ঢাকা মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

শিষ্যদের নিয়ে খালি পায়ে আগুনে হাটলেন বেল্লাল ফকির

মনিরুজ্জামান শেখ জুয়েল, গোপালগঞ্জ
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫, ০২:১৯ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

গভীর রাতে দশ শিষ্যকে নিয়ে খালি পায়ে উত্তপ্ত আগুনে হাটলেন গুরু। সকালে আবার ঘন্টাব্যাপী ভাসলেন পানিতে। শতশত ভক্তবৃন্দ তাকিয়ে দেখলেন গুরু শিষ্যদের এই কীর্তি। প্রতি বছরই মাঘী পূর্ণিমার ৭ দিন পরে এমন দৃশ্য দেখা যায় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার তারাশী গ্রামের বেল্লাল ফকিরের বাড়িতে।

শুধু বেল্লাল ফকিরই নয়, তার ৭ পূর্বপুরুষ এভাবেই মাঘী পূর্ণিমার ৭ দিন পর নিজ বাড়িতে উরসের দিনে এভাবে ভক্তদের নিয়ে আগুনে হেটেছেন পানিতে ভেসেছেন এলাকাবাসী জানিয়েছেন ।

আজ মঙ্গলবার সকাল সরেজমিনে বেল্লাল ফকিরের বাড়িতে গিয়ে কয়েকজন শিষ্যকে নিয়ে বেল্লাল ফকিরকে নিয়ে ভাসতে দেখা যায়। এ সময় পুকুরের চারপাশে উৎসুক শতশত নারী-পুরুষ এ দৃশ্য দেখেন।

এর আগে সোমবার দিবাগত রাতে বেল্লাল ফকির তার দশ শিষ্যকে নিয়ে উত্তপ্ত আগুনের মধ্যে দিয়ে হাটেন। এই অগ্নিকুন্ডলী তৈরীকে কেন্দ্র করে সন্ধ্যা থেকেই
চলে নানা আয়োজন।

বাড়ির উঠানে বড় আকৃতির একটি গর্ত করা হয়। এরপর এই গর্তের উপর সাজিয়ে রাখা হয় কয়েক মন শুকনো চলা। এই চলা পুড়ে যখন কয়লা হয় তখন সেই উত্তপ্ত কয়লার উপর দিয়ে বেল্লাল তার শিষ্যদের নিয়ে হাটেন।

এদিকে উরস উপলক্ষে এ রাতে বেল্লাল ফকিরের বাড়িতে চলে বাউল ও পালা গান। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিল্পী ও ভক্তবৃন্দ আসে বেল্লালের বাড়িতে।
গানবাজনার সাথে রাতভর চলে খানাপিনা।

মাদারীপুর থেকে আগত বেল্লাল ফকিরের শিষ্য আহমেদ ফকির বলেন, আমি ৩০ বছর ধরে আমার গুরুর সাথে আগুনের মধ্যে দিয়ে হাটি। এতে আমার পায়ের কোন ক্ষতি হয় না। প্রতি বছর এই দিনে গুরুর সাথে থেকে অনেকেই আগুনে হাটেন ও পানিতে ভাসেন তাতে কারোই কোন ক্ষতি হয় না।

বরিশাল থেকে আগত গৃহবধু নাসরিন আক্তার বলেন, আমার ছোট বেলায় একটি রোগ হয়েছিল। তখন বাবার সাথে আমি বেল্লাল ফকিরের কাছে আসি। এখানে আসার পরে তার চিকিৎসায় আমার রোগ ভালো হয়। এরপর থেকে প্রতিবছরই আমি আমার সন্তানসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে উরসের দিনে এখানে আসি। আমার মত এখানে যে যে মানত করে আসে তার সেই মানত পূর্ণ হয়। তারাশী গ্রামের আমির শেখ বলেন, বেল্লাল ফকিরের বাৎসরিক এই উরস যাতে সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয় গ্রামের সবাই মিলে সহযোগিতা করি।

বেল্লাল ফকির বলেন, আমার ৭ পুরুষ এভাবেই মাঘী পূর্ণিমার ৭ দিন পরে উরস করে আসছে।আমি ছোটবেলা থেকে আমার পূর্বপুরুষদের এভাবেই আগুনের মধ্যে দিয়ে হাটতে ও পানিতে ভাসতে দেখেছি। আমার বাবার কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে গত ৫৫ বছর ধরে আমিই পারিবারিক ঐতিহ্যবাহী এই উরস পালন করে আসছি।সারাদেশ থেকে অসংখ্য ভক্ত, দর্শণার্থী রোগমুক্তিসহ বিভিন্ন মানত নিয়ে এখানে আসে। সাথে করে নিয়ে আসে চাল, ডাল, হাস, মুরগিসহ নানা সামগ্রী। যে যেই মানত করেন আল্লাহর রহমতে তাদের সে সকল মানত পূর্ণ হয়।