ঢাকা শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

জনবল সংকটে বেহাল লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

মাহমুদ হাসান লিটন, লালমোহন, ভোলা
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৫, ০৮:৪৪ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ভোলার লালমোহন উপজেলার প্রায় ৩ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসাস্থল ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তবে সেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক
থেকে শুরু করে নানান সংকটের ফলে দিন দিন বেহাল হয়ে পড়ছে সেবা কার্যক্রম। প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে বন্ধ রয়েছে এখানের অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, এক্সরে, ইসিজি এবং আল্ট্রাসোনোগ্রামের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা। এতে করে বাহির থেকে এসব সেবা নিতে গিয়ে পকেট ফাঁকা হচ্ছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের
সেবাপ্রত্যাশীদের।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, এখানে কনসালটেন্ট ও মেডিকেল অফিসারসহ চিকিৎসকের মোট পদ রয়েছে ৩০টি। তবে এরমধ্যে বর্তমানে আছেন কেবল ৬ জন। এছাড়া নার্স এবং মিডওয়াইফের ৩৬টি পদ থাকলেও এই পদে কর্মরত আছেন ১৯ জন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তৃতীয় শ্রেণির ১১৫টি পদ
থাকলেও তারমধ্যে খালি ৫০টি পদের জনবল। এসব সংকট দিনের পর দিন আরো তীব্র হচ্ছে। যার ফলে এই উপজেলার রোগীরা তাদের প্রাপ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

[35206]

তবে এসব সংকটের মধ্যেও বিগত ২০২৪ সালে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৫ হাজার ৪৫৩ জন, জরুরি বিভাগ থেকে ২১
হাজার ৪৪৮ জন এবং বহির্বিভাগ থেকে ৯৮ হাজার ৩৯৫ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। আর ওই বছর এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে ১ হাজার ৮৮ জন প্রসূতি মায়ের।

লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজনরা বলেন, বর্তমানে এখানে তেমন কোনো চিকিৎসক নেই। তার জন্য কাক্সিক্ষত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকেই সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এছাড়া চিকিৎসক সংকটের কারণে ভর্তি রোগীরাও জরুরি প্রয়োজনে চিকিৎসক পাচ্ছেন না। যার ফলে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন রোগীরা। এছাড়া প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, এক্সরে, ই-সিজি এবং আল্ট্রাসোনোগ্রামের সেবাও বন্ধ রয়েছে। এ কারণে বাহিরের বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে এসব সেবা নিতে গিয়ে সাধারণ রোগীরা অতিরিক্ত অর্থ গুণছেন। এতে করে এই উপজেলার দরিদ্র রোগীদের চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে। তাই আমাদের দাবি; দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব সংকট দূর করে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

[35203]

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্সিং সুপারভাইজার দিপালী রাণী দে জানান, এখানে যতজন নার্স এবং মিডওয়াইফ থাকার কথা ততজন নেই। সংকটের কারণে
খুব ভালোভাবে রোগীদের সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবুও আমাদের নার্স-মিডওয়াইফরা তাদের সাধ্যের ভেতর থেকে রোগীদের সেবা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ
চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. ইউসুফ হোসেন বলেন, এখানে মূলত তিনটি স্তরে রোগীদের সেবা দেওয়া হয়। যার মধ্যে
ইমার্জেন্সি, আউটডোর এবং ইনডোর সেবা। তবে বর্তমানে এখানে চিকিৎসকের প্রকোট সংকট। যার জন্য রোগীরা সত্যিই তাদের প্রাপ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তবুও আমরা যে কয়েকজন চিকিৎসক রয়েছি তারা নিজ নিজ স্থান থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে। তবে সংকট, সংকটই। তাই আশা করছি, এই উপজেলার অসহায়-হতদরিদ্র এবং সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ শিগগিরই এখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক পদায়ণ করবেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. তৈয়বুর রহমান জানান, সার্বিক দিক বিবেচনায় এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি জনগুরুত্বপূর্ণ এবং সেবাবান্ধব প্রতিষ্ঠান বলেই জনগণের আস্থা অর্জন করেছে। যার জন্য এখানে শত শত রোগী সেবা নিতে ছুটে আসছেন। তবে দিন দিন আমাদের এখানে জনবল সংকট বাড়ছে। এজন্য বিভিন্ন সেবা যথাযথভাবে আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না, তা সত্য। এসব সংকট দূর করতে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত অবহিত করছি।

[35186]

এ বিষয়ে ভোলার সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, পুরো জেলাতেই প্রয়োজনীয় লোকবলের ব্যাপক সংকট রয়েছে। এসব সংকট নিরসনের
জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার অবহিত করছি। আশা করছি কর্তৃপক্ষ শিগগিরই প্রয়োজনীয় লোকবল পদায়ণের মাধ্যমে এ সংকট নিরসনের কার্যকরী
উদ্যোগ নেবেন।