৭ মাসে কুমিল্লা ইপিজেড ৬১৬ মিলিয়ন ডলার পণ্য রপ্তানি করেছে

কুমিল্লা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫, ০২:২৫ পিএম

৭ মাসে কুমিল্লা ইপিজেড ৬১৬ মিলিয়ন ডলার পণ্য রপ্তানি করেছে

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

কুমিল্লা রপ্তানি প্রক্রিয়াকর এলাকা (কুমিল্লা ইপিজেড) থেকে এই অর্থবছরে গত সাত মাসে জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত ছয়শত সাড়ে ষোল (৬১৬.৫) মিলিয়ন মার্কিন ডলার পণ্য সামগ্রী রপ্তারি হয়েছে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা এক হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার হলেও সূচক বলছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরো বেশি রপ্তানি আয় হবে। অপর দিকে অর্থবছরে একই সময়ে বিনিয়োগ হয়েছে সাড়ে ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

পরিসংখ্যান বলছে, গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) রপ্তানি আয় হয়েছে ৭১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, বিনিয়োগ হয়েছে ২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বেপজা সূত্র থেকে জানা যায়, কুমিল্লা নগরীর পুরাতন বিমান বন্দর এলাকায় ২০০০ সালে ২৬৭.৪৬ একর জায়গা নিয়ে কুমিল্লা ইপিজেড প্রতিষ্ঠিত হয়।

বর্তমানে কুমিল্লা ইপিজেডে ৪৮ টি শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যার মধ্যে সম্পূর্ণ বিদেশি মালিকানাধীন ২৯টি, দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানায় ৭টি এবং দেশি উদ্যোক্তাদের মালিকানায় ১২টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কুমিল্লা সহ দেশের অর্থনীতিতে আলোর মশাল জ্বালিয়ে দিন দিন সমৃদ্ধির পথেই হাটছে রাষ্টায়াত্ব প্রতিষ্ঠানটি।

ভৌগোলিকভাবে কুমিল্লা শহরের দক্ষিণ অংশে অবস্থান করলেও বর্তমানে ইপিজেডকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা নগরীর ওই অঞ্চলটি অন্যতম উন্নয়নশীল এলাকা হিসেবে গড়ে উঠেছে। অবকাঠামো, ব্যবসা-বাণিজ্য, হাসপাতাল, রেস্টুরেন্ট, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কি নেই এলাকাটিতে। পতিত জমি সহ ভূমির মূল্য বেড়েছে শতগুণ। কুমিল্লা সহ বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলের হাজার হাজার বেকার অদক্ষ শ্রমিকেরা ইপিজেডে চাকরি করে নিজেদেরকে দক্ষ শ্রমিক হিসেবে গড়ে তুলার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে নিজেদের সুরক্ষিত করেছেন। দেশের বোঝা না হয়ে হয়েছেন দক্ষ মানবসম্পদ।

কুমিল্লা ইপিজেড সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ৫০ হাজারের অধিক শ্রমিক, কর্মচারী-কর্মকর্তার কর্মসংস্থান হয়েছে সেখানে। তাদের মধ্যে দুইশ ৭০ জন বিদেশি নাগরিকও রয়েছেন। পুরো কর্মীদের ৬৬ শতাংশ নারী যা এ অঞ্চলে নারীর ক্ষমতায়ন, দক্ষতা ও উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। তাছাড়া, নির্মাণ শ্রমিক, লোডিং-আনলোডিং শ্রমিক, গার্বেজ শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক হিসেবে প্রায় দুই থেকে তিন হাজার লোক দৈনিক চুক্তিভিত্তিক কাজ করে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে কুমিল্লা ইপিজেড প্রতিমাসে বেতন ভাতা বাবদ ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করে থাকে। এই ২০০ কোটি টাকা স্থানীয় অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।

কুমিল্লা ইপিজেডের এখন পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত বিনিয়োগের পরিমাণ ৬০৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ক্রমপুঞ্জিত রপ্তানির পরিমাণ ৬,৮১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

কুমিল্লা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহবুব জানান, কুমিল্লা ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবছর ৭০০ থেকে ৭৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে এসেছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮৫০০ থেকে ৯০০০ কোটি টাকার সমান। এই রপ্তানি আয়ের একটি বড় অংশ শ্রমিকদের বেতন ও ভাতায় ব্যয় করা হয়, যা দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের পাশাপাশি শ্রমিক-কর্মচারীদের সন্তানদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বেপজা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একদিকে যেমন ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের সন্তানদের ৫০% খরচে মানসম্পন্ন শিক্ষার সুযোগ প্রদান করছে, তেমনি স্থানীয় জনগণের সন্তানদের জন্যও স্বল্প খরচে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

এই উদ্যোগ কুমিল্লা অঞ্চলের শিক্ষার মানোন্নয়নে অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছে এবং শিক্ষার্থীদের আলোকিত ভবিষ্যতের পথ সুগম করছে। কুমিল্লা ইপিজেড মেডিকেল সেন্টারে ইপিজেডের সকল শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিনামূল্যে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে। বিনামূল্যে ঔষধ এবং নামমাত্র মূল্যে বিভিন্ন পরীক্ষাও সহ রয়েছে জরুরি অ্যাম্বুলেন্স সেবাও।

তিনি আরও জানান, প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় কুমিল্লা ইপিজেড বদ্ধ পরিকর। প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় শিল্প-প্রতিষ্ঠানসমূহ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণপূর্বক তাদের উৎপাদন শুরু করেন। যে সকল শিল্প-প্রতিষ্ঠানে তরল বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন করার আবশ্যকতা ছিল সে সকল শিল্প-প্রতিষ্ঠান নিজস্ব তত্বাবধায়নে তরল বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন করা সাপেক্ষে তাদের প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করে। তরল বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন ব্যতিরেকে শিল্প-প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার কোন সুযোগ পরিবেশ অধিদপ্তর এবং ইপিজেড কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোন শিল্প-প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়নি।

তা ছাড়া শিল্প-প্রতিষ্ঠানসমূহের তরল বর্জ্য এর পাশাপাশি সুয়ারেজ বর্জ্য পরিশোধন ও পরিশোধন কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে পরিদর্শনের জন্য ইপিজেড কর্তৃপক্ষ একটি সার্ভিস ওরিয়েন্টড কোম্পানি সিগমা ইকো-টেক লি: এর সাথে ২০১১ সালে চুক্তি সম্পাদনের পর ২০১৫ সাল থেকে ইপিজেডের সকল তরল বর্জ্য এবং সুয়ারেজ বর্জ্য সংগ্রহপূর্বক পরিশোধন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

সিইটিপির বিভিন্ন প্যারামিটারের (pH, TDS, TSS, BOD, COD, Conductivity, Temperature, Flow rate) রিয়ালটাইম মনিটরিং করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী GIZ কর্তৃক সেন্সরসহ ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে যা পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়, ঢাকা হতে লাইভ মনিটরিং করা হয়। তাছাড়া বেপজা, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সরকার (জেলা প্রশাসন) দ্বারা আইপি ক্যামেরার মাধ্যমে সিইটিপির অপারেশনাল কার্যক্রম সম্মিলিত অনলাইন পর্যবেক্ষণ করা হয়।

আরবি/এসআর

Link copied!