ঢাকা শহরের মধ্য দিয়ে যাওয়া অ্যাক্সেস রাস্তা ও মহাসড়কগুলোতে ভারি যানবাহনের যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ৪৮ কিমি দীর্ঘ একটি নির্মাণাধীন নিয়ন্ত্রিত প্রবেশযোগ্য মহাসড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ে-১-এর অংশের উভয় পাশে ৩০ ফুট প্রশস্ত সার্ভিস লেন নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হবে এমন খবর স্থানীয়দের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে সড়কের উভয় পাশে অবৈধ ও অননুমোদিত স্থাপনা নির্মাণ করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।
ভবিষ্যতে অধিগ্রহণে অধিক ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার জন্য এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে।
অর্থনৈকিভাবে লাভবান হওয়ার জন্য নির্মিত এসব স্থাপনাকে স্থানীয়রা ‘লোভের ঘর’ নামে আখ্যায়িত করেছে।
স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করতে ও নির্মিত স্থাপনা অপসারণের জন্য সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের পরিচালকের দপ্তর থেকে বারবার বলা সত্ত্বেও তা আমলে নিচ্ছে না লোভীরা।
জানা গেছে, সাপোর্ট টু জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর সড়ক (ঢাকা বাইপাস) পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের অধীনে সড়কের দুই পাশে ৩০ ফুট সার্ভিস লেন নির্মাণের জন্য গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার উলুখোলা, সেনপাড়া, কুচিলাবাড়ি, রাথুরা ও গলান মৌজায় ২.৫৫৬২ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য গত নভেম্বর মাসে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেয় সড়ক বিভাগ।
এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার পর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবিত এলাকায় জমির মালিক, কোনো কোনো ক্ষেত্রে
জমি ভাড়া নিয়ে একটি প্রভাবশালী চক্র স্থাপনা নির্মাণ করে চলছে।
বাড়তি ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার লোভে এসব অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করে চলেছে। স্থাপনা নির্মাণে নকশা অনুমোদন বা কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে।
বিষয়টি জানতে পেরে সড়ক ও জনপথের প্রকল্প পরিচালক স্থাপনা নির্মাণ থেকে বিরত রাখার জন্য ও নির্মাণ করা স্থাপনা অপসারণের জন্য জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কালিগঞ্জ এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে চিঠি দেয়।
তার পরেও ঠেকানো যায়নি সড়কের স্থাপনা নির্মাণ। তবে কালিগঞ্জ
উপজেলা প্রশাসন থেকে চিঠিপ্রাপ্তির বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন থেকে উল্টো দাবি করা হচ্ছে বারবার তারা সড়ক ও জনপথ বিভাগকে পত্র দিয়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি অবগত করেছেন।
কিন্তু সড়ক বিভাগ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। এতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করে স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা বলছেন, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সময় রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ বাড়তি অর্থ খরচ হবে ও প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাবে। তাই এখনই নির্মাণকাজ বন্ধ ও উচ্ছেদ অভিযান চালানো জরুরি।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রথম পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ প্রকল্পের অধীনে বাস্তবায়িত ‘জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর’ সড়কে ঢাকা বাইপাস ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে ৩০ মাইল দীর্ঘ ২ লেন বিশিষ্ট
‘জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর’ সড়কটির দুই পাশে সার্ভিস লেনসহ অ্যাক্সেস কন্ট্রোল সড়কে উন্নীত করার কাজ চলমান রয়েছে।
মূল প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সহায়ক প্রকল্প হিসেবে সাপোর্ট টু জয়দেবপুর ‘জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর’ সড়কের পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (প্রথম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পটির অধীন জমি অধিগ্রহণ, ইউলিটি শিফটিং এবং পুনর্বাসনের কাজ চলমান রয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গাজীপুর জেলায় সড়কটির প্রথম ২২ কিমি অংশ অন্তর্ভুক্ত। কালিগঞ্জ উপজেলার উলুখোলা, সেনপাড়া, কুচিলাবাড়ি, রাথুরা ও গলান মৌজায় ২.৫৫৬২ একর জমি হুকুম দখল করা প্রয়োজন।
সরেজমিনে গত মঙ্গলবার গিয়ে দেখা যায়, সড়কের গলান এলাকায় ২০-২৫টি ভবনের নির্মাণকাজ চলছে।
এসব নির্মাণকাজে নিম্নমানের ইট, খোয়া, রড ও বালি ব্যবহার করা হচ্ছে। পুরোনো দোকানের ওপর ছাদ ঢালাইয়ের মাধ্যমে তৈরি করা হচ্ছে বহুতল ভবন।
হালকা পিলারের ওপর তোলা হচ্ছে বহুতল ভবনের ছাদ। পুরোনো ভবনের ওপর কয়েক তলা নতুন করে বর্ধিত করা হচ্ছে।
নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে এসব ভবন তৈরি করার ফলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ ছাড়া সড়ক ঘেঁষে শত শত স্থাপনা, ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতষ্ঠান গড়ে উঠেছে। গলান এলাকায় সরকার ফিলিং স্টেশনের পাশে ‘খান এন্টারপ্রাইজ’ নামের প্রতিষ্ঠানটি সড়ক ঘেঁষেই তৈরি করা হয়েছে।
এ রকম বহু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা সড়কের দুই পাশে রয়েছে শত শত। মহাসড়ক আইন ২০২১-এর ৯ ধারা, ১১ উপধারা ও ৯-এর ১৭ উপধারা লঙ্ঘন করে সড়ক থেকে যথাযথ দূরত্ব বজায় না রেখে নির্মাণ করা এসব স্থাপনা অবৈধ।
আর অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এ স্থাপনাগুলো অপসারণে সড়ক ও জনপথ বিভাগ রয়েছে নীরব।
গলান এলাকার তাজুল ইসলাম বলেন, টিনের ছাপরা ঘরের ওপর বাহারি ছাদ উঠছে। যাদের জমি সড়কের পাশে, তারা সবাই এসব অপকর্ম করছে।
ধার-দেনা করে স্থাপনা নির্মাণ করছে কেউ কেউ, আবার কখনো চুক্তিপত্র করে জমি ভাড়া দিয়েছে অনেকেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, এসব লোভের ঘর তৈরিকারীদের সহযোগিতা করছে জেলা প্রশাসনের ভূমি হুকুম দখল শাখার দালাল ও কতিপয় অসাধু কর্মচারী।
উলুখোলা এলাকার চাঁনমিয়া বলেন, সড়কের উভয় পাশে সার্ভিস লেন তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হবে এমন খবরে অধিক ক্ষতিপূরণ পাওয়ার লোভে রাতারাতি অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেছে অসাধুরা। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে সড়ক বিভাগের এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করা উচিত।
এ বিষয়ে কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তনিমা আফ্রাদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, সড়ক ভবন থেকে আমরা কোনো চিঠি পাইনিউল্টো এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ ও সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন থেকে সড়ক বিভাগ ও জেলা প্রশাসনকে বারবার চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এসব জমি সড়ক বিভাগের। তাই দায়িত্বও তাদের। পরে এ বিষয়ে সওজ গাজীপুর অফিসের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও ফোন না ধরার কারণে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
আপনার মতামত লিখুন :