আওয়ামী লীগের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ সংসদীয় এলাকা গোপালগঞ্জ-৩ (কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়া) আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই জনমনে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন। এই আসনে জামায়াত তাদের প্রার্থী হিসেবে অধ্যাপক রেজাউল করিমের নাম ঘোষণা করেছে।
শনিবার দলের পক্ষ থেকে অধ্যাপক রেজাউল করিমের নাম ঘোষণা করা হয়। তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গোপালগঞ্জ জেলার আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
অধ্যাপক রেজাউল করিমের নাম ঘোষণার পর বিভিন্ন রাজণৈতিক দল ও সাধারণ ভোটারদের মাঝে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না আসলে সেক্ষেত্রে এই আসেন চমক দেখাতে পারেন জামায়াত। এমনটাই মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ -৩ আসন থেকে টানা ৮ বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এই আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে তিনি ৫ বার প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করেন।
এদিকে ৮ বারের এই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিপক্ষে যারা নির্বাচন করেছেন তারা সকলেই তাদের জামানাত হারিয়েছেন। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হতে পারে বলে এই সংসদীয় এলাকার ভোটাররা মনে করছেন।
যদি আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনা নির্বাচনে না আসে তাহলে এখানে জামায়াত ইসলামের অধ্যাপক রেজাউল করিমের সাথে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এস এম জিলানীর লড়াই হতে পারে। কেননা গোপালগঞ্জ-৩ আসনে এই দুই প্রার্থী ছাড়া অন্য কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীকে এখনও মাঠে পাওয়া যায়নি। তবে আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনা নির্বাচনে না আসলেও যদি তাদের সমর্থিত কোন প্রার্থী সতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করে তাহলে ভোটের হিসেবে নিকেশ পাল্টে যেতে পারে।
গোপালগঞ্জ-৩ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লক্ষ ৯০ হাজার ৩০০। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ৬৯১ ও নারী ভোটার ১ লক্ষ ৪১ হাজার ৬০৯। এরমধ্যে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২ লক্ষ ৪৯ হাজার ৯৬৫ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সংসদ নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদন্দ্বী বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির এম নিজাম উদ্দিন লস্কর (একতারা) পেয়েছিলেন ৪৬৯ ভোট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শেখ আবুল কালাম (আম)পেয়েছিলেন ৪৬০ ভোট, জাকের পার্টির মাহাবুব মোল্লা (গোলাপ ফুল) পেয়েছিলেন ৪২৫ ভোট, বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির শহিদুল ইসলাম মিটু (ডাব)পেয়েছিলেন ১২২ ভোট, গণফ্রন্টের সৈয়াদা লিমা হাসান (মাছ) পেয়েছিলেন ৮৬ ভোট।
আওয়ামী লীগের দুর্গ বলে পরিচিত এ আসনে ৫ আগষ্টের পরে অধিকাংশ দলীয় নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যায়। এ্ররই মাঝে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজনৈতিকভাবে কিছুটা সরব হলেও নিরবে মাঠে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে জামায়াতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। এ সকল নেতাকর্মীরা তাদের প্রিয় নেতা অধ্যাপক রেজাউল করিমকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করায় আনন্দ প্রকাশ করেছেন।
কোটালীপাড়া উপজেলা জামায়াতের আমীর সোলায়মান গাজী বলেন, গোপালগঞ্জ-৩ (কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়া) আসন থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক রেজাউল করিমকে জামায়াতের প্রার্থী করায় আমরা দলীয় নেতাকর্মীরা খুশি ও আনন্দিত। আমরা ইতিমধ্যেই আমাদের দলীয় কাজ শুরু করে দিয়েছি। এরই অংশ হিসেবে আগামী ১ মার্চ কোটালীপাড়া উপজেলায় আমাদের প্রার্থীকে সাথে নিয়ে একটি মটর শোভাযাত্রা করা হবে।
কোটালীপাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এস এম মহিউদ্দিন বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোপালগঞ্জ-৩ (কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়া) আসনে আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এস এম জিলানী। আমরা তার পক্ষে কাজ করে যাচ্ছি।