ঢাকা বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

মান্দায় ৪ চিকিৎসকে চলছে ৫ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা

সাজ্জাদুল তুহিন, মান্দা, নওগাঁ
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫, ০৯:৫১ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

নওগাঁর মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। মাত্র তিনজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির কার্যক্রম। চিকিৎসক সংকটের কারণে সেবা বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলাবাসী। চিকিৎসক না থাকায় পাঁচ লাখের অধিক জনসংখ্যার চিকিৎসা সেবা দিতে নাজেহাল অবস্থা চিকিৎসকদের। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল থাকলেও চিকিৎসক সংকটে তার সুফল ভোগ করতে পারছে না উপজেলাবাসী।

জানা গেছে, নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে প্রসাদপুর বাজারে অবস্থিত ৫০ শয্যাবিশিষ্ট মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।  বৃহতম এই উপজেলাতে রয়েছে একটি মাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সেখানে রোগীরা প্রতিনিয়ত  চিকিৎসা নিতে যায়। চিকিৎসক না থাকায় ছোট ছোট সমস্যাতেও রোগীদের রেফার্ড করা হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানাগেছে, এখানে ২৪ জন মেডিকেল অফিসার থাকার কথা। যার বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ৮ জন চিকিৎসক। এই ৮ জনের মধ্যে অন্যত্র ডেপুটেশনে আছে ৪ জন। এখন আবাসিক কর্মকর্তাসহ হাসপাতালে রয়েছে মাত্র ৪ জন চিকিৎসক। ৩ জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে  উপজেলার ৫ লক্ষের বেশি জনসংখ্যার রোগীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা । এছাড়া স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রয়েছে কর্মস্থলে না থাকার অভিযোগ। হাসপাতালে রয়েছে ৩১ জন নার্স।

তবে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংকট রয়েছে। থাকার কথা ৫ জন রয়েছে ১ জন। আউটসোর্সিংয়ে রয়েছে ৭ জন। আয়া ও ওয়ার্ডবয় থাকার কথা ৫ জন রয়েছে ২ জন। প্রতিদিন ইনডোরে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫০ জনের অধিক। এছাড়া আউটডোরে গড়ে ৩৫০ জন ও ইমারজেন্সিতে গড়ে ১০০ জন বিভিন্ন বয়সী রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। এছাড়া নরমাল ডেলিভারী, সিজারিয়ান অপারেশনর ব্যবস্থাসহ রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা ব্যাবস্থা রয়েছে হাসপাতালটিতে।

স্থানীয়রা জানান, মহাসড়কের পাশে হাসপাতালটির অবস্থান হওয়ায় এর গুরুত্ব অনেক। মাঝেমধ্যে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে মহাসড়কে। আহতদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য সেখানে নেওয়া যায় সহজেই। কিন্তু চিকিৎসক যদি না থাকে তাহলে হাসপাতালে নিয়ে কী হবে? সেখান থেকে হয় নওগাঁ সদর হাসপাতাল অথবা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এতে অনেক সময় নষ্ট হয়। এ কারণে অনেক রোগী রাস্তাতেই মারা যায়।

হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও এলাকাবাসী জহুরুল ইসলাম জানান, আগে ডাক্তার ছিল, রোগীও ছিল। এখন ডাক্তার নেই। তাই রোগীও কম আসে। ডাক্তার কবে আসে, কবে চলে যায়, কিছুই বোঝা যায় না। এভাবে একটা হাসপাতাল চলে না। কয়েকদিন এসে খবর নিলাম স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নিজেও হাসপাতালে নিয়মিত আসেনা। যার কারণে হাসপাতালের আরো অচল অবস্থা। তিনি যদিও আসে আবার শহরে চলে যায়।

হাসপাতালের পাশেই বসবাস করেন রাকিবুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে ডাক্তার না থাকার কারণে চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। অতি দ্রুত উপজেলাতে চিকিৎসক সংকট দূর করতে হবে। এই উপজেলার অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। তারা চাইলেই শহরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেনা। চিকিৎসকরা যদি স্টেশন ছেড়ে না যায় তাহলে রোগীরা সময়মত চিকিৎসা সেবা পাবে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. তাসনিম হুসাইন আরিফ বলেন, আমিসহ মাত্র চারজন চিকিৎসক দিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিচালনা করতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। মর্নিং, ইভনিং, নাইট–তিন শিফট চালানো দুষ্কর হয়ে পড়ছে। বহির্বিভাগ, ইনডোর, আউটডোর ও ইমারজেন্সিতে রোগীদের অনেক চাপ রয়েছে। চিকিৎসক সংকটের কারণে রোগী নিয়ে অনেক সমস্যা হচ্ছে।

মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি উপরে জানানো হয়েছে। চিকিৎসক আসলেই এ সমস্যা আর থাকবেনা। কর্মস্থলে না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি হাসপাতাল থাকিনা রাজশাহী শহর থেকে নিয়মিত যাতায়াত করি।