গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলা, যা শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত, সেখানে সম্প্রতি বেসরকারি প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোর ব্যবসা দ্রুত বেড়েছে। এই এলাকায় একদিকে যেমন উন্নত শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠায়, তেমনি জনবহুল এলাকায় পরিণত হয়েছে, যার ফলে প্রাইভেট ক্লিনিক ব্যবসার পরিমাণও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে।
কিন্তু, এই বাণিজ্যিকীকরণের ফলে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষের জন্য চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তি কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোর মূল উদ্দেশ্য এখন সেবা নয়, বরং সর্বাধিক লাভ অর্জন করা। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ক্লিনিকগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত চিকিৎসক ফি, টেস্ট ফি এবং ঔষধের খরচ আদায় করা হচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো চিকিৎসার জন্য বাধ্য হয়ে ঋণ নিতে বা জমি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।
[32864]
শিল্পাঞ্চলে বসবাসরত অধিকাংশ জনগণই মিল-কারখানার শ্রমিক, ছোটখাটো ব্যবসায়ী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ, বিশেষত মধ্যবিত্ত শ্রেণি, প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা নিতে গেলে অস্বাভাবিক পরিমাণ খরচ বহন করতে হয়। ছোটখাটো সমস্যা নিয়েও তাদের বড় ধরনের অর্থ সংকটে পড়তে হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, সরকারি স্বাস্থ্যসেবার ব্যর্থতার কারণে দেশের শতকরা ৬৮ ভাগ লোক বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নেয়। এই পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে হাসপাতালগুলোর অতিরিক্ত ফি আদায় ও অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা। অনেক রোগীকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পরীক্ষা করানো হচ্ছে, যা তাদের আর্থিক সংকটকে আরও গভীর করছে।
মানবাধিকার কর্মী মোঃ কবির হোসেন জানান, কালিয়াকৈরে অনেক নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ সরকারি হাসপাতালে পর্যাপ্ত সেবা না পেয়ে বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে যান, যেখানে তাদেরকে উচ্চ মূল্যের টেস্ট ও চিকিৎসা ব্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়। তিনি বেসরকারি ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ এবং অপ্রয়োজনীয় টেস্ট বন্ধের জন্য কঠোর নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানান।
[32863]
শিল্পনির্ভর এই অঞ্চলের স্বনামধন্য লিডার ফ্যাক্টরির বায়ারদের কিউসি মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন সরদার বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোর পরিষেবা উন্নত করতে হবে এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ফি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তিনি বলেন, অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও উচ্চ ফি আদায় বন্ধে কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
কালিয়াকৈর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোঃ কাউসার আহমেদ জানান, বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জনের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। তবে, জেলা সিভিল সার্জন মাহমুদা আক্তারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সরকারের উচিত বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো এবং সাধারণ মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা। অন্যথায়, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষ চিকিৎসা খরচের কারণে আরও আর্থিক সংকটে পড়বে, যা সমাজের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।