ঐতিহ্য ধরে রেখেছে শত বছরের আনন্দবাজার হাট

সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫, ০৩:৩৮ পিএম

ঐতিহ্য ধরে রেখেছে শত বছরের আনন্দবাজার হাট

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে ধারণ করে আছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার আনন্দবাজার হাট। হাটটি প্রায় শত বছরের পুরনো। এ হাটে এমন কোনো জিনিস নেই যা পাওয়া যায় না। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এখানে আসেন বাজার করতে। সপ্তাহে শনি ও বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দেখা মেলে এ হাটের।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আনন্দবাজার হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটের প্রাকৃতিক পরিবেশ যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। সকাল থেকেই এ হাটে প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর হয়ে ওঠে। নিত্য-প্রয়োজনীয় সব বস্তু পাওয়া যায় এ হাটে।

হাটে প্রবেশ করলেই প্রথমেই দেখা মিলবে বেচাকেনায় ব্যস্ত ক্রেতা-বিক্রেতারা। হাটে পাওয়া যাবে মাছ ধরার বিভিন্ন সামগ্রী যেমন- জাল, বড়শি, টেঁটা ইত্যাদি। এছাড়া আছে শাক-সবজি, খাল ও নদীর মাছ, মসলা, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, কবুতর, কাস্তে, দা, বটি, কুড়াল, জামা-কাপড়, কলমের গাছ, বাঁশ, কাঠসহ নিত্য ব্যবহার্য নানান কিছু। ফলের মৌসুমে এখানে আম, জাম, কাঁঠালসহ নানা রকমের ফল পাওয়া যায়। এছাড়া আসবাবপত্র বানানোর নানা রকম উপকরণও এ হাটে ওঠে।

হাটের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে পুঁতা মিষ্টি নামে এক প্রকার ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি। অনেকেই এ মিষ্টিকে শিলপুঁতাও বলে থাকেন।  এক মিষ্টি বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক একটি মিষ্টি আধা কেজি থেকে তিন কেজি হয়ে থাকে। এছাড়া তার দোকানে বিভিন্ন রকমের মিষ্টি, রুটি, ডাল-ভাজি বিক্রি হয়।

তিনি বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসেন এ বিখ্যাত পুঁতা মিষ্টি খেতে। অনেকে আবার পরিবারের জন্য কিনে নিয়ে যান।

পুঁতা মিষ্টি ছাড়া এখানে তালের রসা, কালোজাম, রসগোল্লা, জিলাপি, মোহনভাগ, লালভোগ, বালুসাই, দই, পরোটা-ভাজি, ডালসহ নানা পদ পাওয়া যায়। ঝালমুড়ি, মুরালি, বুট, পেঁয়াজু, নিমকি, চানাচুর, মোয়াসহ নানা ধরনের লোকজ খাবারও মেলে। নানা পদের মাছের শুঁটকিও এখানে পাওয়া যায়। এছাড়া হাটটিতে সাপের খেলা দেখানো হয়। যা দেখে হাটে বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনতে আসা ক্রেতাদের মুগ্ধ করে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাটটি প্রায় শত বছর আগের। পূর্বে এই হাটটি আরও বড় পরিসরে ছিল। তখন হাজার হাজার মানুষ এখানে বাজার করতে আসতো। তবে এখন সব স্থানে দোকানপাট হয়ে যাওয়ায় হাটের চাহিদা তুলনামূলক কমে গেছে।

দিলীপ ঘোষ নামের এক মিষ্টি বিক্রেতা বলেন, ৪০ বছর ধরে আমি এখানে ব্যবসা করে আসছি। বুধবারে ক্রেতাদের সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকে। সকালের দিকে ক্রেতাদের সংখ্যা বেশি থাকে। আমার দোকানে রসগোল্লা, মিষ্টি, অমৃতি, জাম মিষ্টি, পুঁতা মিষ্টি, দই, জিলাপিসহ বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবার বিক্রি করি। হাটের প্রধান আকর্ষণ পুঁতা মিষ্টির পাশাপাশি আমার দোকানে ক্রেতাদের দইয়ের প্রতি আকর্ষণ বেশি থাকে। এ মিষ্টিজাতীয় খাবারগুলো আমি নিজ হাতে তৈরি করি।

আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের এক মুদি দোকানি বলেন, আনন্দবাজার হাটে সোনারগাঁ, চেঙ্গারচর, মুন্সিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতারা আসেন। বর্ষার মৌসুমের শেষ দিকে তাদের বাঁশের কেনাবেচা ভালো হয়। এ সময় মানুষ সাঁকো, পাড় বাঁধার কাজসহ অন্য কাজে ব্যবহার করার জন্য বাঁশ কিনে থাকেন। আনন্দবাজার হাটের ব্যবসায়ী মামুন শেখ বলেন, আনন্দবাজার হাটটির সঙ্গে সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। এখনো দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এখানে কেনাকাটা করতে ছুটে আসেন।

আরবি/এসবি

Link copied!