প্রার্থী ঘোষণা জামায়াতের দল গোছাচ্ছে বিএনপি

সালমান ফরিদ, সিলেট

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৫, ০৯:২৯ এএম

প্রার্থী ঘোষণা জামায়াতের দল গোছাচ্ছে বিএনপি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দৃশ্যে আওয়ামী লীগ নেই। আর ভোটের ময়দানে ফেরারও আপাতত সুযোগ নেই। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব এখন সংকটের মুখে। গেলো ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর তকমা দলটিকে বিলীনের পথে নিয়ে গেছে। বড় দলগুলোর মধ্যে বাকি আছে বিএনপি ও জামায়াত। এ দুটো দলই এখন রাজনীতির মাঠে সোচ্চার। 

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন দুটি দল আসার আলোচনা চলছে। তারা আসার আগেই বিএনপি ও জামায়াত দল গুছিয়ে নিতে ব্যস্ত। বিশেষ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দল দুটি মাঠের রাজনীতিতে তৎপর হয়ে উঠেছে। সিলেটেও দল দুটি কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে।

‘ঠিক কবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে’, তা নিয়ে নিশ্চয়তা না থাকলেও আগেভাগে নির্বাচনি প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চায় দুই দলই। সেই লক্ষ্যে কেন্দ্রের মতো সিলেটে বিএনপি পুরোদমে দল গোছাতে ব্যস্ত। বিশাল সমর্থকগোষ্ঠী ও এন্টি আওয়ামী লীগ সেন্টিমেন্ট দলটির জন্য সুবিধা ও সুখবর দুটিই নিয়ে এসেছে। 

তারা দল গোছাতে সিলেটের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় সমাবেশের আয়োজন করেছে। প্রচারপত্র বিলি করছে। পাশাপাশি ছোট দল ও মতের ভোটব্যাংক যাতে নিজেদের ছাদের নিচে থাকে বা সেগুলো নিয়ে আসা যায়, সে নিয়েও কৌশলী ভূমিকায় রয়েছে তারা।

তবে বসে নেই জামায়াতে ইসলামী। তাদের সামনে দলের ভেতরের সংকট মেটানোর কোনো চাপ নেই। ফলে দল গোছানোর পেরেশানিমুক্ত থেকে তারা নির্বাচনের মাঠে নিজেদের শক্তি ও ভোট ব্যাংক বাড়ানোয় শতভাগ শক্তি ব্যয় করছে। নিজেদের জানান দিতে এবং নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মাঠে চাঙা রাখতে এরই মধ্যে সিলেটে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। এটি দল জামায়াতকে আরও চাঙা করে তুলছে। খেলাফত মজলিস, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনও নিজেদের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে।

তবে আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক ছাড়া সিলেটে এ দুই দলের জন্য বড় ফ্যাক্ট রয়েছে আরও দুটি। দলের বাইরে ভোটের মাঠে তাদের সমীহ করতে হয় সবাইকে। একটি হেফাজতের কওমি সমর্থকগোষ্ঠী, অপরটি ফুলতলী মসলক। নতুন ভোঠার গোষ্ঠীসহ এ দুটি ধারাও সিলেটের ভোটের মাঠে পরিবর্তনের প্রভাব ফেলে। 

সাম্প্রতিক সময়ে এ দুটি বলয়ের সঙ্গে জামায়াতের খুব সুখকর সম্পর্ক যাচ্ছে না। নানান বিষয়ে তারা কাদা ছোড়াছুড়িতে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। এবার সিলেটে এই ফ্যাক্ট বিএনপির দিকে ঝুঁকতে পারে। আর তা বাস্তব হলে ভোটের মাঠে বাড়তি সুবিধা পেতে পারে বিএনপি।

বিএনপি সূত্র জানায়, আগামী সংসদ নির্বাচনে বিভাগের ১৯টি আসনই তাদের দখলে নিতে বদ্ধপরিকর। এবার তাদের সেই সুযোগও হাতছানি দিচ্ছে। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯টিতে জয়লাভ করেন। আর বিএনপির সমর্থনে জামায়াত একটি আসনে জয়লাভ করেছিল।

রাজনৈতিক সূত্রের মতে, ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে নানান অভিযোগ থাকলেও পরে আর কোনো নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও রাজনৈতিক প্রভাবমূক্ত ছিল না। পরবর্তী সময়ে ‘বাকশালি’ কায়দায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হওয়ায় আওয়ামী লীগ ও তাদের মতাদর্শে বিশ্বাসী ছাড়া আর কোনো দল রাজনীতির মাঠে থাকতে পারেনি। 

