ঢাকা মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

দুই লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবায় দুই ডাক্তার

মোস্তাফিজুর রহমান, নলডাঙ্গা
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫, ১২:২২ পিএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

হাসপাতালে ভেতরে শুধু ধুলা আর ধুলা, এ যেন ধুলার রাজ্য! হাসপাতাল এখন যেন নিজেই অসুস্থ! ধুলায় খাচ্ছে প্রায় ২৭ কোটি টাকা। উদ্বোধনের প্রায় ৪ বছর হতে চললেও নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জনবল না থাকায় স্বাস্থ্য সেবা পুরোপুরি শুরু হয়নি। ফলে হাতের কাছে সরকারি একটি আধুনিক হাসপাতাল থাকলেও ডাক্তার, নার্সসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবলের অভাবে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষ। আর এই ২ লাখ মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে মাত্র ২জন চিকিৎসক। অর্থের অভাবে দরিদ্র পরিবারে লোকজন জেলা বা বিভাগীয় শহরে চিকিৎসা করাতে পারছেন না।

এ বিষয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা দাবি করেছেন, খুব শীঘ্রই হাসপাতালটিতে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিয়ে স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

জানা যায়, নলডাঙ্গা উপজেলা ৫০ শর্য্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার দীর্ঘদিনেও পুরোপুরি না হওয়ায় স্বাস্থ্য সেবা চালু হচ্ছিল না। এলাকাবাসীর দাবির মুখে ও স্থানীয় ও জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর তৎকালীন এমপি ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ২০২১ সালের ২৭ জুলাই হাসপাতালটি উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর এখনও ডাক্তার, নার্স ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল এখনও নিয়োগ হয়নি। তবে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ২ জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে হাসপাতালটির শুধুমাত্র বহিঃবিভাগ চালু রেখেছে। এতে জনবলের অভাবে জরুরি বিভাগ ও রোগীদের ওর্য়াড চালু করা সম্ভব হয়নি।

বিনা টাকায় সরকারি ছুটির দিন ব্যতিত প্রতিদিন দুপুর পর্যন্ত বহিঃবিভাগে রোগী দেখা ছাড়া অন্য সেবা প্রদান করা হয় না হাসপাতালটিতে। এর ফলে এই উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষ সরকারি স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ছাড়া অর্থের অভাবে দরিদ্র পরিবারে লোকজন জেলা শহরে বা বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে চিকিৎসা করাতে পারছেন না । উপজেলা থেকে প্রায় জেলা সদর হাসপাতালটি ১৮-১৯ কি.লো. দূরত্ব হওয়ায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় অসুস্থ বয়স্ক রোগীদের।

হাসপাতালটির ডাক্তার নার্স ও অন্যান্য কর্মচারীর আবাসিক সুবিদার জন্য আলাদা আলাদা আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। মোট ২৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে হাসপাতালটি নির্মাণ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আছমা বেগমসহ রোগীরা জানান, হাসপাতালটি ৩ বছর আগে উদ্বোধন হইছে কিন্তু এখনও পুরো দমে চালু হয়নি। এখানে শুধু সামান্য ঔষুধ দেওয়া হয়। হাসপাতালটি চালু হলে আমাদের নাটোর-রাজশাহী যাওয়া লাগে না।

স্থানীয় সিনিয়র গণমাধ্যমকর্মী রানা আহাম্মেদ বলেন, বর্তমানে হালপাতালের অবস্থা বড়ই নাজুক, যেন ধুলার রাজ্য পরিণত হয়েছে। হাসপাতালটি পুরো দমে দ্রুত চালুর দাবি করেন তারা।

এ বিষয়ে নলডাঙ্গা হাসপাতালের দায়িত্বরত অফিসার (RMO), আবা‌সিক মে‌ডিক্যাল উপজেলা স্বাস্থ্য ক‌মপ্লেক্স, ডা. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার হিসাবে বর্তমানে দায়িত্বে আছি, আরেকজন ইউএসও পিও যে ছিলেন তিনি বদলি হয়েছেন। আপাতত স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে দুজন নিয়োগ প্রাপ্ত হিসাবে দ্বায়িত্বে আছি। কমিউনিটি মেডিকেল ডা. হিসাবে একজন, চতুর্থ শ্রেণির একজন স্টাফ রয়েছেন ও দুজন আউটসোর্সিং হিসেবে কাজ করছে।

তিনি বলেন, ঔষধ হিসাবে আপাতত সর্দি ও কাশি, জ্বর  ডায়াবেটিসের ওষুধ এখান থেকে রোগীদের দেওয়া হয়। আর অন্যান্য সকল বিভাগ জনবল সংকটে বন্ধ রয়েছে।

নাটোর সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ মুক্তাদির আরেফীন বলেন, নলডাঙ্গা উপজেলা ৫০ বেডের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জনবল সংকটে আছে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে মৌখিক এবং লিখিতভাবে জনবল নিয়োগ ও স্বাস্থ্যসেবা দ্রুত চালু করতে বিষয়টি তাদের নজরে দিয়ে আসছি । আশা করছি খুব শীঘ্রই হাসপাতালে জনবল নিয়োগ দিলেই স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, ২৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালে হাসপাতালটি নির্মাণ কাজ শুরু করে স্বাস্থ্য বিভাগ। ২০২১ সালের র্মাচ মাসে কাজ শেষ হয়।