কোটালীপাড়ায় মায়ের অপরাধের শাস্তি চেয়ে মেয়ের আহাজারী

মনিরুজ্জামান শেখ জুয়েল, কোটালীপাড়া

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৫, ০৬:৫৭ পিএম

কোটালীপাড়ায় মায়ের অপরাধের শাস্তি চেয়ে মেয়ের আহাজারী

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বাবা রুবেল সরদারের (৩৫) দুই হাত-পায়ের রগ ও বিশেষ অঙ্গ কেটে পলাতক মা রেশমা বোগম (৩০)। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে বাবা। এগারো বছরের রুকাইয়া ইসলাম সাত বছরের ছোট ভাই আরাফাত সরদারকে নিয়ে এখন কিভাবে বাঁচবেন সেই চিন্তায় দিশেহারা। মায়ের শাস্তি চেয়ে অঝোর ধাঁরায় কাঁদছেন রুকাইয়া।

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার বিরামের কান্দি গ্রামের মনজেল সরদারের ছেলে রুবেল সরদার (৩৫)। পেশায় এলুমিনিয়াম ব্যবসায়ী।

গত সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) গভীর রাতে রুবেলের শোবার ঘরে স্ত্রী রেশমা বেগম ও তার বাবার আত্মীয় স্বজন মিলে রুবেলের বিশেষ অঙ্গ এবং হাত-পায়ের রগ কেটে ফেলে। এ ঘটনার পর রুবেলের চিৎকারে পরিবারের লোকজন এগিয়ে এলে রেশমা বেগমসহ তার আত্মীয় স্বজন পালিয়ে যায়।

রুবেলের মেয়ে পঞ্চম শ্রেনিতে পড়ুয়া মেয়ে রুকাইয়া বলেন, গভীর রাতে বাবার চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে যায়। দৌড়ে বাবার কাছে যেতেই দেখি ঘর থেকে দুই মামা নিজাম শেখ এবং মতিউর শেখসহ দৌড়ে পালিয়ে যান। বাবার সারা শরীর রক্তে ভিজে গেছে। ঘরে মাকে খুঁজে পাই নাই। আমার মা কখনোই চিন্তা করেনি বাবা মারা গেলে আমাদের কি হবে?

এ ঘটনায় মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রুবেলের পিতা মনজেল সরদার বাদী হয়ে রেশমা বেগম ও তার দুই ভাই নিজাম শেখ এবং মতিউর শেখসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে আসামী করে কোটালীপাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সরেজমিনে রুবেলদের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ভাই আরাফাতকে নিয়ে কাঁদছেন রুকাইয়া। ক্ষোভে-দু:খে মায়ের প্রতি তীব্র ঘৃণার চিহ্ন ফুটে ওঠে রুকাইয়ার চোখে মুখে। সাংবাদিকদের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে জিজ্ঞাসা করেন, আমাদের দুই ভাইবোনের এখন কি হবে? আমরা কিভাবে বাঁচবো? আমি আমার মায়ের শাস্তি চাই।

জানা গেছে, কুশলা ইউনিয়নের ১২ বছর আগে একই গ্রামের আমীর আলীর মেয়ে রেশমা বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের কয়েক বছর যেতে না যেতেই স্ত্রী রেশমা বেগমের উচ্চাভিলাষী জীবনযাপনের কারনে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকতো। এ্ররই মাঝে এই দম্পত্তির রুকাইয়া ইসলাম ও আরাফাত সরদার নামে দুই সন্তানের জন্ম হয়। রুকাইয়া এখন পঞ্চম ও আরাফাত প্রথম শ্রেনিতে লেখাপড়া করছে।

সম্প্রতি স্ত্রীর দুর্ব্যবহার সহ্য করতে না পেরে আরেকটি বিয়ে করেন। এরপরই রেশমা বেগমসহ তার বাবার বাড়ীর লোকজন রুবেলের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।

এ ঘটনার পর এলাকায় সামাজিকভাবে শালিস বৈঠকের মাধ্যমে দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে রুবেলের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় রুবেল ও তার প্রথম স্ত্রী রেশমার মধ্যে বিরোধ মিটিয়ে তারা দুজনে আবার সংসার শুরু করেন। কিন্তু রুবেলের প্রতি স্ত্রী রেশমা বেগম ও তার বাবার বাড়ির আত্মীয় স্বজনের ক্ষোভ থেকেই যায়।

রুবেলের মেঝ ভাবী শারমিন বেগম বলেন, বিয়ের কয়েক বছর পর থেকেই রেশমা নানাভাবে রুবেলকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করে। সে ছিল একজন উচ্চাভিলাষী মহিলা। রুবেল সবসময় তার ব্যবসা ও সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। দোকান থেকে বাড়ি এলেই তার সঙ্গে ঝগড়া শুরু করতো। এ নিয়ে দুজনের মাঝে প্রায়ই কলহ লেগে থাকতো। রুবেল এসব সহ্য করতে না পেরে গোপনে আরেকটি বিয়ে করে। আমরা জানার পরে রুবেলের ২ সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সেই স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ব্যবস্থা করি। কিন্তু রেশমা ও তার বাবার বাড়ির লোকজনের রুবেলের প্রতি ক্ষোভ থেকেই যায়। তারা রুবেল কে মারার জন্য হাত-পায়ের রগ ও বিশেষ অঙ্গ কেটে হত্যার চেষ্টা চালায়।

রুবেলের ভাগ্নে ছামিউল শেখ বলেন, আমরা যখন আমার মামাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে ব্যস্ত মামী তখন মামার টাকা পয়সা সোনা-গহনা নিয়ে পালিয়ে যায়। আমার মামা হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। কিন্তু মামি ও তার বাবার বাড়ির লোকজন মামার কোন খোঁজ খবর নিচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানার জন্য রেশমা বেগমের বাবার বাড়ি গিয়ে কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি।

কোটালীপাড়া থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামীদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

 

আরবি/জেডআর

Link copied!