টঙ্গীর তুরাগতীরে তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আজ রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। গতকাল শনিবার ফজরের নামাজের পর থেকে আমবয়ানের মাধ্যমে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল লাখো মুসল্লি। চলছে চিল্লাভিত্তিক আলোচনা। ইজতেমায় অংশ নেওয়া মুসল্লিদের উদ্দেশে তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় আলেম ও মুরব্বিরা পর্যায়ক্রমে কোরআন-হাদিসের আলোকে ঈমান, আমল, আখলাক ও কালেমা সম্পর্কে বয়ান পেশ করবেন।
রোববার বাদ ফজর ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমান বয়ান করবেন। আখেরি মোনাজাতের পূর্বে নসিহতমূলক বক্তব্য দেবেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহীম দেওলা সাহেব। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন মাওলানা জুবায়ের আহমেদ।
তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের শুরায়ে নেজাম (মিডিয়া সমন্বয়ক) হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, শনিবার বাদ ফজর থেকে পাকিস্তানের মাওলানা খোরশেদ সাহেব বয়ান করেছেন। তার বয়ান বাংলায় তরজমা করছেন মাওলানা উবায়দুর রহমান। সকাল ১০টায় খিত্তায় খিত্তায় তালিম হয়েছে। বিশেষ দুটি প্রগ্রামে ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা ওলামাদের উদ্দেশে বয়ান করেছেন, ভারতের মাওলানা আকবর শরিফ তলাবাদের (মাদাসার ছাত্রদের) উদ্দেশে নামাজের মিম্বরে বয়ান করেছেন, বাদ জোহর ভারতের মাওলানা ইসমাঈল গোদরা, বাদ আসর ভারতের মাওলানা জুহায়ের বয়ান করেছেন। বাদ মাগরিব ভারতের মাওলানা ইব্রাহীম দেওলা বয়ান করবেন।
ইজতেমার প্রথম পর্বে ৪ মুসল্লি নিহত হয়েছেন। তারা হলেন-খুলনা জেলার ডুমুরিয়া বাজার এলাকার লোকমান হোসেন গাজীর ছেলে আব্দুল কুদ্দুস গাজী (৬০), শেরপুর জেলার শ্রীবরদী থানাধীন রানী শিমুল গ্রামের মৃত আব্দুল্লাহর ছেলে ছাবেদ আলী (৭০), হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল থানাধীন রাগবপুর এলাকার মৃত নওয়াব উল্লাহর ছেলে ইয়াকুব আলী (৬০) এবং হবিগঞ্জ জেলার সদর থানাধীন রামনগর এলাকার মৃত দোস্ত মোহাম্মদের ছেলে রমিজ আলী (৬০)।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে ইজতেমা ময়দানে মৃত্যুবরণ করেন গাজী, এর আগে শুক্রবার সকালে মৃত্যবরণ করেন ছাবেদ, শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাতে মৃত্যুবরণ করেন ইয়াকুব এবং দুপুরে মৃত্যুবরণ করেন রমিজ।
তাবলিগ ও জামায়াতের বিরোধের কারণে এবারও দুই ভাগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। প্রথম পর্বে অংশ নিচ্ছেন শুরায়ে নেজাম অনুসারীরা এবং দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেবেন মাওলানা সাদের অনুসারীরা। তবে তিনটি শর্ত মেনে নিলেই ঐক্যবদ্ধ ইজতেমা সম্ভব বলে জানিয়েছেন শুরায়ে নেজামের শীর্ষ মুরব্বি প্রকৌশলী মাহফুজ হান্নান।
রোববার (১ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কন্ট্রোলরুমে পুলিশের ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন তিনি। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে কারণে ইজতেমা বিভক্ত হলো সে কারণটা সমাধান হলেই ঐক্যবদ্ধ হওয়া যায়। ওই কারণটার জন্য আমাদের ওলামায়ে কেরাম ও সারা বিশ্বের আলেমরা তিনটি শর্ত দিয়েছেন।
শর্তগুলো হলো:
প্রথম শর্ত মাওলানা সাদ নিজেকে এককভাবে নেতা মনে করছেন। আমরা বলেছি এককভাবে নয়, এটি একটি শুরার মাধ্যমে চলবে। দ্বিতীয় শর্তÑ উনি (মাওলানা সাদ) নিজস্বভাবে ওনার দাদা-পরদাদারা ইজতেমার জন্য তাবলিগের যে নিয়ম করে গেছেন, মাশওয়ারা ছাড়াই নতুন নতুন কিছু নিয়ম সৃষ্টি করেছেন। যা বাদ দিতে হবে। তৃতীয় শর্ত মাওলানা সাদ সাহেব কোরআন-হাদিসের খেলাফ যেসব মনগড়া বক্তব্য দিয়েছেন, সেগুলো থেকে তাকে ফিরে আসতে হবে।
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে এসেছেন।
শনিবার বিকেল ৩টায় তারা ইজতেমা ময়দানের বিদেশি মেহমানদের (গেট-২) দিয়ে প্রবেশ করেন। তাদের অভ্যর্থনা জানান বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরায়ে নেজামের আয়োজক কমিটির মুরব্বি প্রকৌশলী মাহফুজ হান্নান।
তিনি জানান, হাসনাত আবদুল্লাহ এবং মামুনুল হক ময়দানে প্রবেশের পর মুসল্লিদের সাথে খাওয়াদাওয়া করেন। এরপর তারা ইজতেমা ময়দান ঘুরে পরিদর্শন করেন। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুর জেলা কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব রায়হান আহমেদ, যুগ্ম সংগঠক মাহমুদুর রহমান রিফাত এবং শেখ সাব্বিরসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজামের (জুবায়ের অনুসারী) মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিনে বাদ আসর ইজতেমা ময়দানের মূল বয়ান মঞ্চ থেকে যৌতুকবিহীন বিয়ে পড়ানো হয়। যৌতুকবিহীন বিয়ে পড়ান ভারতের মাওলানা যোহাইরুল হাসান। এবার ৬৩ জোড়া যৌতুকবিহীন বিয়ে পড়ানো হয়েছে। বিয়ে পড়ানো শেষে ভারতের মাওলানা সব দম্পতির জন্য দোয়া ও মঙ্গল কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করেন।
শুরায়ে নেজামের শীর্ষ মুরব্বি মুফতি কেফায়েতুল্লাহ আজহারী জানান, তুরাগতীরে চলমান ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব সফলভাবে সম্পন্ন করতে সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন আয়োজক কমিটি শুরায়ে নেজামের অনুসারীরা। এবার আখেরি মোনাজাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে। দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের এই মোনাজাতে শরিক হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান জানান, ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে টঙ্গী এলাকায় শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টা থেকে গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। ওই দিন রাত ১২টা থেকে টঙ্গী-কামারপাড়া সড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস পর্যন্ত এবং আবদুল্লাহপুর থেকে আশুলিয়ার বাইপাইল পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
এ ছাড়া ময়মনসিংহ ও গাজীপুরগামী যানবাহনগুলোকে গাবতলী দিয়ে কোনাবাড়ী হয়ে এবং ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী যানবাহনগুলোকে ভোগড়া বাইপাস হয়ে ৩০০ ফিট রাস্তা ব্যবহার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ সময় এসব সড়কে কোনো পণ্যবাহী গাড়ি বা যানবাহন চলতে পারবে না। তবে ইজতেমা সংশ্লিষ্ট সব ধরনের যান চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে, যাতে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা না ঘটে। আশা করি, কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না।
আপনার মতামত লিখুন :