বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে গোপালগঞ্জে মহান শহীদ ও আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসে পৌর পার্কের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দিবসের প্রথম প্রহর রাত ১২টা এক মিনিটে প্রথমে ফুল দিয়ে জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান এবং পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এরপর জেলা পরিষদ, বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, গোপালগঞ্জ পৌরসভা, গণপূর্ত, এলজিইডিসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। রাত উপেক্ষা করে শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনার চত্ত্বরে ভীড় জমায় শিশু, নারী, পুরুষসহ স্বর্বস্তরের সাধারন মানুষ।
[35189]
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাসহ সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এরপর ভোরে জেলার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রভাত ফেরী বের করে। পরে পৌর পার্কের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করে নানা বয়সের মানুষ। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নানান তারা।
এদিকে, ভাষা আন্দোলনের মহান শহীদদের স্মরণে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (গোবিপ্রবি) যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হয়। একুশের প্রথম প্রহরে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর ও প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসান শিক্ষক-
শিক্ষার্থীসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সূর্যোদয়ের সাথে সাথে প্রশাসনিক ভবনের সামনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে অর্ধনমিত রাখা হয়। সকাল সাড়ে ৭টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে প্রভাত ফেরি শুরু হয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। সকাল ৮টা থেকে সকল অনুষদ, বিভাগ, আবাসিক হল, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠনের পক্ষ
থেকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। পরে শহিদদের স্মরণে সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের ৫০১ নং কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
[35186]
সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং জাতীয় ও গুরুত্বপূর্ণ দিবস উদ্যাপন কমিটির সভাপতি ড. মোহাম্মদ আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মজনুর রশিদের সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য দেন মানবিকী অনুষদের ডিন মো. আব্দুর রহমান, প্রক্টর ড. আরিফুজ্জামান রাজীব, ইংরেজি
বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুকান্ত বিশ্বাস, ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক ড. রাজিবুল ইসলাম ও অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মনিরুল হাসান। এ সময় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, অনেক দেশ থেকে তো বটেই, আমাদের দেশ থেকেও অনেক ভাষা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কারণ এসব ভাষা সংগ্রাম করে টিকে থাকতে পারেনি। টিকে থাকার এই লড়াইয়ে আমাদের বাংলা ভাষা শক্ত অবস্থান করে নিয়েছে। যার পিছনে অবদান রেখেছেন আমাদের মহান ভাষা শহীদরা। এবং পরবর্তী সময়ে অনেকের হাত ধরে বাংলা ভাষার আধুনিকায়ন
ঘটেছে।
[35182]
এছাড়াও দিবসের কর্মসূচি হিসেবে মহান ভাষা আন্দোলনে আত্মত্যাগকৃত সকল শহিদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় বাদ আসর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া মাহফিল ও বিকেলে মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।