মাটি খেকোদের তাণ্ডবে রক্ষা পাচ্ছে না ফসল-গ্রামীণ সড়ক, প্রশাসন নীরব

বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫, ১১:৪১ এএম

মাটি খেকোদের তাণ্ডবে রক্ষা পাচ্ছে না ফসল-গ্রামীণ সড়ক, প্রশাসন নীরব

শস্য ভান্ডার খ্যাত উত্তরের জেলা নওগাঁর প্রধান পেশা কৃষি। উত্তরের এই জনপদকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সমৃদ্ধ করেছে জেলার বদলগাছী উপজেলায় অবস্থিত পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার। সেই সুবাদে এখানে রয়েছে পর্যটন খাত সম্প্রসারণের অপার সম্ভাবনাও। তবে মাটি খেকোদের তাণ্ডবে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক ও এলাকার পরিবেশ। ব্যাপক হুমকির মুখে পড়েছে আশপাশের ফসলি জমি।

এই উপজেলায় পুকুর সংস্কারের নামে মাটি কাটার শুরুটা অনেক আগে থেকেই। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের পুরোটা সময়েই চলেছে অবৈধভাবে মাটির কাটার মহৌৎসব। গত ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ব্যক্তির পরিবর্তন হলেও এই অপকর্ম চলছে আগের মতোই। ক্ষেত্রবিশেষে এই অপতৎপরতা আরও বেড়েছে কয়েকগুণ।

উপজেলার সদর, মিঠাপুর, ছোট বনগ্রাম, আধাইপুর, বালুভরা, কোলা, পাহাড়পুর এলাকায় অবৈধভাবে পুকুর সংস্কারের নামে চলছে ইটভাটায় মাটি বিক্রি। বাদ যাচ্ছে না তিন ফসলি জমিও।

এদিকে, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে মিঠাপুর ও দেউলিয়া এলাকায় নামমাত্র অভিযান পরিচালনা করলেও এসব বন্ধে তেমন কোন তৎপরতা দেখা যায়নি।

সরেজমিনে দেখা যায়, আধাইপুর, কোলা ইউনিয়নের ছোট বন গ্রাম সহ কয়েকটি এলাকায় অবৈধভাবে পুকুর সংস্কার করায় আশপাশের গ্রামীণ রাস্তাগুলো চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, বর্তমানে মাটি খেকোদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। নামমাত্র অভিযান পরিচালনা করার কারণে ভয়কে জয় হিসেবে নিয়ে দেদারছে কেটে যাচ্ছে মাটি। আর এসব মাটি ভর্তি ট্রাক ও ট্রলির কারণে রাস্তায় বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। বাতাসে উড়ে আসা ধূলায় চোখ ও শ্বাসযন্ত্রের ক্ষতি ছাড়াও অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। এসব থেকে বাঁচতে সাধারণ মানুষসহ স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের প্রধান সড়ক দিয়ে চলাচল করতেও শঙ্কার মধ্যে থাকতে হচ্ছে। এ ছাড়া অনিয়ন্ত্রিত শব্দদূষণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মানুষের জীবন।

সর্বশেষ বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) বিল-২০২৩ আইনে বলা হয়েছে, ব্যক্তিমালিকানাধীন কোন জমি থেকেও সহজে মাটি তোলা যাবে না। তবে কোনো ব্যক্তি বসতবাড়ি নির্মাণ বা প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে নিজের মালিকানাধীন জমি থেকে সীমিত পরিসরে বালু বা মাটি তুলতে পারবেন।

তারপরও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ মাটি ট্রাকে করে চলে যাচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, মাটির কাজে জড়িত সবাই দিনমজুর শ্রমিক। তারা পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে কাজ করেন। তবে এসবের বড় অংশই প্রভাবশালীর সঙ্গে সম্পৃক্ত।

স্থানীয় সুবাস চন্দ্র বলেন, ‍‍`আমাদের উপজেলায় প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে পুকুর সংস্কারের নামে মাটি কেটে ইট ভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে রাস্তাঘাট ও আবাদি ফসল এখন ধ্বংসের মুখে। প্রশাসন কে জানালেও এসব বন্ধ করতে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

সদর উপজেলার রিংকু হোসেন বলেন, ‍‍`মাটি পরিবহনের জন্য আমার ব্যক্তিগত ভেকু ও ট্রাক্টর রয়েছে। যারা এসব ব্যবসা করে তারা মাটি তোলার জন্য আমার কাছে গাড়ি ভাড়া নেয়। এসব কাজে আমি জড়িত নয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান ছনি বলেন, সর্বশেষ একজনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন করে যারা ইট ভাটায় বিক্রি করছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

অবৈধ ইট ভাটার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নওগাঁ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাজমুল হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিট্টেট স্বল্পতায় অভিযান পরিচালনা করতে পারছি না। আমি ঢাকায় চাহিদা দিয়েছি খুব নিকটেই অভিযান পরিচালনা করা হবে।

নওগাঁ জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়াল বলেন, এসব বিষয়ে নিয়মিত মামলা দেওয়ার বিষয় আছে। ভূমির মালিককে অনুরোধ করছি, যাতে ইট ভাটায় মাটি না দেয়। আমরা অন্যভাবে এ্যাকশনে যাওয়ার চেষ্টা করছি। সেজন্য প্রতিটি উপজেলায় মাইকিং করা হচ্ছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে আমরা বেশি ব্যস্ত। ইট ভাটায় আমাদের নজর নেই, সেটা বলা যাবে না। আমরা চেষ্টা করছি।

আরবি/এসআর

Link copied!