লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা সদর হাজিরহাট বাজার ঘেঁষে বয়ে যাওয়া জারিরদোনা শাখা খালের দুপাড় দখল করে বহুতল মার্কেট, দোকানঘর ও আবাসিক ভবন নির্মাণ করেছেন একশ্রেণির প্রভাবশালীরা। একসময় এ খালই ছিল মহাজনি নৌকা চলাচলের একমাত্র মাধ্যম। উপজেলা প্রশাসনের সুনজরের অভাবে বিগত দেড় যুগ ধরে বছরের পর বছর দখল-দুষণে প্রায় ১ কি.মি খালের অস্তিত্ব বিলীনের পথে। এতে চরফলকন, হাজিরহাট ও চরলরেন্স এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ে।
এতে করে আসছে বর্ষা মৌসুমে চরফলকন ও হাজিরহাট ইউনিয়ন সহ কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতার চরম আশঙ্কাসহ কোটি কোটি টাকার ফসলহানিসহ ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে সকল ক্ষতির দিক বিবেচনায় খালটি উদ্ধারে একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। সর্বশেষ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ৮০ দখলদারদের প্রতি নোটিশ করা হয়। বর্তমান ইউএনও সূচিত্র রঞ্জন দাসের উদ্যোগে দখলদারদের তালিকা করে উচ্ছেদকল্পে নোটিশ করা হয়। তালিকাভুক্ত অবৈধ ৮০ দখলদারের প্রতি ওই
নোটিশ জারির দুই বছর অতিক্রম হলেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
অভিযোগ ওঠেছে, স্থানীয় প্রশাসন নোটিশ দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করেন। এসব দখলদারের কাছ উপজেলা প্রশাসন অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছেন। জনমনে প্রশ্ন, হাজিরহাট বাজারের জনগুরুত্বপূর্ণ এই খালটি উদ্ধারের নামে কোন বাণিজ্য হচ্ছে? না কি কোন ধরনের অদৃশ্য শক্তির ইশারায় দখলমুক্ত করা হচ্ছে না? যে কারণে উচ্ছেদ অভিযানের জন্য নোটিশ দিয়েই চুপসে গেছেন উপজেলা প্রশাসন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ইউএনও আসেন এবং যাচ্ছেন, প্রতিশ্রুতির কিছুই হয় না। স্থানীয় হাজিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মোঃ খোরশেদ আলম, রাজন মেম্বার, মোঃ জসিম, মোঃ সৌরভ, আব্দুল্লাহ আল সোহেলসহ সচেতন এলাকাবাসী গুরুত্বপূর্ণ এ খালের দখলমুক্ত করতে দ্রুত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবি করেছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সত্তর দশকে উপজেলার চরলরেন্স, হাজিরহাট, চরফলকন ও পাটারীরহাট ইউনিয়নের কৃষকদের সুবিধার্থে এবং জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে জারিরদোনা খালটি খনন করা হয়। অন্তত ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৪০ ফুট প্রস্থ এ খালটি মেঘনা নদীতে গিয়ে মিলিত হয়। ওই সময় ইউনিয়নগুলোতে (সেচ প্রকল্প) ইরি ধান চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনীয় পানি ধরে রাখা ও ছেড়ে দেওয়ার সুবিধার্থে খালের শেষ মাথায় মেঘনা নদীর কাছাকাছি অংশে একটি স্লু-ইসগেট নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নব্বই দশকের শেষের দিকে খালটি ধীরে ধীরে প্রভাবশালীদের থাবায় দখল-দূষণে অস্তিত্ব হারাতে বসে। বর্তমানে খালটির হাজিরহাট বাজার ঘেঁষে এক কিলোমিটার এলাকা পুরোপুরি দখল হয়ে গেছে।
দখল অভিযোগ অস্বীকার করে সোহেল বলেন, জারিরদোনা খাল সংলগ্ন আমাদের বাসা। যদি কোন কারণে সরকারি খালের অংশ আমাদের অংশে পরে। তাহলে আমরা ছেড়ে দিবো।
এ বিষয়ে চরফলকন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সম্ভু লাল মজুমদার বলেন, অবৈধভাবে জারিরদোনা খাল দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করে আমরা ঊধর্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অবগত করেছি।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, আমি যোগদান করার আগেও খালটি এরকম দেখেছি। বর্তমানে আমরা উপজেলা সার্ভেয়ারের মাধ্যমে অবৈধ দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরণ করেছি।