দুঃশ্চিন্তায় রয়েছে দ্বীপবাসী।
সমাবেশে বক্তারা দ্বীপবাসীর প্রাণের দাবি মেনে নেওয়ার আহবান জানিয়ে বলেছেন, দ্বীপবাসীর জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনা করে সরকার যেন অন্তত ফেব্রুয়ারি মাসে যেন জাহাজ চলাচল চালু রেখে পর্যটক যাতায়াতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে।