রঙিন কপি চাষ করে সফল কৃষক শফিকুল ইসলাম

গোপাল অধিকারী

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫, ০৩:৪২ পিএম

রঙিন কপি চাষ করে সফল কৃষক শফিকুল ইসলাম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ঈশ্বরদীতে রঙিন কপি চাষ করে সফল কৃষক শফিকুল ইসলাম। ফুলকপি যখন কৃষকের গলার কাটা, গুণতে হয়েছে নিয়মিত লোকসান- ঠিক তখনই শখের বসে রঙিন ফুলকপি চাষ করে বাজিমাত করছেন শফিকুল।

সাদা নয় বরং হলুদ বা কেরাটিনা, বেগুনি বা ভেলেনটিনা ও ঝিনুক আকৃতির এ তিন জাতের রঙিন ফুলকপি চাষ করে শফিকুল এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। এখন তার মাঠ জুড়ে সবুজ পাতার মাঝে হলুদসহ আরও দুই রঙের ফুলকপি শোভা পাচ্ছে। দূর থেকে বোঝা না গেলেও কাছ থেকে কপির এমন ভিন্ন রঙ মুগ্ধ করছে সকলকেই। এ রঙিন ফুলকপি দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন বিভিন্ন গ্রামের মানুষ।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের চরমিরকামারী মাথালপাড়া গ্রামে সবুজ পাতার মাঝে লুকিয়ে থাকা এসব নতুন জাতের রঙিন ফুলকপির পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন আব্দুস সাত্তারের ছেলে কৃষক শফিকুল ইসলাম।

এদিকে, তার এ রঙিন ফুলকপি দেখতে সাধারণ মানুষসহ স্থানীয় অনেক কৃষকই ভিড় করছেন। অনেকেই নিচ্ছেন নানা পরামর্শ। জমি থেকেই কেউ কেউ কিনছেন শখের এ সু-স্বাদু রঙিন ফুলকপি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈশ্বরদী উপজেলায় সাদা রঙের ফুলকপি নিয়মিত চাষ হলেও এ বছরও রঙিন ফুলকপি চাষ করেছেন কৃষক শফিকুল ইসলাম। বর্তমানে রঙিন ফুলকপির দারুণ চাহিদা রয়েছে দেশের বাজারে। এছাড়া উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় লাভ বেশি হয়, তাই কৃষকরা উচ্চমূল্যের এ জাতের ফুলকপি চাষে ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সর্বপ্রথম লোকমুখে শুনে ও ইউটিউবের ভিডিওতে ফুলকপির রং দেখে বেশ আগ্রহের সঙ্গে বাড়িতে কয়েকটি চারা চাষ করে ভালো সফলতা পেয়েছিলেন এ কৃষক। এজন্য এ বছর তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ১০ কাঠা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেন তিন জাতের এসব রঙিন ফুলকপি। জমিতে চারা রোপণ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ৫-৬ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। একদিকে ভালো ফলন ও চাহিদার তুলনায় দাম বেশি পাওয়াই লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কৃষক শফিকুল ইসলাম। ইতোমধ্যে নিজের ক্ষেত ৪০ হাজার টাকার ফুলকপি বিক্রি করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, লোকমুখে শুনে বাড়িতে কয়েকটি চারা চাষ করে ভালো ফলন পেয়ে আগ্রহটা বেড়ে গেছে। তাই এ বছর প্রথমবার বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেছি। বর্তমানে আমার এ রঙিন ফুলকপি দেখতে অনেক মানুষ আসছে। খেতে সুস্বাদু হওয়ায় অনেকেই ক্ষেত থেকেই সংগ্রহ করছে উচ্চমূল্যে। কেউবা সংগ্রহ করছেন শখের বসে। সবমিলিয়ে বেশ ভালো আয় করেছি। এ রঙিন ফুলকপিতে ৫-৬ হাজার টাকা খরচ করে চল্লিশ হাজার টাকা বিক্রি করেছি, আরও করব। যদি কৃষি বিভাগের পূর্নাঙ্গ সহযোগিতা পাই, তবে আরও বেশি আবাদ করা
সম্ভব এ রঙিন ফুলকপি।

এ ফুলকপি দেখতে আসা স্থানীয় কৃষক শাহিনুর রহমান বলেন, এই প্রথমবার এমন রঙিন ফুলকপি চাষ হয়েছে আমাদের গ্রামে। শুধু গ্রাম না, এ ঈশ্বরদী উপজেলাতেই প্রথম এমন ব্যতিক্রম কপি চাষ হয়েছে। তার এ ফুলকপির ক্ষেত দেখতে গ্রাম ও বাইরের অনেক মানুষ ভিড় করেন। আমরা এসে শফিকুল ভাই থেকে অনেক পরামর্শ নি, যাতে আগামীতে আমরাও এ রঙিন ফুলকপি চাষ করতে পারি।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষির জন্য বিখ্যাত। এবার ঈশ্বরদীতে ৭২০ হেক্টর জমিতে কপির আবাদ হয়েছে। এখানে বিশেষ করে লিচুর পর গাজর ও ফুলকপি অন্যতম ফসল। রঙিন ফুলকপি ঈশ্বরদীতে এবার প্রথমবারের মতো চাষ হয়েছে। কৃষকদের উপজেলা কৃষি অফিস থেকে রঙিন ফুলকপি চাষে নানা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!