গেলো ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এর পরিবর্তন হয়। সেজন্য আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর হবে-দেশবাসী এমনটাই আশাবাদী। সেই আশা সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো এগোচ্ছে। চাঙা হয়ে উঠছে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলো। 

গত পাঁচ মাস অনেকটা সংক্ষিপ্ত আকারে দলীয় কর্মসূচি পালন করলেও এখন তা হচ্ছে বৃহৎ পরিসরে। একের পর এক কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারাও। সিলেট বিভাগেও জেলা পর্যায়ে আয়োজন করা হয়েছে বৃহৎ সমাবেশের। এরই মধ্যে ১২ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জে সমাবেশ করেছি বিএনপি।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা এবং রাষ্ট্রে পতিত ফ্যাসিবাদের চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকবিলাসহ বিভিন্ন জনদাবিতে এই সমাবেশ হচ্ছে। ১৭ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজার এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জের সমাবেশ শেষে বিভাগীয় শহর সিলেটে ১৯ ফেব্রুয়ারি সমাবেশ করবে দলটি। জেলা শেষে মহানগর পর্যায়ে আলাদা সমাবেশের তারিখ ঘোষণা করা হবে।

বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি জনদাবির এসব সভা-সমাবেশ সফলে সিলেট বিভাগের দুটি জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে। তিনি বলেন, বিএনপি দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করে। দেশের মানুষের স্বার্থে যেকোনো আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করতে দলটি রাজপথে থাকবে।

তিনি বলেন, সিলেটে বিএনপির সব সমাবেশ সফল করতে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছি। আগামী নির্বাচনে সিলেটবাসীর প্রথম পছন্দই হবে বিএনপি। সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী ও গণমানুষের দল। সিলেটের ১৯টি আসনে বিএনপিকে মানুষ পছন্দ করবে। দল যেহেতু ঐক্যবদ্ধ, ফলে মানুষের আস্থার জায়গা অর্জন করতে পারবে।

সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি কয়েস লোদী বলেন, একটি উৎসবমুখর পরিবেশ ও ভয়হীন পরিস্থিতিতে মানুষ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। আমরা এমন একটি পরিবেশ চাই। বর্তমান সরকার সেটি অবশ্যই নিশ্চিত করবে।

এদিকে জামায়াত সিলেটের ৪ জেলায় তাদের সমাবেশ এরই মধ্যে শেষ করে ফেলেছে। গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কয়েক মাস ধরে জামায়াতের নেতাকর্মীরা তৃণমূলে ব্যাপকভাবে সভা-সমাবেশ করছেন। খেলাধুলা, ধর্মীয় ও সামাজিক নানা আয়োজনে যোগ দিয়েও তারা কুশল বিনিময় করছেন। 

এখন এগোচ্ছেন সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে। এরই মধ্যে তারা সারা দেশে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছেন। এর উদ্দেশ্য দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের চাঙা এবং রাজনীতির মাঠে নিজেদের অবস্থান মজবুত রাখা। এক সপ্তাহ আগে সারা দেশের মতো সিলেটের ১৯ আসনেও দলটি তাদের প্রার্থীদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে। সেই প্রার্থীদের নিয়ে দলটি কেমর বেঁধে ‘নির্বাচনি মাঠে’ নেমে পড়েছে।

সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি মো. শাহজাহান আলী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, জামায়াত দুই বছর আগে সারা দেশের বিভিন্ন আসনে প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করেছিল। এসব নাম কেন্দ্র অনুমোদন দেওয়ায় এখন অঞ্চল থেকে ঘোষণা করা হচ্ছে। তবে নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হলে প্রার্থী বাড়তে-কমতে পারে। এমনকি এখনকার ঘোষিত তালিকাও পরিমার্জিত হতে পারে।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সিলেট অঞ্চলের পরিচালক এহসানুল মাহবুব জুবায়ের সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। সিলেট জেলার ছয় আসনে প্রার্থীদের মধ্যে সিলেট-১ আসনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানানো হয়। 

সিলেট-২ আসনে অধ্যক্ষ আবদুল হান্নান, সিলেট-৩ আসনে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লোকমান আহমদ, সিলেট-৪ আসনে জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, সিলেট-৫ আসনে জেলার নায়েবে আমির আনোয়ার হোসেন খান এবং সিলেট-৬ আসনে ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে উল্লেখ করা হয়

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!