ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আশুলিয়ায় ৩৫ পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা

সাভার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২৪, ০৭:২২ পিএম

আশুলিয়ায় ৩৫ পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সাভার: পোশাক কারখানায় নারী-পুরুষের সমানুপাতিক হারে নিয়োগ, ছাটাই বন্ধ, হাজিরা বোনাস, শ্রমিক নিয়োগ, আন্দোলনকারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়াসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভের মুখে আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত ৩৫টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করছে কর্তৃপক্ষ। সাভারে হঠাৎ করেই শ্রমিকদের আন্দোলনে উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে এসব কারখানা ছুটি করেছে বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ।

সোমবার সকাল থেকেই আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকায় নবীনগর থেকে চন্দ্রাগামী মহাসড়কের একপাশে বিক্ষোভ শুরু করে গিল্ডান বাংলাদেশ নামের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এছাড়া ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ডিইপিজেড) সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন চাকুরিপ্রত্যাশাীরা। নারসিংহপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা আব্দুল্লাহপুর থেকে বাইপাইলের সড়কে এসে বিক্ষোভ কর্মসূচী করেন।

এ সময় শ্রমিকদের বিক্ষোভের এক পর্যায়ে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে বাইপাইল থেকে আবদুল্লাহপুর সড়ক থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে দিলে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে আশুলিয়ার ডিইপিজেড সামনের নবীনগর-চন্দ্রা সড়কটি অবরোধ করে রেখেছিলো চাকুরি প্রত্যাশীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ১০ টার দিকে বাইপাইল এলাকার গিল্ডান বাংলাদেশ কারখানার সামনের ফটকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত ঘটনার কারণে বাংলাদেশে আমাদের (গিল্ডান বাংলাদেশ) সকল কারখানা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এই কারখানার পাশেই পার্ল গার্মেন্টস কোম্পানি লিমিটেডের ফটকে আজ (সোমবার) কারখানা স্ববেতনে ছুটি থাকবে এমন নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

শিল্প পুলিশের সাথে কথা বলে জানা যায়,  আন্দোলনরত শ্রমিকরা নবীনগর-চন্দ্রা ও বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যারিকেড তৈরি করে অবরোধ করে বিভিন্ন কারখানা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে করে শিল্পাঞ্চলে উত্তেজনা শুরু হলে পরিস্থিতি সামাল দিতে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের বাইপাইল থেকে জিরাবো পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের অন্তত ৩৫টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এক পর্যায়ে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের ব্যারিকেড তুলে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। তবে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের ডিইপিজেড সামনের এলাকার চাকরিপ্রত্যাশীরা এখনো অবরোধ করে  বিক্ষোভ করলে সেখানের পরিস্থিতিও স্বাভাবিক করেন তারা।

আন্দোলনকারীদের দাবি, কারখানায় বেকারদের নিয়োগ,  চাকুরিতে নারী- পুরুষ সমতা, কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ, নারী শ্রমিকদের হয়রানী বন্ধ, ভালোমানের টিফিন পরিবেশন, ঈদের ছূটি বৃদ্ধি, কারখানা স্বজনপ্রীতির নিয়োগ বন্ধ, শ্রমিকদের সাথে খারাপ আচরনকারী কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করা। 

আন্দোলনকারী নারী শ্রমিক শারমিন জানান, কারখানায় চাকরী করি ১০ বছর ধরে। আমরা অসুস্থ হলে কারখানার মেডিকেল সেন্টারে পাঠানো হয়। মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসকদের বলে দেয়া হয় নর্মাল চিকিৎসা দিয়ে ছুটি মন্জুর না করতে। এছাড়া কারখানার যে সকল কর্মতরা নারী শ্রমিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়না। আমরা বিষয়গুলো নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে এসকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে একত্রিত হলে তারা কারখানা বন্ধ ঘোষণা করলো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গিল্ডান বাংলাদেশের এক শ্রমিক বলেন,  আমরা যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করছি। আমাদের ১১ টি দাবি আছে এগুলো মানতে হবে। দাবির মধ্যে রয়েছে যারা আন্দোলন করছে তাদের যেন চাকুরিচ্যুত করা না হয়, যারা চাকুরি করছেন তাদের অন্তত ১০ বছরের চাকুরির নিশ্চয়তা, হাজিরা বোনাস ৩০০ টাকার পরিবর্তে ৮০০ টাকা করতে হবে, প্রমোশনের ক্ষেত্রে চাকুরির বয়স কমপক্ষে ৩ বছর ও যোগ্যতা অনুসারে হতে হবে।

তামজিদ নামে এক শ্রমিক বলেন, সকালে বেশ কিছু লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে জামগড়া এলাকার ‍‍`দি রোজ" কারখানায় ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পরে তারা আইডিএস কারখানায় ইটপাটকেল ছুড়ে চলে যায়। তারা আসলে শ্রমিক কি না তা বোঝা যায়নি। তবে আমার মনে হচ্ছিল তারা চাকরি প্রার্থী হতে পারেন। কারখানায় ইটপাটকেল ছুড়লে সড়কের দুই পাশের প্রায় সব কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।আমরা চাই কারখানা খোলা থাকুক। খোলা না থাকলে তো সমস্যায় পরে যাবো।

জামালপুর মাদারগঞ্জ থেকে চাকরি জন্য প্রায় ২ মাস ধরে এসেছেন আশুলিয়ায়। তবে বিভিন্ন কারখানায় ঘুরে চাকরি না পেলে আজ আন্দোলনে যান সুইট নামে চাকরি প্রত্যাশী। তিনি বলেন, আমরা চাকরি চাই। কারখানাগুলোতে আমাদের নেয়া হয় না। নারী শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়। আমাদের দাবি আদায়ের সময় এসেছে তাই সড়কে নেমেছি।

এবিষয়ে শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম বলেন, চাকরির দাবিতে আন্দোলন করছেন বেকাররা। এছাড়াও পোশাক কারখানায় নারী-পুরুষের সমানুপাতিক হারে নিয়োগের দাবিসহ আরও কয়েকটি দাবি রয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের অবরোধ তুলে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ডিইপিজেড এলাকার অবরোধ তুলে নিতে আন্দোলনকারীদের বোঝানো হলে তারা সড়ক থেকে সড়ে দাড়ায়।

তিনি আরও বলেন, আশুলিয়ার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা শ্রমিক ছাটাই বন্ধ, হাজিরা বোনাসাহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ করেন। উদ্ভুত এ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত ৩৫ টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে।

আরবি/জেডআর

Link copied!