উত্তরের জীবন রেখা তিস্তা । এই তিস্তায় নির্ভরশীল এই অঞ্চলের কোটি মানুষ । ভারত একতরফা পানি প্রত্যাহার করায় মরতে বসেছে নদীটি । তিস্তায় সর্বশান্ত হওয়া মানুষের দীর্ঘদিনের আর্তনাদ ঘোচাতে পারে তিস্তা মহাপরিকল্পনা। যা বাস্তবায়নে দীর্ঘ আন্দোলন করেছেন তারা। অথচ এর বাস্তবায়ন নিয়ে দীর্ঘদিন চলছে টালবাহানা। তবে এবার এর বাস্তবায়ন করে দুই পারের মানুষকে স্বতি দিবে সরকার এই আশাই তাদের। আর সরকারকে এর প্রতি নজর দিতে নানান কর্মসূচি হাতে নিয়েছে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন। তিস্তা নদী রক্ষায় ৪৮ ঘন্টার অবস্থান কর্মসূচী ঘোষনা করেছে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন । আগামী ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি তিস্তার ১৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লাখো মানুষ এই অবস্থান কর্মসূচীতে অংশ নিবে ।
এই কর্মসূচী নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন । তিস্তা ভাঙনরোধে মহাপরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে তা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি। তিস্তা নিয়ে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়ে এ দাবি তুলেছেন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবীব দুলু।
তিনি বলেছেন, আমরা চাই না, তিস্তায় ভাঙনরোধে বিক্ষিপ্তভাবে জনগণের ট্যাক্সের টাকা অপচয় করা হোক। এর আগে কিছু কিছু কাজ করা হয়েছে যা কাজে লাগেনি।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুরের একটি হোটেলে সাংবাদিক সম্মেলনে এই কথা বলেন তিনি। এসময় মহানগর বিএনপির আহবায়ক শামসুজ্জামান সামু, সদস্য সচিব মাহফুজুর উন নবী ডন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু, কাউনিয়া বিএনপির সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা, সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরপিইউজে) সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেকসহ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
আসাদুল হাবীব দুলু বলেন, জনগনের অর্থ অপচয় না করে বরং বিলম্ব হলেও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং তিস্তা পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় সম্মিলিতভাবে করতে হবে। আগামী ১৭-১৮ ফেব্রুয়ারি তিস্তা পাড়ে সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। এই কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচীব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং ভার্চুয়ালি যোগ দিবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, ভারতের কাছে তিস্তার পানি নয়, ক্ষমতা চেয়েছেন পতিত শেখ হাসিনা। দীর্ঘদিন যাবত আমরা বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছি। পতিত সরকার নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে রংপুর অঞ্চলের মানুষের আকাঙ্ক্ষার দাবিটি কখনোই গুরুত্ব দেয়নি।
দুলু বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা একটি প্রকল্প ছিল। এটিতে চীন অর্থায়ন করতে চেয়েছিল। এর আওতায় ছিল, স্যাটেলাইট শহর, হাউজিং, ইকোনোমিক্যাল জোন নির্মাণ। এটি পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণার কথাও ছিল। ২০১৬ সালে এর সমীক্ষাও হয়েছিল। কিন্তু ভারতের আপত্তির কারণে বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা অনতিবিলম্বে ওই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন চাই।
তিনি বলেন, তিস্তা নদী একসময় সুখ-সমৃদ্ধির উৎস ছিল। এখন তা আর নেই। তিস্তা এখন উত্তরাঞ্চলের দুঃখের কারণ। উচ্ছল জলধারার এই নদীর পানি এখন হাঁটুর নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাই তিস্তা নদী ও এর অববাহিকার মানুষ রক্ষায় পানির ন্যায্য হিস্যা আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি।
‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে তিস্তা নদীর কাউনিয়া সেতু, মহিপুর সেতু এবং তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টসহ লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, রংপুর, নীলফামারীসহ পাঁচ জেলার ১১ পয়েন্টে তাঁবু খাটিয়ে একই সময়ে এই কর্মসূচি পালন করা হবে। তিস্তা পাড়ের মানুষের জীবন কাহিনি অর্থাৎ তাদের আনন্দ-বেদনার বিষয়গুলো নাটক, সংগীতের মাধ্যমে দুই দিনব্যাপী তুলে ধরা হবে, যা মানুষকে সংগঠিত করবে।