মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে দীর্ঘ ৮ বছর মাছ শিকার বন্ধ থাকার পর কক্সবাজার টেকনাফের নাফ নদীতে আজ থেকে সব ধরনের মাছ ধরার অনুমতি পেয়েছেন জেলেরা।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টার দিকে জেলেরা জাল, নৌকা ও ট্রলার নিয়ে নদীতে মাছ শিকারে নামে। এই খবরে টেকনাফে জেলে পরিবারের মাঝে চলছে উৎসব।
[34324]
এর আগে, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের পর ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, মাদক ও সীমান্তে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে সরকার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশে ৮ বছর পর নাফ নদীতে মাছ শিকার শুরু হচ্ছে। জেলেরা সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাংলাদেশ সীমানার অভ্যন্তরে নাফ নদীতে শাহপরীর দ্বীপ হতে টেকনাফ জেটিঘাট পর্যন্ত মাছ ধরতে পারবে।
জেলেরা মাছ ধরতে যাওয়ার সময় বিজিবির ৫টি নির্ধারিত পোস্টে টোকেন/পরিচয়পত্র দেখাবে এবং মাছ ধরা শেষে ফেরত আসার পর তল্লাশি করার ব্যাপারে বিজিবি সদস্যকে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করবে। কোনো জেলে চেকপোস্টে না জানিয়ে মাছ ধরতে পারবে না। কোনোক্রমে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করতে পারবে না।
[34315]
শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, মৎস্য অধিদপ্তরের হালনাগাদকৃত নিবন্ধিত জেলেদের তালিকা বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রদান করা যেতে পারে। যাতে কোনোক্রমে নিবন্ধিত জেলে ব্যতীত কেউ নাফ নদীতে মাছ ধরতে না পারে।
টেকনাফের জালিয়া পাড়ার জেলে ফরিদ বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, মাদক ও সীমান্তে চোরাচালানের অজুহাত দিয়ে দীর্ঘ আট বছর নাফ নদীতে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। এতে আমরা অনেক কষ্টে ছিলাম। অবশেষে মাছ শিকার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার খবরটি শুনে অনেক আনন্দ কাজ করছে।
এত বছর ধরে অনেক দেন-দরবারেও জেলেরা আর নামতে পারেননি নাফ নদীতে। অবশেষে হাইকোর্টে দায়েরকৃত রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মো. কামরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক পত্রে জেলেরা মাছ ধরার অনুমতি ফিরে পান।
[34314]
হাইকোর্টের নির্দেশনা মতে, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাংলাদেশ সীমানার অভ্যন্তরে নাফ নদে শাহপরীর দ্বীপ হতে টেকনাফ জেটিঘাট পর্যন্ত মাছ ধরতে পারবেন জেলেরা।
মৎস্য অধিদপ্তরের হালনাগাদকৃত নিবন্ধিত জেলেদের তালিকা বিজিবি, কোস্ট গার্ড ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে প্রদান করা যেতে পারে। যাতে কোনোক্রমেই নিবন্ধিত জেলে ব্যতীত কেউ নাফ নদে মাছ ধরতে না পারে।
এই অনুমোদন সম্পূর্ণ সাময়িক। তিন মাস পর সীমান্তের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এ অনুমতি নবায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন জানান, পত্রের আলোকে জেলেদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
টেকনাফ মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ বলেন, প্রাথমিকভাবে অনুমতি মিলেছে, এতে জেলেরা খুশি। তবে রাতে মাছ ধরার অনুমতি না পেলে জেলেদের পোষাবে না।
[34312]
তবে শর্ত মেনে মাদক পাচার থেকে বিরত থাকতে পারলে সুফল বয়ে আনবে অন্যথায় আবারও বন্ধ হয়ে যাবে বলে অভিমত প্রকাশ করছেন সচেতন মহল।
এদিকে নাফ নদী ঘুনধুম থেকে শাহ পরীর দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত। গোটা নাফ নদীই মাছ ধরার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে, কোন রকমের বৈষম্য করা ঠিক হবে না বলে মনে করছেন তারা।