ঢাকা শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

গরু ভর্তি যানবাহন থামিয়ে রামু ইউএনও’র নামে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন,  কক্সবাজার
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৫, ০৮:৫২ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

কক্সবাজারে রামুতে মহাসড়কে গরু ভর্তি যানবাহন থামিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাশেদুল ইসলাম ও গর্জনিয়া বাজারের ইজারাদার আবদুর রহিমের নামে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে একটি সংজ্ঞবদ্ধ চক্র। রশিদনগর ইউনিয়নের নাদেরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে কক্সবাজার-চট্ট গ্রাম মহাসড়কে ব্যারিকেড দিয়ে গরু প্রতি ৩শত টাকা আদায় করছে চক্রটি। এতে খামারী, গরু ব্যবসায়ী ও গবাদি পশু বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। 

ইউএনও’র নির্দেশ মোতাবেক টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে প্রতিবেদককে জানান দায়িত্বপ্রাপ্ত গ্রুপের সদস্যরা।

তথ্যসূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গাড়ি যোগে হাজারের অধিক গরু পাচার হয় এ সড়ক দিয়ে, সে হিসেবে একদিনে ৩ লাখ টাকা এবং মাসে প্রায় কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। 

[33304]

তবে, রামু উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রশিদনগরে গরু চোরাচালান চক্র ও চোরাচালান প্রতিরোধে ডাকাতচক্র উভয়েই দুর্বৃত্ত। 

স্থানীয়রা জানান, মহাসড়কের রশিদনগর ইউনিয়নের কাহাতিয়া পাড়া ও ধলিরছড়া এলাকার দুর্ধর্ষ ডাকাত ও দাগি সন্ত্রাসীরা সংজ্ঞবদ্ধ হয়ে গরুর গাড়ি আটকিয়ে অর্থ আদায় করছে। রামুর ইউএনওই তাদেরকে দাঁড় করিয়েছে বলে তারা প্রকাশ্যে স্বীকারোক্তি দিয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে রামুর সচেতন মহলের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও উপজেলা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এদিকে এরকম অসঙ্গতিপূর্ণ  ঘটনার অবতারণা হওয়ার পরও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সুনির্দিষ্ট কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। 

সরজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রামু রশিদ নগর নাদেরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে গরু ভর্তি গাড়ি আটকিয়ে প্রকাশে চাঁদা নিচ্ছে ৮-১০ জনের একটি গ্রুপ। পাশাপাশি সড়কের দু পাশে লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র হাতে বিক্ষিপ্তভাবে তাদের গ্রুপের আরো ৫০-৬০ জনকে বসা এবং দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় দেখা গেছে। 

ওই সময় গ্রুপের সদস্য বেলাল ও জব্বারের সাথে কথা বললে তারা জানান, রশিদবিহীন অবৈধ গরু চেক করতে ইউএনও এবং গর্জনিয়ার ইজারাদার আবদুর রহিম তাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন। রশিদ বিহীন অবৈধ গরু সনাক্ত হলে ইজারাদারের কাছ থেকে ৩ থেকে ৬শত টাকায় রশিদ বা টোকেন ক্রয় করা হলে তারা গরু ছেড়ে দেন বলে জানান।

[33303]

এবিষয়ে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানান, রামুতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের চোরাচালান বন্ধের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রশিদনগর পয়েন্টে অবৈধ গরু আটকের নোটিশ জারি করা হয়। পরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের নিয়ে গরু চোরাচালান বন্ধে ঐ এলাকায় পর্যবেক্ষণও করছে। একই সাথে অবৈধ গরু আটকে জনসাধারনকে সজাগ করা হয় বলে জানান। তবে সড়কে ইউএনও এবং ইজারাদারের নামে টাকা তোলার ব্যাপারে এবং তা বন্ধে যুক্তিযুক্ত কোন উত্তর তিনি দেন নি।

তিনি শুধু নীতিবাক্য ও কথার মারপ্যাঁচে মূল বিষয় এড়িয়ে গেছেন। 

তিনি আরও জানান, রশিদনগরে গরু চোরাচালান চক্র ও চোরাচালান প্রতিরোধে ডাকাতচক্র উভয়েই দুর্বৃত্ত। পক্ষে-বিপক্ষের দ্বন্দ্ব মূলত ভাগ-বাটোয়ারা কেন্দ্রিক। উপজেলা প্রশাসনের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।

