বিলুপ্তির পথে বেত-বাঁশশিল্প, ভালো নেই কারিগররা

ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৫, ০৩:০৪ পিএম

বিলুপ্তির পথে বেত-বাঁশশিল্প, ভালো নেই কারিগররা

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

এক সময় গ্রামগঞ্জের মানুষ বেতশিল্পের কাজকে পেশা হিসাবে বেছে নিলেও এ যুগে এই শিল্প কাজ করতে তেমন একটা দেখা যায় না। অনেকের বাড়ির পাশে ছিল বাঁশঝাড়ের বাগান । এসব বাঁশ কেটে নিজেরাই তৈরি করতেন গৃহস্থালি কাজের নানান পণ্য। বর্তমানে বিকল্প উপকরণ দিয়ে  তৈরি করা পণ্যের বাজার দখলে থাকায় বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্পের পণ্য।

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের মানিকদী পুরানগাঁও গ্রামের অনেক পরিবারের লোকজন বেত দিয়ে কুলা, ঝুড়ি, ডোল, চাটাই, হাঁস-মুরগির খাঁচা, মাছ ধরার পলো সহ নানান রকমের পণ্য তৈরি করে সংসার চালাতেন। একসময় গ্রামীণ জনপদের সব শ্রেণির মানুষ গৃহস্থালি ও কৃষিসহ অন্যন্য কাজে এসব পণ্য ব্যবহারের কারণে বেশ কদর ছিল । গ্রামীণ উৎসব বা মেলাতে ও বাজারে নিয়ে গেলে ভালো দামে বিক্রি করে অনেকের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন হলেও বর্তমানে বাঁশের দাম বৃদ্ধি ও শ্রমিকের মজুরি বেশির পাশাপাশি বাজারে চাহিদা কম থাকায় অনেকেই পেশা পরিবর্তন করছেন। প্লাস্টিক সামগ্রী দখলে থাকায় তেমন লাভের মুখ দেখেন না তারা। এতে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেতশিল্প।

বাঁশের তৈরি শিল্প বিক্রেতা গজারিয়া ইউনিয়নের মানিকদী পুরানগাঁ এলাকার রেনু মিয়া, ছিদ্দিক মিয়া, আবু ছালেক,মোহাম্মদ আলী, সায়দুল্লাহ মিয়া, খোরশেদ মিয়া, মিশ্রী মিয়া, সাদু মিয়া বলেন, আগে বেত দিয়ে তৈরি জিনিসপত্র তৈরি করে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেছি, তখন লাভ হতো। কিন্তু এখন তেমন লাভ হয় না। রাত-দিন পরিশ্রমে তৈরি করি হাটবাজারে সে তুলনায় চাহিদা নেই। এখন বাড়িতে থেকে অল্প লাভে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে থাকি। সরকারিভাবে কোন সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছি না। অনেক দুঃখ কষ্টে দিন কাটছে। অভাবের তাড়নায় অনেকে অন্য পেশায় চলে গেছেন। উপযুক্ত ও অভিজ্ঞতার অভাবে অন্য পেশাও যেতে পারিনি।

মানিকদী পুরানগাঁ এলাকার অনেকে বলেন, ‘পেশা ছেড়ে দিয়ে এখন অটোভ্যান চালিয়ে সংসার চালাই। আমাদের গোত্রের দুই-তিনটি পরিবার ছাড়া সবাই পেশা পরিবর্তন করেছেন। এক সময় বাঁশ ও বেত ঝাড় থাকায় এসব শিল্পের প্রচুর ব্যবহার ছিল। কিন্তু আগের মতো এখন বাঁশঝাড় আর বেত চোখে পড়ে না। একদিকে যেমন গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকা শক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি নিঃস্ব হচ্ছে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী পরিবারগুলো।’

গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, আব্দুস সালাম শাহরিয়া বলেন, হস্তশিল্প বাংলাদেশের ঐতিহ্য, তাদের সঙ্গে কথা বলে বাঁশ ও বেতের কাজকে ধরে রাখতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা চেষ্টা করবো।

আরবি/এসআর

Link copied!