লিবিয়ায় যুবককে আটকে ২৬ লাখ টাকা দাবি, পরিবারে হাহাকার

নোয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫, ১১:২২ এএম

লিবিয়ায় যুবককে আটকে ২৬ লাখ টাকা দাবি, পরিবারে হাহাকার

মো. আব্দুর রবের গ্রামের বাড়ি, ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

জীবিকার তাগিদে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় তিন বছর আগে ঋণ করে লিবিয়ায় পাড়ি জমান নোয়াখালীর কবিরহাটের মো. আব্দুর রব। দীর্ঘ ১২ দিন নিখোঁজ থাকার পর অপরিচিত নম্বর থেকে নির্যাতনের ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে ২৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে এক মাফিয়া চক্র। সন্তানের এমন নির্মম নির্যাতনের পরিস্থিতি দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মা-বাবা।

ভুক্তভোগী মো. আব্দুর রব (২৫) কবিরহাট উপজেলার সুন্দলপুর ইউনিয়নের মধ্য সুন্দলপুর গ্রামের পাটওয়ারী বাড়ির মো. আব্দুর রহিমের ছেলে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে জীবিকার তাগিদে ধারদেনা করে লিবিয়ায় পাড়ি জমান আব্দুর রব। এরপর ছোট ভাই আব্দুর রহমানকেও (২৩) লিবিয়ায় নিয়ে যান তিনি। সেখানে আল খামাছ পৌরসভায় একটি কোম্পানিতে দুই ভাই চাকরি করতেন। গত ১৪ জানুয়ারি কাজের উদ্দেশ্যে মিসালতা যাওয়ার সময় ভুয়ারা চেকপোস্টে পুলিশ আব্দুর রব, আব্দুর রহমানসহ মোট ৪ জনকে আটক করে। তারপর কাগজপত্র চেক করে তিনজনকে ছেড়ে দিলেও আব্দুর রবকে পুলিশ নিয়ে যায়। পরবর্তীতে যোগাযোগ করা হলে ত্রিপলি থানা পুলিশের কাছে আছে বললেও খোঁজ-খবর নিয়ে সেখানে আব্দুর রবের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

দীর্ঘ ১২ দিন পর ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশি একটি ইমো নম্বর থেকে মাফিয়া চক্র জানায় আব্দুর রবকে তারা ২০ লাখ টাকায় পুলিশ থেকে কিনে নিয়েছেন। তাদেরকে ২৬ লাখ টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেবেন। এরপর থেকে বাড়তে থাকে নির্যাতনের চিত্র। সেই নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে পরিবারের কাছে দ্রুত টাকা দেওয়ার জন্য দেওয়া হয় বাংলাদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের কয়েকটি নম্বর। ভিটেমাটি ছাড়া আব্দুর রবের বাবার কিছু নাই বলে আর্তনাদ করেই দিন পার করছেন তার বাবা-মা সহ পরিবারের সদস্যরা।

আব্দুর রবের মা তাজনাহার বেগম বলেন, স্বামীর দুই শতাংশের বসতভিটে ছাড়া আর কিছুই নেই। তারা ছেলেকে মেরে ভিডিও কল দেয়। তা দেখে বুকটা ফেটে যায় কিন্তু আমি তো অসহায় মা। আমার কিছুই করার নাই। ড. ইউনূস স্যারের কাছে সহযোগিতা চাই, সন্তানকে ফেরত চাই।

আব্দুর রবের বড় বোন জান্নাতুল নাইম সোনিয়া বলেন, আমরা দুই বোন, দুই ভাই। আমি বড় সন্তান তারপর আব্দুর রব। সুদের ওপর টাকা নিয়ে দুই ভাইকে বিদেশ পাঠানো হয়েছে। মাফিয়া চক্র একটি ঘরে বন্দি করে মধ্যযুগীয় কায়দায় ভাইকে নির্যাতন করে আমাদের কাছে ২৬ লাখ টাকা দাবি করছে। টাকা না দিলে নির্যাতন করে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। নিয়মিত ফোন দিয়ে চক্রটি ভাইয়ের ওপর নির্যাতনের দৃশ্য দেখায়। এমন দৃশ্য দেখতে না পেরে আমরা সবাই কান্নায় ভেঙে পড়ি। বাবা-মা অজ্ঞান হয়ে যান।

আব্দুর রবের বাবা আব্দুর রহিম বলেন, আমি অসুস্থ মানুষ, কোনো কাজ করতে পারি না। মাফিয়া চক্র ২৬ লাখ টাকা দাবি করছে অথচ ২৬ হাজার টাকা দেওয়ার মতো সামর্থ্য নাই। সন্তানদের বিদেশে পাঠাতে ঋণ করেছি, সেই টাকাই পরিশোধ করতে পারিনি। সন্তানের এমন নির্যাতনের ভিডিও দেখলে জ্ঞান থাকে না। ড. ইউনূস স্যারের কাছে সহযোগিতা চাই। আমরা সারাজীবন তার জন্য দোয়া করব।

স্থানীয় বাসিন্দা ফারুক হোসেন ও বায়োবৃদ্ধ এক ব্যক্তি বলেন, অপহৃত আব্দুর রব অত্যন্ত নম্র ভদ্র ছেলে। লিবিয়ার পুলিশ দালালদের কাছে তাকে বিক্রি করে দিয়েছে। সেই চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশিরাও আছে। তারা দেশের বিভিন্ন  অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়েছে। যদি সরকার যাচাই-বাছাই করে তাহলে মাফিয়া চক্রটিকে গ্রেপ্তার করতে পারবে। তাহলে এভাবে কোনো মা-বাবার সন্তানকে নির্যাতিত হতে হবে না  আমরা চাই প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস স্যার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।

নোয়াখালী ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সহকারী পরিচালক খুরশীদ আলম বলেন, বিষয়টা জেনে মর্মাহত হয়েছি। ভুক্তভোগী পরিবার আমাদের অফিসে একটা অভিযোগ জমা দিয়েছে। তা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে লিবিয়া দূতাবাসের কাছে পাঠানো হবে। আশা করি সরকার এই রেমিট্যান্স যোদ্ধার পাশে দাঁড়াবে। এতে সন্তান তার বাবা-মায়ের কাছে আসতে পারবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!