বগুড়ার ধুনটের অবৈধ ইটভাটায় চলছে অবাধে শিশুশ্রম। ফসলি জমির মাটি কেনার হিরিক তো আছেই। শনিবার ১ ফেব্রুয়ারী উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের কাশিয়াহাটা গ্রামের জননী ইটভাটায় এবং কুড়িগাঁতী গ্রামের আসল ইটভাটায় এমন চিত্র দেখা মেলে। উপজেলার জুড়ে এমন নামে বেনামে গড়ে উঠেছে অনেক ইট ভাটা। ইটভাটা গুলোতে ট্রেড লাইসেন্স থাকলেও অধিকাংশ ইটভাটায় নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, বিএসটিআই অনুমোদন ও জেলা প্রশাসকের অনুমতি। ইট ভাটার মালিক পক্ষ ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন’ কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে করে শিশুশ্রম করিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১৪ বছরের কম বয়সী এমন অনেক শিশুরা কাজ করছে দিব্বিতে। যে হাতে থাকার কথা ছিল বই খাতা তার পরিবর্তে অল্প বয়সী শিশুদের হাতে তুলে দিচ্ছে ইট তৈরির মতো কঠিন কাজ। কারো কারো বয়স আবার ১০ এর নিচে।
উভয় ইটভাটায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ না থাকায় কর্মরত শ্রমিকসহ অনেকে জানান, প্রতিটি সাড়ির ইট উল্টিয়ে দিলে মালিকপক্ষ শিশু শ্রমিকদের দেন ২০ থেকে ২৫ টাকা। কয়েকজন শিশু শ্রমিকও অকপটে আর্থিক বিষয়টি স্বীকার করে। এক শিশু শ্রমিক জানান, আমাদের টাকা দেয়, আমরা কাজ করি।
স্থানীয় এক অভিভাবক জানান, শিশুরা যখন বাবা মার কাছে টাকা না পায় তখন ভাটায় এসে কাজ করে। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, অনেক শিশুই লেখাপড়া করেনা। দু একজন লেখাপড়া করলেও স্কুল থেকে বাড়িতে গিয়ে বই রেখেই কাজ করতে চলে আসে ইট ভাটায়।
স্থানীয় এক শিক্ষক জানান, কৃষিজমি নষ্ট ও পরিবেশের ক্ষতি করে ইট তৈরি এবং উর্বর ফসলি জমির উপরের অংশ দিয়ে ইট বানানো বন্ধ করা জরুরি। ইটভাটার দূষিত গ্যাস ও নির্গত তাপ আশে-পাশের জীবজন্তু, গাছ-পালা এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন এবং মানুষের স্বাস্থ্যহানি ঘটে। শিশুশ্রম আইনত দণ্ডনীয়। তবে ইটভাটা মালিকদের যেমন সচেতন হওয়া জরুরী তেমনি অভিভাবকদেরও সচেতন হওয়া জরুরী। প্রশাসন যদি একটু গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি তদারকি করে তাহলে শিশুশ্রম বন্ধ হওয়া সম্ভব।
সরজমিন প্রমান থাকার পরেও প্রশ্নের জবাবে জননী ইটভাটা মালিক আব্দুল আলিম জানান, আমার ইটভাটায় কোন শিশুশ্রম হচ্ছেনা। আমি নিজেও শিশুশ্রমের পক্ষে না।
আপনার ইট ভাটায় শিশুশ্রম হচ্ছে বিষয়টা কিভাবে দেখেন মুঠোফোনে এমন প্রশ্নে আসল ইটভাটা মালিক রেজাউল ইসলাম জানান, আমার ভাটায় কোন শিশুশ্রম হয়না। আপনি কিভাবে দেখলেন এটা বুঝলাম না। আপনি নিউজে কি লিখবেন লেখেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন শুক্র ও শনিবার স্কুল বন্ধ থাকায় কিছু ছেলে কাজ করে। আমার কোন মন্তব্য নেই বলে ফোন কেটে দেন। পরে তিনি কল করে নিউজ না করার জন্য প্রতিবেদককে ঘুষ দিতে চান।
এ বিষয়ে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খৃষ্টফার হিমেল রিছিল বলেন, শিশুশ্রম আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এটা ইটভাটা মালিকদের অবগত করা হয়েছে। ইট ভাটায় শিশুশ্রম সংক্রান্ত বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। ইট ভাটা বা অন্যকোন কাজে শিশুদের দিয়ে কাজ করানোর কোন সুযোগ নেই।
আপনার মতামত লিখুন :