এব্যাপারে রামু উপজেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমন্বয়ক মঈনুর রশিদ ও  জায়েদ বীন আমান জানান, তাদের নাম ব্যবহার করে একটি মহল সুক্ষভাবে অর্থনৈতিক ফায়দা হাসিল করছে। মূলত তাদেরকে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা না জেনে অনেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের উপর আঙ্গুল তুলছে। তারা অবৈধ চোরাচালান বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের কাছে দাবি দিয়েছেন, তবে সড়কে গাড়ি আটকিয়ে অবৈধ গরু আটক করা বা টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া এসব তাদের কাজ নয়। যারা করছে তারা ডাকাত, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ। এখানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের কোন সম্পৃক্ততা নাই বলে পরিস্কার করেন এ দুই সমন্বয়ক।

[33298]

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রশিদনগর ইউপির এক সদস্য জানান, যারা সড়কে গাড়ি আটকিয়ে টাকা আদায় করছে তারা সকলে চিহ্নিত ডাকাত ও সন্ত্রাসী। যারা একসময় সাবেক চেয়ারম্যান শাহা আলমের অনুসারী হয়ে কাজ করত। ইউএনও এমন লোকজনকে কেন দায়িত্বে নিয়েছেন বোধগম্য নয়। 

রামু উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক সানাউল্লাহ সেলিম জানান, সরকারিভাবে গর্জনিয়া বাজারের নির্ধারিত সীমানা ১ মাইল। এই দূরত্বের মধ্যে ইজারা আদায় করার নিয়ম থাকলেও রামুর ইউএনও অনৈতিকভাবে পুরো উপজেলায় ইজারাদার রহিমকে হাসিল আদায়ের সুযোগ করে দিয়েছে। 

তিনি আরো জানান, গর্জনিয়া বাজারের ইজারাদার আবদুর রহিমের সাথে যোগসাজশ করে মূলত ইউএনও চোরাচালান বন্ধের নাটক মঞ্চায়ন করছেন। রশিদ বিক্রির মাধ্যমে অবৈধ গরুকে বৈধতা দিচ্ছেন একই সাথে অর্থনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন। 

রশিদ নগর ইউনিয়ন বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, ডাকাত সর্দার সাদ্দাম, আওয়ামী দোসর সালা উদ্দিন, রমিজ, তৈয়ব ও মোস্তাকের নেতৃত্বে একটি সংজ্ঞবদ্ধ দল সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে গরু ভর্তি গাড়ি থেকে প্রকাশ্য চাঁদা আদায় করে করছে। সড়কে চাঁদা আদায় বন্ধকরণে ইউনিয়ন বিএনপি উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে নাদেরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে একটি পুলিশ বক্স স্থাপনে নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর আবেদন করেছেন বলেও জানান।

[33296]

রশিদ নগর ইউপি চেয়ারম্যান ভারপ্রাপ্ত আব্দুল মালেক মাসুম সড়কে গরুর গাড়ি থেকে চাঁদা আদায়ের বিষয়টি অবগত হয়েছেন। বিগত কয়েকদিন যাবৎ ভোটার তালিকা হালনাগাদের বিষয়ে ব্যস্ত থাকায় বিষয়টি নিয়ে তিনি অগ্রসর হতে পারেন নাই বলে জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গরু ব্যবসায়ী আক্ষেপ করে জানান, গর্জনিয়া থেকে রশিদ সহকারে গরু ক্রয় করে রশিদ দেখানোর পরও  রশিদনগর পয়েন্টে ৩ শত টাকা করে দিতে হচ্ছে। লাভের গুড় পিপড়ায় খাচ্ছে বর্তমানে তাদের এই দশা বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন। 

জানতে চাইলে গর্জনিয়া বাজার ইজারাদার আবদুর রহিম নিজের বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। সড়কে ডাকাতরাই গরুর গাড়ি থেকে চাঁদা আদায় করছে বলে জানান তিনি।