জনবল সংকটে লালমনিরহাট রেলওয়ে হাসপাতালের সেবা বন্ধ

সজীব আলম, লালমনিরহাট

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৫, ০৬:৩৭ পিএম

জনবল সংকটে লালমনিরহাট রেলওয়ে হাসপাতালের সেবা বন্ধ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

একসময় রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় রোগীদের ভিড়ে মুখরিত থাকতো ৩২ শয্যাবিশিষ্ট লালমনিরহাট রেলওয়ে হাসপাতাল। কিন্তু দীর্ঘদিন অবহেলা ও অযত্নে পরিত্যক্ত থাকায় এই হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান বর্তমানে বেহাল দশায় পরিনত হয়েছে। উন্নত চিকিৎসা বা বৈজ্ঞানিক কোনো যন্ত্রপাতি না থাকায় বেসরকারি  হাসপাতালের দিকে ঝুঁকছে রোগীরা। ফলে চিকিৎসায় একপ্রকার বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে রোগীদের।

জানা গেছে, সপ্তাহে সামান্য কিছু রোগী হাসপাতালটির বহি-র্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। আর ইনডোরের অবস্থা খুবই শোচনীয়। বর্তমানে ইন্ডোর চিকিৎসাসেবা বন্ধের উপক্রম হয়ে এসেছে। আউটডোর ও জরুরি চিকিৎসাসেবা চালু থাকলেও সেটি চলে নামে মাত্র। ৩২ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালটিতে মাঝে মধ্যে দু-এক জন রোগী ভর্তি  হন।

রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয়রা জানায়, লালমনিরহাট রেলওয়ে হাসপাতালে চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে তাদের এই হাসপাতালের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতির জন্য ভবন সংকট চিকিৎসক ও জনবল সংকটকে দায়ী করেছেন তাঁরা।  এমতাবস্থায় অবিলম্বে জনস্বার্থে হাসপাতালের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী (৫৪) বলেন, হাসপাতালের ভেতরে  অধিকাংশ দরজা তালাবদ্ধ থাকে।  মাঝে মাঝে  খোলা হলেও হাসপাতালে  তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। হঠাৎ কখনো তালা খোলা থাকলেও ভেতরে গিয়ে দেখা যায় মাঠে গরু-ছাগল চড়ানো হচ্ছে। হাসপাতালের ভেতরের অধিকাংশ দরজায় তালা ঝুলানোর কারণে ভূতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৩২ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে নারীদের জন্য ১০টি ও পুরুষদের জন্য ২০টি বেড রয়েছে সেই সাথে কর্মকর্তাদের জন্য ২টি বেড রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালটিতে চিকিৎসক রয়েছে মাত্র ১ জন, সিনিয়র স্টাফ নার্স রয়েছে ১ জন ও অন্যান্য কর্মচারী রয়েছে ৩ জন। হাসপাতালে নেই একজন রোগীও। কর্মরত নার্সের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালে বর্তমানে একজন রোগী ভর্তি রয়েছে তাও আবার তিনি নিজ বাড়ি থেকে এসে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন।

ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই হাসপাতালের ভবনের ছাদ ও ওয়ালে ফাটল ধরেছে। জানালা-দরজার অবস্থাও তেমন ভালো না। পাকা ছাদ বিধ্বস্ত, ইটের ফাঁকে ফাঁকে আগাছায় ভর্তি, এগুলো যেন দেখার কেউ নেই। হাসপাতালের ভবনের ভেতরে বা বাইরের পাশ দিয়ে  চলতে গেলেও গা শিউরে ওঠে। দেখে মনে হয় ভুতুড়ে বাড়ি। পরিত্যক্ত ও বিধ্বস্ত মেডিকেল ভবনে অনেকটাই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই কয়েকজন কে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য বসে থাকতে দেখে গেছে। শুধুমাত্র রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের রক্ষণাবেক্ষন ও গুরুত্বের অভাবে মেডিকেল সেক্টরটির এমন অবস্থা বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

লালমনিরহাট কেন্দ্রের সিনিয়র স্টাফ নার্স রোকসানা বেগম (৪৫) বলেন, মেডিকেলটি সচল থাকা অবস্থায় রোগী প্রচুর আসতো। এখন চিকিৎসক নেই, তাই রোগীও আসে না। অথচ যত জায়গা আছে তাতে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল করা সম্ভব। এটি সচল করা গেলে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি এ জেলার হাজার হাজার মানুষের চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হবে। হাসপাতালটিকে সচল করতে সরকারের কাছে দাবিও জানান তিনি।

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রেডিওগ্রাফীতে কর্মরত হুমায়ুন কবির (৪০) বলেন, যখন মেডিকেলের কার্যক্রম ভালো ছিলো ঠিক সেই সময় অধিকাংশ রোগী ওষুধের জন্য ও প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য আসতেন। বর্তমানে ইনডোরের চিকিৎসা সেবা নেই বললেই চলে। হাসপাতালটিতে কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে জরুরীভিত্তিতে আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ রেলওয়ে লালমনিরহাট ডিভিশনাল মেডিকেল অফিসার ডা. মাহফুজ ইফতেখার ভূঞা বলেন, এ হাসপাতালটির বৃটিশ আমলের মঞ্জুরিকৃত পদগুলো ঢেলে সাজানো দরকার। এতে সরকারের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার যে মূল লক্ষ্য তা বস্তাবায়ন হবে। চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত। এমতাবস্থায় অনতিবিলম্বে জনস্বার্থে হাসপাতালের সমস্যাগুলো সমাধানে জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

বাংলাদেশ রেলওয়ে লালমনিরহাটের ডিভিশনাল  ম্যানেজার লিয়াকত শরীফ খান সাংবাদিকদের বলেন, জনবল বাড়ানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় জনবল পেলে হাসপাতালটি সচল হয়ে উঠবে। স্বাস্থ্যসেবা সুনিশ্চিত করতে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা চালিয়ে যাচ্ছি।  কিছুদিনের মধ্যেই জনবল সংকট ও বর্তমান সমস্যা গুলো সমাধানের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ গুরুত্বের সঙ্গেই দেখবেন।

আরবি/জেডআর

Link copied!