ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

তারকা ফুটবলারের শ্বশুর শীর্ষ চোরাকারবারি!

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৫, ১১:৫১ এএম

বাংলাদেশের আলোচিত ফুটবলার মোহাম্মদ ইয়াসিন খানের শ্বশুর শীর্ষ চোরাকারবারীদের একজন- এমন খবর হয়তো অবিশ্বাস করাসহ অনেকে বিব্রতও হতে পারেন। আবার খবরটি ভুয়া দাবি করাসহ অনেকেই বলবেন জাতীয় দলের তারকা ফুটবলারকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কিন্তু না, মোটেও এমন নয়।

এটাই সত্য, শেখ রাসেল ক্লাবের এই নামিদামি খেলোয়াড়ের শ্বশুর সাকিন সিকদার বরিশালের চোরাকারবারিদের প্রথম সারির একজন, যাকে নিয়ে প্রায়ই স্থানীয় দৈনিকগুলো খবর প্রকাশ করে। তিনি বরিশাল মৎস্য ও পুলিশ প্রশাসনের কাছেও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীসহ জাটকা পাচারকারী হিসেবে পরিচিত।

সম্প্রতি জাটাকাসহ বেশকিছু অবৈধ মাছ তালতলী বাজার থেকে মৎস্য বিভাগ জব্দ করলে শহরের উত্তর আমানতগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা সাকিন সিকদারের দৌড়ঝাঁপে এই খবর প্রকাশ্যে আসে যে, তিনি ফুটবলার ইয়াসিনের শ্বশুর। পরে অবশ্য জানা যায়, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের শাসনামলে সাকিন বরিশালের তালতলী বাজার থেকে হাজার কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ অবৈধভাবে পাচার করেছেন। মাছ পাচার করতে গিয়ে কোথাও কখনো আটকে গেলে মেয়েজামাই খ্যাতিমান ফুটবলার ইয়াসিনের পরিচয় দিয়ে পার পেয়ে যেতেন।

স্থানীয় ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তারকা ফুটবলার ইয়াসিন হৃদয়ঘটিত সম্পর্কে জড়িয়ে বছরদশেক আগেবরিশালের আওয়ামী সন্ত্রাস নীরব হোসেন টুটুলের সহযোগী সাকিন সিকদারের মেয়ে দোলাকে বিয়ে করেন।এবং বছরপাঁচেক আগে চোরাকারবারি শ্বশুরের সহযোগিতায় শহরের উত্তর আমানতগঞ্জ এলাকায় একটি বিরোধপূর্ণ ভূমি কিনে সেখানে ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে বেশ বিতর্কের জন্মও দিয়েছিলেন। ভূমি নিয়ে বিরোধটি তখন থানা পর্যন্ত গড়িয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত ক্ষমতার জোরে সেই ভূমিতে ভবন তুলতে খেলোয়াড় ইয়াসিনই সফল হয়েছিলেন। মূলত এরপর আর সাকিনকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। কারণ একে তো তিনি তৎকালীন শাসকদলের ক্যাডার, তদুপরি শেখ পরিবার পরিচালিত শেখ রাসেল ক্লাবের তারকা ফুটবলারের শ্বশুর।

সূত্র জানিয়েছে, ফুটবলার ইয়াসিনের শ্বশুর বরিশাল শহরের উত্তর অঞ্চলের চোরাকারবারি সাকিন গোটা আওয়ামী লীগের শাসনামল মৎস্যখাত থেকে হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন। উপকণ্ঠ তালতলী বাজার থেকে সঙ্গী সাগরেদ আপন বড় ভাই মোশারেফ সিকদার, আওয়ামী সন্ত্রাসী মিরাজ, কালু, সেলিম, নিজাম ও সবুজদের সহযোগিতায় শিকার নিষিদ্ধ রেণুপোনা, জাটকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাচার করছেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে তিনি এখন নিজেকে বিএনপির নেতা দাবি করছেন এবং অতীতের মতোই মাছ পাচারে তোড়জোড় চালিয়ে যাচ্ছেন, যা নিয়ে বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা কথা শোনা যায়।

তবে শ্বশুরের অবৈধ ব্যবসায় সমর্থন দেওয়া, এমনকি বিষয়টি সম্পর্কে মোটেও জানা নেই বলে দাবি করেছেন ফুটবলার ইয়াসিন খান। শনিবার অপরাহ্নে টেলিফোন করে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রেম করে বিয়ে করেছেন ১০ বছর আগে, কিন্তু তার শ্বশুর যে চোরাকারবারি এই প্রথম শুনেছেন।

জাতীয় টিমের রক্ষণভাগের খেলেয়ার ফুটবলার ইয়াসিন খান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে শেখ রাসেল ক্লাবের শীর্ষস্তরের খেলোয়াড়। এর আগে তিনি বসুন্ধরা কিংস, শেখ জামালসহ একাধিক ক্লাবে খেলে ভালো পারফরম্যান্স করে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান।

একজন খ্যাতিমান ফুটবলারের শ্বশুর বরিশালের শীর্ষ চোরাকারবারি এবং আওয়ামী লীগের দোসর বিষয়টি আলোচনায় আসতেই তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু তারপরেও ফুটবলারের শ্বশুর সাকিনকে মোটেও টলানো যায়নি। বরং আগামী দিনগুলো কীভাবে রাজনৈতিক নেতাদের শেল্টারে জাটকাসহ অবৈধ ব্যবসা করা যায়, সেই পথ খুঁজছেন। জানা গেছে, তিনি ইতিমধ্যে শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির দুই নেতার সহযোগিতাও পাচ্ছেন।

তবে বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, তারকা ফুটবলারের শ্বশুর সাকিনের অবৈধ বাণিজ্য এবার বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কারণ সংশ্লিষ্ট কাউনিয়া থানার পুলিশ ওমৎস্য বিভাগ সাকিনসহ সব পাচারকারীর বিরুদ্ধে এবার একধরনের জিহাদ ঘোষণা করেছেন।

পুলিশ ও মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আগে কী হয়েছে, সেগুলো কোনো আলোচ্চ্য বিষয় নয়, এখন থেকে অবৈধ কোনো কিছু আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে জানতে চোরাকারবারি সাকিনের ফোনে একাধিকবার কল করা হলে তা তিনি রিসিভ করেননি। তবে তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, মাছ পাচার করতে গিয়ে অতীতে বিপদে পরে একাধিকবার খেলোয়াড় জামাতার নাম ভাঙিয়েছেন সাকিন সিকদার। তার মেয়ে জামাই আওয়ামী লীগ পরিচালিত শেখ রাসেল ক্লাবের খেলোয়াড় হওয়ায় এতদিন সাকিনের কুকর্ম নিয়ে কেউ মুখ খোলেনি। কিন্তু ৫ আগস্ট সরকারের পতন হওয়ার পরে তারকা ফুটবলার ইয়াসিন ও তার চোরাকারবারি শ্বশুরের অপকর্মের ফিরিস্তি প্রকাশ পেতে শুরু করেছে, যা শুনে অনেকে রীতিমত ক্ষুব্ধ এবং বিস্মিত।’