ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

মেলার নাম ‘বউ মেলা’, পুরুষের প্রবেশ নিষেধ

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫, ০৭:৫৪ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার ইছামতী নদীর তীরের পশ্চিম মহিষাবান ত্রিমোহিনী এলাকায় প্রায় তিন দশক ধরে বসছে আজব এক মেলা। যে মেলার নাম ‘বউ মেলা’। মেলায় ক্রেতা মেয়েরা, বিক্রেতাও মেয়েরা। তবে দোকানদার ছাড়া সেখানে কোনো পুরুষ সদস্যের ঢোকার অনুমতি নেই। এভাবে নারীদের বেশি অংশগ্রহণের কারণে এর নামকরণ হয়েছে ‘বউ মেলা’।

 প্রতিবছরের মতো মাঘ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এ মেলা বসেছে। এর আগের দিন একই জায়গায় বসেছিল পোড়াদহ মেলা। পর দিন বউ মেলা ঘিরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ‘বউ মেলায়’ নারীদের ঢল নামে।

[34284]

স্থানীয়রা জানান, বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পূর্বে গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বাজার সংলগ্ন ইছামতি নদীর শাখা গাড়ীদহ খালের তীরঘেঁষে প্রায় দুশ বছর আগে থেকে মাঘ মাসের শেষ বুধবার সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে বসে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা। বিশাল আকৃতির মাছের জন্য বিখ্যাত এ মেলা উপলক্ষে আশপাশের ২০টি গ্রামের বাড়িতে শুরু হয় উৎসব। প্রতিটি বাড়িতে নতুন বউ-জামাই যেমন আসেন, তেমনি পুরোনো আত্মীয়স্বজনও কেউ বাদ পড়েন না। কিন্তু সেসব আত্মীয়স্বজনের মধ্যে শুধু পুরুষরাই পোড়াদহ মেলায় যাওয়ার সুযোগ পান। নিরাপত্তা এবং বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় মেলায় নারীরা প্রবেশ করতে পারেন না। এ অবস্থায় নারীদের নিয়ে এই মেলার আয়োজন করা হয় প্রায় ৩ দশক আগে। এরপর থেকেই পোড়াদহ মেলার পরদিন বসছে মেলাটি। নারীদের জন্য আয়োজন করা মেলাটি এখন পরিচিতি পেয়েছে ‘বউ মেলা’ হিসেবে।

এদিকে এ মেলায় ঘুরে দেখা গেছে, মেলায় নারীদের প্রসাধনী ছাড়াও রকমারি পণ্যের পসরা বসেছে। সন্দেশ, জিলাপি, নিমকি, বাতাসা, তিলের নাড়ু, খই, শুকনা মিষ্টি, কদমা, চিনি ও গুড়ের জিলাপিসহ হরেক রকমের মিষ্টান্নের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। বসেছে মাটি ও কাঠের খেলনা, বাঁশি, টমটম, রঙিন বেলুন, বাঁশি, চটপটি, ফুচকা, মৌসুমি ফল, চাটনি, আচার, কাচের চুড়ি, আলতা-ফিতা, লিপস্টিক, নেইল পলিশ, প্রসাধনীসহ নানা পণ্যের দোকান। নারী ও শিশুদের বিনোদনের জন্য আছে চরকি, নাগরদোলা, ট্রেন রাইডসহ নানা আনন্দ আয়োজন।

[34283]

মেলায় আগত তামান্না, রূপা এবং মারজান জানান, তারা প্রতি বছর নিজেদের ব্যবহারের জন্য কসমেটিক্স ও ইমিটেশনের গয়না কেনেন এই মেলায়। এবারও এসেছেন। পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনদের জন্যও নানা রকম পণ্য কিনেছেন।

মহিষাবান গ্রামের গৃহবধূ আরজেনা খাতুন বলেন, পুরুষের ভিড়ে পোড়াদহ মেলায় যাওয়া যায় না। তাই এটা এই এলাকার বউ-মেয়ে-ঝিদের প্রাণের মেলা। ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় এসে পুরোনো বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা হওয়ার সুযোগ মেলে। আনন্দে প্রাণ ভরে যায়।

মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি ও গাবতলী উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান সুমন বলেন, অন্যবারের তুলনায় এবারের মেলায় উৎসবমুখর পরিবেশে নারীরা উচ্ছ্বসিত। এ মেলায় পুরুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ। নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও পুরুষের প্রবেশ ঠেকাতে শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। স্বেচ্ছাসেবকেরাও কেউ মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন না।