দুপুরে ময়মনসিংহে আজহারীর মাহফিল, ভোরেই মুসল্লিদের ঢল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৫, ১২:১৪ পিএম

দুপুরে ময়মনসিংহে আজহারীর মাহফিল, ভোরেই মুসল্লিদের ঢল

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

জনপ্রিয় ইসলামিক স্কলার ড. মিজানুর রহমান আজহারীর আগমন উপলক্ষ্যে ময়মন‌সিংহের সার্কিট হাউজ মাঠে ভোর থেকেই মুসল্লিদের ঢল নেমেছে। তাফসিল কুরআন আয়োজিত মাহফিলে তিনি বাদ জোহর বয়ান রাখবেন।

আল ইসলাম ট্রাস্টের আয়োজনে অনুষ্ঠিতব্য তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে সভাপতিত্ব করবেন শায়কুল হাদিস হাফেজ মাওলানা নুরুল ইসলাম।

আজহারীর বয়ান শোনার জন্য ভোর থেকেই ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা দলে দলে মাহ‌ফিল ময়দানে জমাতে শুরু করেন। শনিবার সকাল ৭টার মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় সা‌র্কিট হাউজ মা‌ঠের গোটা মাহফিল এলাকা।

মাহফিলকে ঘিরে নিশ্চিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আয়োজক কমিটি ও প্রশাসন। জেলা পুলিশের অসংখ‌্য বিশেষ টিম মাহ‌ফিলে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে। এ ছাড়া র‍্যাব, সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মাঠে তৎপর থাকবে।

এ বিষয়ে কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম খান বলেন, এত বিশাল জমায়েতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। এ জন্য পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনীও কাজ করছে।

তাফসির মাহফিলে মিজানুর রহমান আজহারীর পাশাপাশি আরও জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তারা আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে। মাহফিল কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, আজহারীর উপস্থিতি এই মাহফিলের প্রতি মানুষের আগ্রহ আরও বাড়িয়েছে।

মাহফিল কমিটি জানায়, আজহারী আজ দুপুরের আগেই হেলিকপ্টারে ময়মন‌সিংহ পৌঁছাবেন এবং বাদ জোহর বয়ান করবেন। দীর্ঘ বিরতির পর তার এমন উপস্থিতি নিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে লাখো মানুষের আগমন প্রমাণ করে ইসলামী আলোচনায় আজহারীর জনপ্রিয়তা কতটা গভীর।

শ‌নিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ভোরে সরেজমিনে দেখা যায়, ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা দলে দলে মাহফিলের ময়দানে আসছেন। অনেকে ময়মনসিংহ বিভাগ ছাড়াও বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে এসেছেন। কেউ একা, কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে, কেউ বন্ধুদের নিয়ে, আবার কেউ পরিচিতজনদের সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন।

নেত্রকোনা থেকে এসেছেন আশরাফুল আলম। তিনি বলেন, আমার পছন্দের হুজুর আজহারী। তার অসংখ্য ওয়াজ ইউটিউবে শুনেছি। সকালে এলে মঞ্চের কাছাকাছি স্থানে জায়গা পাওয়া সম্ভব না। তাই এবার সরাসরি দেখতে চলে এসেছি।

জামালপুর সদর থেকে আসা মাজহারুল ইসলাম বলেন, মধুর কণ্ঠে বয়ান করেন আজহারী হুজুর। তাকে সরাসরি দেখে বয়ান কখনো শুনতে পারিনি। খুব ইচ্ছে তাকে সরাসরি দেখে বয়ান শোনার। সম্প্রতি ঢাকার নবাবগঞ্জে হুজুর বয়ান করবে জানতে পেরে সেখানেই যেতে চেয়েছিলাম। তবে আগের দিন বাসায় একটি সমস্যা তৈরি হওয়ায় যেতে পারিনি। হুজুরকে দেখে বয়ান শোনার ইচ্ছে ময়মনসিংহে আর মিস করতে চাই না। তাই রাতে মাঠে চলে এসেছি।

আয়োজকরা জানিয়েছে, মাহফিল উপলক্ষ্যে ১০ লাখ থেকে ১৫ লাখের অধিক মানুষের সমাগম ঘটতে পারে। ২২‌টি এলইডির মাধ্যমে বয়ান প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের জন্য রয়েছে জেনারেটর। পাশাপাশি ফ্রি ওয়াইফাই, স্যানিটেশন, পর্যাপ্ত সুপেয় পানি, চার শতাধিক অজুখানার ব্যবস্থা, ইন্টারনেট সচল রাখার জন্য বাংলালিংক টাওয়ার, রয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দল, সমাগম কেন্দ্র করে রয়েছে তিনটি মেডিক্যাল ক্যাম্প।

এবার মাহফিলে বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিতির কারণে এদিন শহরে যানবাহন চলাচলেও কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকবে। শম্ভুগঞ্জ ব্রিজের আগেই বড় যানবাহনকে আটকে দেওয়া হবে। এ ছাড়া নগরীর মাসকান্দা, আকুয়া বাইপাস ও রহমতপুর বাইপাসে আটকে দেওয়া হবে বড় যানবাহন। তবে শহরের অবস্থা অনুযায়ী ইজিবাইক (অটো) চলাচল করবে। এদিন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ময়মনসিংহে। সেক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য শহরে চলাচলে কোনো বাধা থাকবে না। তবে মূল শহরে যানজটের আশঙ্কায় সবাইকে বাইপাস ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক কামরুল হাসান মিলন জানান, ড. মিজানুর রহমান আজহারী একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি। তাকে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ পছন্দ করেন। বয়ান শুনতে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। এরই মধ্যে দেখতে পাচ্ছি মানুষের ঢল নেমেছে। ওয়াজ শুরুর আগ পর্যন্ত সময়ে নিশ্চয়ই সমাগম আরও বহুগুণ বাড়বে। আয়োজনের সব ধরনের প্রস্তুতি শুক্রবার বিকেলেই শেষ হয়েছে।

তিনি বলেন, মাহফিলে যেহেতু লাখ লাখ মানুষ উপস্থিত থাকবেন, সেহেতু মানুষের কিছু অসুবিধা হতে পারে। ইসলামের স্বার্থে নগরবাসী এই অসুবিধা মেনে নেবেন বলে আশা করছি।

আল ইসলাম ট্রাস্টের সদস্য মাহবুব রশিদ ফরাজি বলেন, মাহফিলে যেন মানুষ আসে, সেজন্য যথেষ্ট প্রচার চালানো হয়েছে। এটি ময়মনসিংহের বিভাগীয় মাহফিল। তবে অনেকে বিভাগের বাইরে থেকেও আসছেন।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম জানান, মাহফিলে কোনো অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার আশঙ্কা নেই। তবুও অগণিত মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।

আরবি/এসআর

Link copied!