রোববার শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব

টঙ্গী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৫, ০৯:১৪ পিএম

রোববার শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব

ছবি: সংগৃহীত

টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার শেষ পর্বের দ্বিতীয় দিনে বয়ান, জিকির ও ইবাদতে মুখর পুরো ইজতেমা ময়দান। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমার শেষ পর্ব। মোনাজাত শেষে ময়দান ছেড়ে চলে যাবেন দ্বিতীয় পর্বে আগত মুসল্লীরা।

তুরাগ তীরের প্রায় ১৬০ একর জায়গায় জুড়ে টানানো হয়েছে শামিয়ানা। সেখানে ইবাদাত বন্দেগিতে মশগুল মুসল্লিরা। ইজতেমা ময়দান ঘুরে দেখা যায়, শামিয়ানার ভেতরে যত দূর চোখ যায়, শুধু মানুষ আর মানুষ। মাঠে পাটি ও চট দিয়ে বিছানা পেতে বসে বয়ান শুনছেন মুসল্লিরা। কেউ বসে বয়ান শুনছেন, কেউ আবার রান্নার করার পাশাপাশি বয়ান শুনছেন।

তাবলিগ জামাতের মধ্যে বিরোধের কারণে এবারও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছে দুই পর্বে। তবে বিগত বছরে প্রথম পর্ব এক ধাপে অনুষ্ঠিত হলেও এবার প্রথম পর্ব দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বাদ ফজর বয়ান করেন দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের মাওলানা আব্দুস সাত্তার এবং তরজমা করেন মুফতি আজিম উদ্দিন। বাদ আসর বয়ান করেন নিজাম উদ্দিন মারকাজের হাফেজ মনজুর এবং তরজমা করেন মাওলানা রুহুল আমিন। বাদ মাগরিব বয়ান করেন নিজামুদ্দিন মারকাজের মাওলানা জামশেদ এবং তরজমা করেন মাওলানা মুনির বিন ইউসুফ।

শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বাদ ফজর বয়ান করবেন নিজামুদ্দিন মারকাজের মাওলানা ইলিয়াস বিন সাদ এবং তরজমা করবেন মাওলানা ওসামা ইসলাম। বাদ মাগরিব বয়ান করবেন নিজামুদ্দিন মারকাজের মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ সাহেব এবং তরজমা করবেন মাওলানা মুনির বিন ইউসুফ। ইজতেমাস্থলের বয়ান মঞ্চ থেকে মূল বয়ান তাৎক্ষণিকভাবে তা বিভিন্ন ভাষায় তরজমা করা হচ্ছে।

শুক্রবার সকাল দশটা থেকেই গাজীপুর জেলা ও তার আশপাশের এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা বৃহৎ জুমায় অংশ নিতে ময়দানে আসতে শুরু করেন। আশপাশের এলাকা থেকে নামাজে যোগ দিতে লাখো মুসল্লি দুপুরে আগেই ময়দানে প্রায় প্রতিটি খিত্তায় ও ময়দানের চারপাশের সড়কে অবস্থান নেন।

শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) জুমার আজান দেয়া হয় দুপুর ১টায়। দেড়টায় শুরু হয় খুতবা। এরপর ১টা ৫০ মিনিটে নামাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ১টা ৫৫ মিনিটে। জুমার নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা সাদের বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ।

বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে এক মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

নিহতের নাম দিদার তরফদার (৫৫)। তিনি খুলনা জেলার লবনচরা থানাধীন বাঙ্গালগলি গ্রামের মৃত তৈয়ব আলী তালুকদারের ছেলে।

মাওলানা সা‍‍`দ অনুসারীদের ইজতেমা আয়োজক কমিটির মিডিয়া সমন্বয়ক মোঃ সায়েম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড. মোঃ নাজমুল করিম খান বলেছেন, আপনারা হয়তোবা লক্ষ্য করেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি প্রচারণা আছে যে এখানে (ইজতেমা ময়দানে) হামলা হতে পারে। আমরাও এটিকে উড়িয়ে দিচ্ছি না। আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি। এটা হয়তোবা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দিকে ভয় দেখানোর জন্য, যাতে এখানে লোকজন সমাগম না হয়। আমি আপনাদেরকে অনুরোধ করবো, ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জুমার নামাজের পর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের ২নং গেইটে গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের কন্ট্রোল রুমে সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

কমিশনার বলেন, আমরা সুইপিং করেছি, মাঠের মধ্যে কোনো বোমা নেই, নিশ্চিতভাবেই আমরা বলতে পারি। কিন্তু এরপরও কখনো ঢুকবে না সেই সম্ভাবনা আমরা ফেলে দিতে পারি না। আমরা তার জন্য চেকপোস্ট বসিয়েছি। হামলার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে। আমার মনে হয় না এটি কোনো নির্ভরযোগ্য সোর্স। তারপরও আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি, আর আমরা এটাকে কোনো হুমকি মনে করছি না। এর আগেও আপনাদেরকে বলেছি সারা দেশে যেহেতু ডেভিল হান্ট চলছে এটাকে এড়ানোর জন্য কিছু দুষ্কৃতকারী ইজতেমায় আশ্রয় নিতে পারে, এখানে এসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। সেই ব্যাপারে আমাদের লক্ষ্য আছে। আমরা মুরুব্বিদের বলেছি আপনাদের নজরে যদি কোনো দুষ্কৃতকারী পড়ে আপনারা আমাদের জানাবেন, আমরা ব্যবস্থা নেব।

তিনি আরও বলেন, আপনারা সবাই এসেছেন, এখানে বিশ্বের দ্বিতীয় সমাবেশ, সেটি হলো ইজতেমা। ইজতেমাকে কেন্দ্র করে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা এখানে জড়ো হচ্ছেন। শুক্রবার জুমার দিন, পাশাপাশি আজ রাতে শবে বরাত। তাই এটা একটি গুরুত্ব বহন করে। এজন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এখানে প্রচুর সমবেত হবে। সমবেত হলে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের সকলের। আমরা পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক সতর্ক আছি।

জিএমপি কমিশনার বলেন, এখানে মাঠে যারা আছেন তারাও প্রচুর সংখ্যক ভলান্টিয়ার রেখেছেন, তারা নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছেন। আশা করি নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি হবে না। আমরা চারদিকে লোক রেখেছি, চেকপোস্ট রেখেছি, সিসি ক্যামেরা ও ড্রোনের মাধ্যমে লক্ষ্য রাখছি।

তিনি আরও বলেন, তবে একটি কাজ আমরা করতে চাই, রাস্তাগুলো খালি রাখতে চাই। যদি কোনো ঘটনা ঘটেই যায় আমরা যেন দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারি। আমরা ফায়ার ব্রিগেডের সঙ্গে আলোচনা করেছি, তারা প্রস্তুত আছে। আমরা প্রত্যেকে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা একসঙ্গে হয়েছেন, এখানে তারা ইবাদতের জন্য এসেছেন। আজ শবে বরাত, তারা দেশের জন্য দোয়া করবেন, সকলের জন্য দোয়া করবেন। তারা যেন নির্বিঘ্নে দোয়া করতে পারেন সকলের সহযোগিতায় সেই ব্যবস্থা করা হবে।

আরবি/এসবি

Link copied!