ঢাকা রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

পলিনেট হাউজ পদ্ধতিতে চারা উৎপাদনে সফল ইলিয়াস

নলডাঙ্গা (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫, ১১:০৪ এএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে, নিরাপদ উপায়ে অধিক ফলন নিশ্চিত করতে নাটোরে নলডাঙ্গায় শুরু হয়েছে পলিনেট হাউজ ব্যবস্থাপনা। বিভিন্ন সবজির চারা, ঔষধি চারা, ফুল ফলের রোগ মুক্ত চারার নিশ্চয়তা নিয়ে কৃষকদের মাঝে সকল সেরা জাতের চারার মাধ্যমে বিষ মুক্ত-রোগ মুক্ত চারা দিয়ে চাষাবাদ করে সফলতার আশায় এই আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই পলিনেট হাউজ স্থাপন করা হয়।

উপজেলা মিজাপুর দিয়ারপাড়া এলাকায় আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণ নাটোর নলডাঙ্গা কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করেছেন চাষি ইলিয়াস শেখ।

সরজমিনে নার্সারি ঘুরে দেখা গেল,ইলিয়াছের নার্সারিতে পলিনেট হাউসে ও উন্মুক্ত পরিবেশে চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। সবজিই সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে রয়েছে রঙিন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, মরিচ, ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, বিটরুট, ওলকপি, বোম্বাই মরিচ, নাগা মরিচ, কুমড়া, পেঁপে, ধুন্দুল। ফলের মধ্যে রয়েছে জাম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, পেয়ারা, আঙুর, ডালিম, বিভিন্ন জাতের আম প্রভৃতি। এ ছাড়া ফুলের মধ্যে আছে গোলাপ, মাধবীলতা, কুঞ্জলতা, গোল্ডেন শাওয়ার। ঔষধি গাছের মধ্যে হরীতকী, লজ্জাবতী, অশোক ও অ্যালোভেরা উল্লেখযোগ্য।

ইলিয়াস শেখ জানান, এসএসসির পর কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। বড় বোনের বিবাহ হয়ে গেছে। কিন্তু পরিবারে অভাব-অনটন জেঁকে বসায় উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার আগেই ঢাকায় পোশাক কারখানায় যোগ দেন। কিন্তু মানিয়ে নিতে না পেরে মির্জাপুর গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। বাবার দেওয়া কিছু পুঁজি নিয়ে মুদি দোকান দেন। পাশাপাশি ছোট পরিসরে বিভিন্ন ফলের নার্সারি শুরু করেন।

তিনি জানান, পরে নলডাঙ্গা কৃষি অফিসের মাধ্যমে সুযোগ হয়ে উঠে পলিনেট হাউজের মাধ্যমে উন্নত জাতের সবজি চারা উৎপাদনের ভালো সাড়া পান। এখন তার পলিনেটে ১০ জন লোকের কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা হয়েছে। পরিবার নিয়ে ভালো দিন কাটছে। পলিনেট হাউজ থেকে উৎপাদিত চারা নিয়ে উপজেলা কৃষি মেলায় টানা তিনবার (২০২৩-২৪) পুরস্কার পান। এই পুরস্কারের ফলে তার উৎসাহ বেড়ে যায়। সরকারি খরচে ২০২৩ সালে ২৭ শতক জমিতে তাকে পলিনেট হাউস তৈরি করে দেওয়া হয়। শুরু করেন আধুনিক পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন। লিজকৃত জায়গাতে এই পলিনেট হাউজ ছাড়িয়ে আরো এখন সে তিন বিঘা বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বিভিন্ন সবজি ও ফল ও ওষধি চারা উৎপাদন করে থাকেন।

ইলিয়াছ শেখ আরও বলেন, চারা উৎপাদনে বৈরী আবহাওয়া সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। পলিনেট হাউসে সারা বছরই চারা উৎপাদন সম্ভব। রোগবালাই ও পোকামাকড়ের উপদ্রব কম হয়। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

প্রথম দিকে সাত প্রজাতির সবজির চারা উৎপাদনের মধ্য দিয়ে শুরু করলেও এখন তিনি ফুল, ফল, সবজি ও ঔষধি মিলে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ জাতের চারা উৎপাদন করেন। মানসম্মত চারা সরবরাহ করে তিনি এর মধ্যে কৃষকের মন ছুঁয়েছেন। তাই নার্সারির নামও দিয়েছেন ‘মনছোঁয়া পলিনেট হাউস অ্যান্ড নার্সারি’।

নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. কিশোয়ার হোসেন বলেন, এই পলিনেট হাউজ ব্যবস্থা স্থাপনে সরকারের ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৭ লাখ টাকা, যা সরকারি প্রকল্পের তত্তাবধানে বিদেশি টেকনিশিয়ান দ্বারা বানানো। যা এই কৃষক ইলিয়াস পেয়েছেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। ইলিয়াস ছোট একটি মুদি দোকান করতো পাশাপাশি কৃষি বিষয়ে আগ্রহী দেখে আমরা তাকে পলিনেটের ব্যবস্থা করি। বর্তমানে সে আমাদের পরামর্শে ও নিজের প্রচেষ্টায় অনেক দূর এগিয়ে।

ইলিয়াস শেখের পলিনেট হাউজের এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত সকল চারা পোকা মাকড়ের আক্রমণ থেকে নিরাপদ, বিষ মুক্ত মাটি মুক্ত এই ব্যবস্থাপনায় চারা চাষে কৃষক যেমন রোগ মুক্ত চারা চাষ করে অর্থ সাশ্রয়ী হবে রোগ মুক্ত ভেজাল মুক্ত সঠিক চারা রোপণ করতে সক্ষম হবে।

এ ছাড়া এই পলিনেটের মাধ্যমে সবজি, ঔষধি, ফুল ফলের চারা সকল তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রক হিসাবেও কাজ করবে। এতে সারা বছরই উন্নত ধরনের নিরাপদ চারা ও অসময়ের ফল ফসল উৎপাদন করতে কৃষকে ব্যাপক লাভবানের মুখ দেখাবে। এখানকার চারা চাষ করে স্বল্প জমিতে অধিক ফসল উৎপাদন করতে কৃষক সক্ষম হবে।