ঢাকা সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

‘‌গোপালগঞ্জের মানুষ আর নৌকায় ভোট দিবে না‍‍`

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫, ০৬:১১ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বিএনপি‘র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি ড. আসাদুজ্জামান খান রিপন বলেছেন, যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে গোপালগঞ্জের মানুষ আর নৌকা মার্কায় ভোট দিবে না। কারণ অতীতে তারা  নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন।  গোপালগঞ্জ না কি নৌকা মার্কার ঘাটি।

কিন্তু নৌকা মার্কা গোপালগঞ্জবাসীকে কি দিয়েছে? এখানে একজন পুলিশের আইজিপি ছিলেন বেনজীর আহমেদ। তিনি এখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি জোরজবরদোস্তি করে দখল করে খামার করেছেন। বাংলাদেশের জনগনের লুটের টাকায় জনগনকে জিম্মি করে লুট, গুম, খুন করেছিলেন পুলিশের এই সবোর্চ্চ ব্যক্তিটি। হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধ ভাবে কামিয়েছিলেন। গোপালগঞ্জে তিনি একটা জমিদারী ব্যবস্থার জন্য চেষ্টা চালিয়েছিলেন। অবৈধ টাকায় মানুষের চোখের পানিতে তিনি সম্পদ অর্জন করেছেন। ঢাকার ভূমি দস্যুদের মতো একটু বালু ফেলে সংখ্যালঘুদের জমি দখল করেছেন।

সোমবার দুপুরে আড়াইটায় স্থানীয় পৌরপার্কের মুক্ত মঞ্চে জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোন উপদেষ্টা যদি বলেন আগে স্থানীয় নির্বাচন হবে। তারপর জাতীয় নির্বাচন। আবার কোন কোন দল বলছে আগে শেখ হাসিনার বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগের বিচার শেষ করে নির্বাচন করতে হবে। আওয়ামী লীগ কত বছরে জামায়াতের নেতাদের বিচার করে ফাঁসি দিয়েছে। তাতে ৫/১০ বছর সময় লেগেছে। তাহলে কি আমরা নির্বাচনে জন্য ৫ বছর ১০ বছর অপেক্ষা করবো? এমনিতেই তো আপনারা পারছেন না। স্বরাষ্ট উপদেষ্টা রাত ৩ টার সময় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন। দেশে একটা নির্বাচিত সরকার না থাকার কারণে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে দাম সাধারণ মানুষের নাগালে বাইরে চলে গেছে। চুরি, ডাকাতি আর রাহাজানি বেড়ে গেছে।

তিনি আরো বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে যে সব ডিসি, এসপি ও ওসি রাতের ভোটে সহায়তা করেছে তাদের কেন এখনও পোষা হচ্ছে। তাদেরকে এখনো চাকরী থেকে বাদ দেয়া হয়নি। ভুত সরকারের মধ্যে রেখে কখনও গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। তাই ওই সব কর্মকর্তাদের চাকরী থেকে বাদ দিতে হবে। আমাদের একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে হবে। একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। রাজনীতি হানাহানি মারামারি, শক্রুতা রাখা যাবে।

ড. আসাদুজ্জামান খান রিপন বলেন, আমরা ছোট বেলায় শুনেছি চোর পালালে না কি বুদ্ধি বাড়ে। আমাদের সরকারের অবস্থা হয়েছে তাই। মাঝে মধ্যে দেখি ওমুককে দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু তার আগেই পগারপার।এগুলো ফাজলামি না কি অন্য কিছু। আমরা স্পষ্ট জানতে চাই এই যে আওয়ামী লীগের দোসররা যারা জনগনের সম্পদ লুটপাট করেছে, যারা খুন গুমের সাথে জড়িত, যারা দুর্নীতি করেছে এই দুর্নীতিবাজ সাবেক এমপি মন্ত্রীরা কোথায় আছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, এই সরকারে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি ও তাদের দোসরদের পালাতে সাহায্য করেছেন। এখন মাঝে মাঝে শুনি দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা। এই সব নাটক বন্ধ করেন। আমরা চাই তাদেরকে ধরতে হবে।তাদেরকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এখানে কোন নাটক করা চলবে না। অনেক না্টক হয়েছে।

তিনি বলেন, ১৬ বছর আমরা মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেছি। বাংলাদেশে আমরা গনতান্ত্রিক সরকার গঠন করতে চেয়েছিলাম। এখনও বিএনপি জনগনের ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করতে চাই। তাই এই সরকারের উচিত হবে ধানাইপানাই বাদ দিয়ে নির্বাচন দেয়া। 
নির্বাচন বিলম্বিত করতে ষড়যন্ত্র হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি অবাধ নিরপেক্ষ ভোট হয় তাহলে বিএনপি সেই নির্বাচনে জিতবে। এই নির্বাচনটা যাতে বাঁধাগ্রস্ত হয়, বিলম্বিত হয় তার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে।

দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজারে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ঘাটিতে হামলা হয়েছে। এটা কি স্বাভাবিক ঘটনা। এখন তো দেশে সরকার আছে।খোদ বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ঘাটিতে হামলা হয়েছে। পাকিস্তানে আমরা মাঝে মধ্যে শুনি ওখানে সেনাবাহিনী বিমানবাহিনী সহ নানা ঘাটিতে হামলার ঘটনা ঘটে। কিন্তু সে আলামত বাংলাদেশে কেন? এর কারণটা হচ্ছে বাংলাদেশে যাতে দ্রুত নির্বাচন না হয়। নির্বাচনকে বাঁধাগ্রস্ত করার জন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কিন্তু সেই ষড়যন্ত্রকে আমরা রুখে দিতে চাই।

তিনি বলেন, নেতা যখন দেউলিয়া হয়ে যায়, জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তখন তাকে স্বৈরাচারী হতে হয়, জুলুমবাজ হতে হয়। আর এটা হচ্ছে ফ্যাসিবাদ। ফ্যাসিবাদ কারো গায়ে লেখা থাকে না। এই ধরনের চরিত্র যাদের থাকে তারা জনগনকে বিশ্বাস করেন। আর ৫ আগস্টে ফ্যাসিবাদীর পতন ঘটেছে। কিন্তু তাদের দোসররা নানা জায়গায় আছে।

প্রধান বক্তা জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেছেন, তারেক জিয়ার ৩১ দফা গোপালগঞ্জের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দিতে হবে। গত ১৬ বছরে যত গুম হয়েছে খুন হয়েছে হাসিনা অর্ডারে হয়েছে। হাসিনার অর্ডারে গুলি করা হয়েছে। হাসিনার অর্ডারে আয়না ঘরে আটকে নির্যাাতন করা হয়েছে। আজকে এর প্রত্যেকটা ঘটনার বিচার এ দেশের মাটিতে হতে হবে। গোপালগঞ্জের মাটি আমরা মনে করি ধানের শিষের ঘাটি। গোপালগঞ্জে যারা আওয়ামী লীগ করতো তারাও কিন্তু হালুয়া রুটির ভাগ পায়নি।

তিনি আরো বলেন, শেখ পরিবার পলালো কিভাবে? ইউনুস সাহেববে জবাব দিতে হবে। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে এদেশ থেকে চলে গেলো কিভাবে? এই গোপালগঞ্জের মানুষ যারা অন্ধের মতো নৌকা ভোট দিতো তারাও এখন বলতে শুরু করেছে পলায়ছে বাঁচছি। এখন সব ধানের শিষে ভিড়ছে।

শামা ওবায়েদ বলেছে, ইউনুস সরকার ডেভিল হান্ট শুরু করেছে। গোপালগঞ্জে অনেক ডেভিল রয়েছে। তাই আমি গোপালগঞ্জ থেকে ডেভিল হান্ট শুরু করার জন্য বলবো। কারণ ৫ আগস্টের পরেও গোপালগঞ্জে আমাদের কেন্দ্রীয স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানীর উপর হামলার ঘট না ঘটেছে।
গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপি‘র আহবায়ক শরীফ রফিকুজ্জামানের সভাপতিত্বে সামাবেশে বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান, সেলিমুজ্জামান সেলিম,  কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, বিএনপি কেন্দ্রীয নির্বাহী কমিটির সহ আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন মিজবা, বিএনপি‘র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক এমএইচখান মঞ্জু, সাবেক জেলা বিএনপি‘র সাবেক সভাপতি এএইচএম শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীর,  সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, জেলা বিএনপি‘র সাবেক সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান পিনু, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক এম. তৌহিদুর রহমান তাজ, জেলা বিএনপি‘র সদস্য কেএম বাবর, জেলা যুবদলের সভাপতি শেখ রিয়াজ উদ্দিন লিপ্টন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মিকাইল হোসেন, সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনের  নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।  

এরআগে সকাল ১০ টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশ শুরু আগেই সমাবেশ কাণায় কাণায় পূর্ণ হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আসার পরও বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল সহকারে বিএনপির নেতাকর্মিরা সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হন। আজ বিএনপি সমাবেশকে কেন্দ্র করে সারা শহর মিছিলের শহরের পরিণত।