ছোট বেলা থেকেই এই কাজের সাথে জড়িত। কিন্তু কোন দিনই দেখলাম না আমাদের পাশে কেউ দাড়িয়েছে। পাল পাড়ার কারিগরদের পাশে নেই কোন সরকারি লোক বা এনজিও। কাজ না করলে এ শিল্পের লোকজনের পেটে ভাত যায় না। কাজ করলে পেটে ভাত বিক্রি না হলে মাথায় হাত। কথাগুলো বলেছেন, রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলা চন্তিপুর পাল পাড়া গ্রামের মৃৎশিল্পের শ্রমিকরা।
উমরপুর ফলির বিল কারখানার মালিক প্রফুল্ল চন্দ্র বিনয়ের সাথে জানান, ব্যবসার শুরুতেই ২ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে কাজে নেমেছি আবহাওয়া ও বেচা কিনারা উপর নির্ভর করবে এই ব্যবসা। আর এই শিল্পের লোকজনের দূর দিনের খবর কেউ নিতে চায় না। এখন এই শিল্পের বড় দূর দিন কাটছে। জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য এই কর্ম ধরে রেখেছে পাল পাড়ার লোকজনরা। প্লাস্টিক এর জিনিসপত্র আমাদের এই কাজের চাহিদা কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে। তারপরও কেউ বসে নেই। সঞ্চয় জমা করা না গেলেও কোনরকমে সংসার চলে। এ এলাকায় অনেকগুলো কারখানা ছিল বর্তমানে বাজার ঘাটে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে শুধু আমাদের দাম বাড়ে নাই । তার পরেও থেমে থেমে দিন কাটে।
বৃহস্পতিবার রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা ঘুরে দেখাযায় খালাশপীর ও তার আশপাশে ৪ টি স্থানে প্রায় ৩০ জন শ্রমিক মৃৎশিল্পের মাটির তৈরি মটকি তৈরি করছে। কারখানায় এই শিল্পের কারিগরদের নিপুণ হাতের তৈরি এই মটকি। অলসতার বালাই নেই তাদের কর্মে। সরকার ভাবে কোন সুযোগ সুবিধা না পেলে অন্ধকার নেমে আসবে এই শিল্পে।
খালাশপীর কামার পাড়া মটকির কারখানার মালিক অজয় পাল জানান, এখন সব কিছুই কিনতে হয়। আগের দিনে আমরা মাটি এমনিতেই পেতাম, বর্তমানে জমির মালিকে আগাম টাকা দিয়ে রাখতে হয়। টাকা না দিলে কেউ মাটি দিতে চায় না। কারখানার শ্রমিকদের মজুরি প্রতিদিন দিতে হয়। তাদেরকে মিটিয়ে নিজের সংসারের খবর নিতে হয়। মৃৎশিল্পের কারিগরদের পরিবর্তন আসছে না। কাজের উপর নির্ভর করে তাদের সংসার চলে।
বাবনপুর গ্রামের ভোবাতী চন্দ্র বলেন, দক্ষ কারিগর দিয়ে এই শিল্পের কাজ করা হয়। একটু খানিক গরমিল হলে মটকি তৈরি করা যাবে না। মনযোগ দিয়ে কাজ করতে হয়। আর এ কাজে গাফলতির কোন সুযোগ নেই। অফিস পাড়ায় ঘুষের কারবার চলে এখানে কোনো ঘুষের কারবার নেই। একজন শ্রমিক দুই দিনে ৬ জোড়া বা (১২ টি) মটকি তৈরি করা। কাজে অমনোযোগী হলে তাদের লস হবে সেই কারনে তারা সবসময়ই মনযোগ দিয়ে কাজ করে।
খালাশপীর এলাকার আখ চাষি আমজাদ হোসেন, রুবেল মিয়া এবং মোজাফফর আলী জানান, বর্তমানে এ অঞ্চলের আখের আবাদ কমে গেছে। একসময় এখানকার জনপ্রিয় আবাদ ছিল আখ। আর সেই সময় প্রচুর পরিমাণ আখের গুড় তৈরি করা হতো এবং এলাকার প্রতিটি ঘরে ঘরে গুড়ের মটকির দেখা মিলতো। কালের পরিবর্তনে আখ চাষ কমে গেছে। এখন খালাশপীর, উমরপুর,খয়ের বাড়ি, কাদিরাবাদ, বড় আলমপুর এলাকায় আখ চাষ করা হয়। আর অধিকাংশ চাষিরা আখ থেকে গুড় উৎপাদন করে এবং সেই গুড় রাখার পাত্র বা মটকি পাল পাড়ার লোকজন তৈরি করে থাকে।
পৌষ মাস থেকে শুরু করে চৈত্র মাস পর্যন্ত এই শিল্পের কাজ চালে। মাটির মটকিতে গুড় মজুদ রাখলে ভালো থাকে এবং দানা পরে। অন্য পাত্রের চেয়ে মাটির মটকিতে গুড় রাখতে সুবিধা হয়। তাছাড়া এই মাটির পাত্রে গুড় রাখলে অনেক সুবিধা রয়েছে। প্রতিটি মটকিতে ১ মন বা (৪০ কেজি) গুড় রাখা যায় আর গুড়ের সাথে পাত্র বা মটকিসহ বিক্রি করা হয়। গুড় উৎপাদন কারিরা ২ শত টাকা দরে প্রতিটি মটকি বিক্রি করছে। মটকিতে কারিগরিদের এবং গুড় মজুদ কারিদের সুবিধা। কারন এখানে মটকির কারিগর বিক্রি করে টাকা উপার্জন করছে, আখ চাষিরাও মটকিতে গুড় মজুদ করছে।