ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনায় আন্ত:জেলা ডাকাত দলের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ঢাকার সাভার থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর সদর উপজেলার লাউতারা গ্রামের মো. বদর উদ্দিন শেখের ছেলে মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে মুহিত (৩০), শরিয়তপুরের জাজিরা উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মো. ইসমাইল মোল্লার ছেলে মো. সবুজ (৩০) এবং ঢাকার সাভার উপজেলার টানগেন্ডা গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে মো. শরীফুজ্জামান (২৮)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩ টি মোবাইল ফোন, ১টি ছুরি ও ২৯ হাজার ৩৭০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে শনিবার ২২ ফেব্রুয়ারি সাড়ে ১১টার দিকে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান তার কার্যালয়ে প্রেসব্রিফিংএর মাধ্যমে এ তথ্য জানান।
এসময় তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার কারণে মির্জাপুর থানার এএসআই আতিকুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এর আগে বাসে ডাকাতির ঘটনায় বাসের যাত্রী ওমর আলী বাদি হয়ে শুক্রবার ভোর রাতে মির্জাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইউনিক রোড রয়েলস্ পরিবহনের ঢাকা কোচ (ময়মনসিংহ-ব-১১-০০৬১) বাসটি ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে রাজশাহীর নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এসময় বাসটিতে ৩০ থেকে ৩৫ জন যাত্রী ছিল। পরে রাত ১২টার দিকে হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে এবং হেমায়েতপুর থেকে আরও ১০ থেকে ১২ জন যাত্রী নিয়ে বাসটি পুনরায় রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা করে।
ঘটিকার সময় বাসটি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন চন্দ্রা বাইপাসে পৌছালে চা-বিরতির জন্য থামে। সেখানে ১০ থেকে ১৫ মিনিট চা বিরতির সময় চন্দ্রা বাইপাস থেকে আরও তিন থেকে চার জন নতুন যাত্রী নিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা করে বাসটি। বাসটি ওইদিন রাত দেড়টার দিকে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন হাইটেক সিটি পার্ক সংলগ্ন খাড়াজোড়া ফ্লাইওভার ব্রিজ অতিক্রম করার ৫ থেকে ৬ মিনিট পর হঠাৎ বাসে ৮ থেকে ৯ জন যাত্রী বেশে থাকা ডাকাত এক সঙ্গে দাঁড়িয়ে যায় এবং ধারালো চাকু ও চাপাতি দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে সকলকে চুপ থাকতে বলে।
এ সময় তাদের মধ্যে তিনজন অজ্ঞাতনামা ডাকাত গাড়ী চালকের গলায় ধারালো চাকু ধরে টানা হেচরা করে কিলঘুষি মেরে তাকে উঠিয়ে নিয়ে পেছনে উল্টা করে রাখে। ডাকাতদের মধ্যে থেকে একজন ডাকাত চালকের আসনে বসে বাসটি নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং বাসটি চালিয়ে টাঙ্গাইলের দিকে রওনা হয়। পরে মির্জাপুর উপজেলার সোহাগপাড়া সাকিনস্থ ফুটওভার ব্রিজের প্রায় ১০০ গজ পশ্চিম পার্শ্বে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উপর পৌঁছালে ডাকাতদলের ৬ থেকে ৭ জন সদস্য গাড়ীতে থাকা অন্যান্য যাত্রীদেরকে ধারালো চাকু ও চাপাতি দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।
এ সময় সকল যাত্রীদেরকে বলে, ‘তোদের সাথে টাকা পয়সাসহ যার যা কিছু আছে সব দিয়ে দে’। এসময় যাত্রীদের কাছে থাকা টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ও রূপাসহ সকল মালামাল ছিনিয়ে নেয়। পরে ডাকাতদলের সদস্যরা মির্জাপুরের নাটিয়াপাড়া নাছির গ্লাসের সামনে থেকে ইউটার্ন নিয়ে ঢাকার দিকে রওনা করে। তারা দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা গাজীপুরের কালিয়াকৈর, কোনাবাড়ীসহ গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুড়ায় এবং এই সময়ের মধ্যে যাত্রীদেরকে ধারালো চাকু ও চাপাতি দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এসময় দুইজন নারী যাত্রীকে শ্লীলতাহানী করা হয়।
এজহারে আরও বলা হয়েছে, সকল যাত্রীদের টাকাসহ অন্যান্য মালামাল লুট করে রাত ৪টার দিকে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন বাড়ইপাড়া এলাকার নন্দন পার্কের সামনে গাড়ীটি টাঙ্গাইল অভিমুখি থামিয়ে চালককে ভয় দেখিয়ে বলে, ‘১০ কিলোমিটারের মধ্যে গাড়ীটি কোথাও থামালে তোকে জানে মেরে ফেলবো, আমরা তোদের গাড়ীর পিছনে পিছনে আছি’ এই বলে ডাকাতদলের সদস্যরা মালামাল ও টাকা পয়সাসহ গাড়ী থেকে নেমে দ্রুত চলে যায়।
পরবর্তীতে চালক গাড়ী নিয়ে চন্দ্রা মোড়ে গেলে গাড়ীতে থাকা যাত্রীরা জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ফোন করে ঘটনার বিষয়ে পুলিশকে জানালে কিছুক্ষণের মধ্যে টহল পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। তখন গাড়ীতে থাকা যাত্রীরা ডাকাতির বিষয়ে বিস্তারিত জানালে কালিয়াকৈর থানাধীন চন্দ্রা এলাকার টহলরত পুলিশ মির্জাপুর থানায় যাওয়ার পরামর্শ দিলে চালক গাড়ী নিয়ে মির্জাপুর বাসস্ট্যান্ডে যায়।
তখন কয়েকজন যাত্রী ও গাড়ীর সুপারভাইজার মির্জাপুর থানায় গিয়ে ডিউটি অফিসারকে বিষয়টি মৌখিকভাবে অবগত করলে মামলা না নেওয়ায় তারা পুনরায় রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পরে নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম থানা মোড়ে গেলে গাড়ী থেকে তিন থেকে চারজন যাত্রী নেমে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় গাড়ীর চালক, হেলপার ও সুপারভাইজার ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত আছে সন্দেহে গাড়ীটি আটক করে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান জানান, ডাকাতির ঘটনায় মামলা হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই এ ঘটনায় জড়িত তিন আন্ত:জেলা ডাকাতদলের সদস্যকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। বাকিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তারকৃত তিনজনকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে। এছাড়া দায়িত্ব অবহেলায় মির্জাপুর থানার ডিউটি অফিসার এএসআই আতিকুজ্জামানকে সামায়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :