ঢাকা বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

চোখের জলে বিদায় নিলেন প্রধান শিক্ষক মাহমুদা খাতুন

বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৫, ১২:২৪ পিএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মাহমুদা খাতুন শিক্ষার্থীদের দিয়েছেন জ্ঞানের দীক্ষা, মানুষের মতো মানুষ হওয়ার শিক্ষা। এই শিক্ষকের হাত ধরেই আজ কেউ চিকিৎসক, কেউ ব্যাংকার কেউবা আবার তার কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেই শিক্ষকতা করছেন। পেশার তাগিদে আজ তারা ছড়িয়ে আছেন দেশের বিভিন্ন জায়গায়। প্রিয় মাহমুদা স্যারের বিদায় বেলায় সেই শিক্ষার্থীরা ফের ফিরে এলেন বিদ্যালয়ের আঙিনায়।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে বন্ধন, তার সঙ্গে কোনও কিছুরই তুলনা হয় না। সেটা যেন আবারও প্রমাণ করে দিলেন নওগাঁর বদলগাছী গাবনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন-বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (২৫ শে ফেব্রুয়ারি) গাবনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এই শিক্ষকের বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। প্রিয় শিক্ষককে শিক্ষক জীবন থেকে অতীত হতে দেখে শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ মুছলেন চোখ। আবেগ ধরে রাখতে পারেননি মাহমুদা খাতুনও । শিক্ষার্থীদের বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হতে হতে আবেগে ভাসলেন তিনিও।

১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন মাহমুদা খাতুন। দীর্ঘ ৩০ বছর শিক্ষকতা করেন।

মাহমুদা খাতুন বিদায়ী বক্তব্যে বিদ্যালয় আর শিক্ষার্থীদের প্রতি আবেগ ছুঁইয়ে পড়েছে। ৩০ বছরের শিক্ষকতা জীবনকে যেন তিনি তুলে ধরলেন শব্দে শব্দে। তিনি বলেন, এই মর্যাদাপূর্ণ বিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার যোগসূত্র দীর্ঘ বছরের বেশি সময় হয়ে গেছে। এই সময়ে আমি এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একটি অদম্য বন্ধন গড়ে তুলেছি। তাই আজ এই বিদায় সন্ধিক্ষণে দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে সরে আসা আমার জন্য একটু কঠিনই মনে হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের তোমরা আমার সন্তান উল্লেখ করে মাহমুদা খাতুন বলেন, জীবনের এই দীর্ঘ হায়াত তোমাদের মানুষ করার জন্য এই পবিত্র আঙিনায় কাটিয়ে দিয়েছি। দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বাস করি নিশ্চয়ই আমার সন্তানতুল্য প্রাণপ্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের সৎ ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পুরোটা কর্মজীবন সচেষ্ট ছিলাম। আজ আমার গর্বে বুক ভরে যাচ্ছে। কেননা আমাকে সম্মান জানানোর জন্য প্রাণপ্রিয় প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসে হাজির হয়েছেন। এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে? আজ আমি এক পরম আনন্দ ও তৃপ্ত ভরা মন নিয়ে অবসরে যাচ্ছি।

প্রিয় শিক্ষকের বিদায় অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ১৯৯৫ থেকে ২০২৪ ব্যাচের কয়েকশ শিক্ষার্থীও অংশ নেন। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবুল কালামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা প্রিয় শিক্ষককে নিয়ে করেন নানা স্মৃতিচারণ। সবাই মাহমুদা খাতুনের নিষ্ঠার কথা তুলে ধরেন। বলেন তার দায়িত্ব ও বিদ্যালয়ের প্রতি গভীর অনুরাগের কথা। প্রিয় শিক্ষকের হাতে তারা তুলে দেন সম্মাননার ক্রেস্টসহ নানা উপহার।

অনুষ্ঠান শেষে বিদ্যালয় থেকে শেষবারের মতো বিদায় নেওয়ার সময় মাহমুদা খাতুন শিক্ষার্থীদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠেন, এই ধরনের ভালোবাসা পাব, তা ভাবতে পারিনি। অবসর নিলেও বিদ্যালয় আর তোমাদের প্রতি ভালোবাসা একটুও কমবে না। সুযোগ পেলেই চলে আসব বিদ্যালয়ে, তোমাদের কাছে।