ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

৫৪ বছরেও হয়নি সেতু

১৭ গ্রামের ভরসা বাঁশের সাঁকো

মো. বাবুল মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৫, ১২:৪৩ পিএম
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে সেতারা (চেত্রা) নদীর ওপরে ৫৪ বছরেও হয়নি একটি স্থায়ী সেতু

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে সেতারা (চেত্রা) নদীর ওপরে ৫৪ বছরেও হয়নি একটি স্থায়ী সেতু। ফলে নদীর দুই পাড়ের ১৭ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। বিগত বছরগুলোয় ওই নদীর ওপরে একটি সেতুর জন্য জনপ্রতিনিধিরা একাধিকবার আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত সেটি বাস্তবায়িত হয়নি। 

উপজেলার অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নের ১৭ গ্রামের সংযোগের একমাত্র উপায় তিতাসের শাখা সেতারা নদীর ওপর একটি সেতু। কিন্তু নদীর ওপরে সেতু না থাকায় গ্রামগুলোর মানুষ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। বর্তমানে নদীর দুই পাড়ের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা ৯০০ ফুট লম্বাা একটি মাত্র বাঁশের সাঁকো।

অধিকাংশ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজ অরুয়াইল বাজার ও এর আশপাশে অবস্থিত। এ কারণে সেতারা নদীর দক্ষিণ-পশ্চিম পাড়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের একমাত্র পথ অরুয়াইলের ওই বাঁশের সাঁকো। নদীর দুই পাড়ের মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম নৌকা হলেও বছরের প্রায় সাত মাস প্রায় আট থেকে ১০ হাজার মানুষ ওই সাঁকোর ওপর দিয়ে যাতায়াত করেন। 

জানা যায়, ১৯৯৭ সালে প্রায় দুই লাখ টাকা ব্যয়ে সেতারা নদীতে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেছিলেন উপজেলার রানিদিয়া গ্রামের রহমত আলী ও মজর মিয়া। এরপর প্রতিবছর নভেম্বর মাসে প্রায় ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁশের সাঁকোটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। জুনের মাঝামাঝি নদীতে বর্ষার পানি এলে সাঁকোটি ভেঙে ফেলা হয়। 

ফলে শিক্ষা ও কৃষিসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দারা। উপজেলার অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নের মানুষের একমাত্র ভরসা ওই বাঁশের সাঁকো। ফলে শুষ্ক মৌসুমে চলাচল একটু সহজ হলেও বর্ষাকালে চরম ভোগান্তিতে পড়েন দুই ইউনিয়নের মানুষ।

স্থানীয়রা জানান, ৫৪ বছরেও সেতারা নদীর ওপরে একটি সেতু আশা পূরণ হচ্ছে না সরাই পাকশিমুল ও অরুয়াইল ইউনিয়নবাসীর। বিগত সরকারের আমলে একাধিক জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনসহ বহুবার স্বপ্ন দেখালেও তা বাস্তবে রূপ নেয়নি। 

ফলে কার্তিক থেকে জ্যৈষ্ঠ এ ৮ মাস নদীর দুই পাড়ের মানুষের বাঁশের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হচ্ছেন। আবার ওই সাঁকো দিয়ে মোটরবাইক ও অটোরিকশাসহ দুই ইউনিয়নের অন্তত পাঁচ শতাধিক যানবাহন চলাচল করে। এ কারণে সাঁকো ভেঙে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

এদিকে, সেতু না হওয়ায় প্রতি গ্রামের একজন করে মোট ১৫ থেকে ২০ জনকে সাঁকোটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা নিজ উদ্যোগে প্রতিবছর এটি নির্মাণ করেন।

অরুয়াইল ইউপি সদস্য মোশাররফ হোসেন বলেন, সেতু নির্মাণে অনেকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনো আলোর মুখ দেখেনি। প্রকৌশলী ও প্রশাসন একাধিকবার এসে দেখে গেছে কিন্তু তা কার্যকর করা হয়নি। এখানে যদি স্থায়ীভাবে সেতু করে দেওয়া হয় তাহলে এ এলাকার মানুষ দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেত। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ এমদাদুল হক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘জায়গা নির্ধারণ হলেও চেত্রা নদীর ওপর সেতুটির এখনো অনুমোদন হয়নি। সেতুটি একটি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অনুমোদন পেলেই আমরা কাজ শুরু করব।’