ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ভাষার মাসেও মাটিতে পড়ে আছে শহীদ মিনার!

নাঈম আলমগীর, জামালপুর
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৫, ০১:০১ পিএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

সারা বছর অবহেলায় থাকলেও ভাষার মাসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সারাদেশে স্থায়ী নির্মিত সব শহীদ মিনারগুলো পরিপাটি করা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নির্মিত হয় অস্থায়ী শহীদ মিনারও। তবে ভাষার মাসেও এখনো অযত্ন-অবহেলায় মাটিতে পড়ে রয়েছে জামালপুরের মেলান্দহের এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার।

রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে উপজেলার ঝাউগড়া ইউনিয়নের ১১নং ফজলুল হক আকন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।

সরেজমিন দেখা যায়, শহীদ মিনারের স্তম্ভগুলো মাঠের এক কোনে নোংরা অবস্থায় পড়ে আছে। বিদ্যালয়ের স্বয়ংসম্পূর্ণ খেলার মাঠ থাকলেও শহীদ মিনারের স্থান হয়নি কোথাও।

[33658]

স্থানীয় সূত্র জানায়, নব্বই শতকের শুরুতে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠানে কোন শহীদ মিনার ছিল না। সে সময় থেকে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে চলতো ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করা হয় এবং এরপর বিদ্যালয়ের মূলভবনের পার্শে ২০২৩ সালে শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে সেখানে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় ওয়াশব্লক নির্মাণের ফলে ২০২৪ সালে উপড়ে ফেলা হয় শহীদ মিনারটি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, উপড়ে ফেললেও শহীদ মিনারের স্তম্ভগুলো এখনো অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। স্তম্ভগুলো মাঠের যে কোন পাশে স্থাপন করার মতো পর্যাপ্ত জায়গা থাকলেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা না করে মাঠের একপাশে ফেলে রেখেছেন দীর্ঘদিন ধরে। যে অবস্থায় স্তম্ভগুলো পড়ে আছে তাতে ভাষা শহীদদের অবমাননা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আসাদুল্লাহ দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে জানান, ওয়াশব্লক নির্মাণের জন্য শহীদ মিনারটি সরানো হয়েছে, আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির আগেই তা পুনরায় স্থাপন করা হবে।

[33651]

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এম এ রকিব বুলবুল বলেন, বিদ্যালয়ের সাথে দ্বিতল ওয়াশব্লক নির্মাণ প্রকল্পের জন্য শহীদ মিনার সরানো হয়েছে। শহীদ মিনারের স্তম্ভগুলো এখনো অক্ষত রয়েছে খুব দ্রুত তা পুনরায় পূর্বের মতো স্থাপন করা হবে।

জামালপুর নাগরিক ভয়েসের সভাপতি কাফি পারভেজ জানান, শহীদ মিনার আমাদের বাঙালিদের জন্য একটি সম্মানের জায়গা। এটি এমন অবহেলায় ফেলে রাখা নিতান্তই কর্তৃপক্ষের অবহেলা ছাড়া আর কিছু নয়।

এ সময় শহীদ মিনারটি খুব দ্রুত পুনঃ নির্মাণ করার জন্য বিদ্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

মেলান্দহ উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ বলেন, শহীদ মিনার পুনরায় নির্মাণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া আছে। খুব দ্রুত সেটি বাস্তবায়ন করা হবে। এ ছাড়াও প্রতিটি বিদ্যালয়ের নির্মিত শহীদ মিনারগুলোতে রং করার নির্দেশনা দেওয়া আছে। যেসব বিদ্যালয় এখনো তাদের শহীদ মিনার পরিপাটি করেনি তা আগামী দুই দিনের মধ্যে করে দেওয়া হবে।

[33592]

এ বিষয়ে মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পেয়েছি আমাদের মাতৃভাষা। তাদের আত্মত্যাগের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার তৈরি করা হয়। যেখানে শুধু একদিন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নয়। শহীদ মিনারের অবমাননা হলে নতুন প্রজন্মের কাছে এর গুরুত্ব কমে যাবে বলে মনে করে সচেতন মহল।