আ.লীগ নেতার দখলে থাকা কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার

বরিশাল ব্যুরো

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৫, ০৭:১৯ পিএম

আ.লীগ নেতার দখলে থাকা কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বরিশালে ভ্রাম্যমাণ আদালত বুল্ডোজার অভিযান চালিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের কব্জা থেকে কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করেছে। শহরের ‘ত্রিশগোডাউন’ রাস্তার সম্মুখে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মূল্যবান ভূমি দখলে নিয়ে সেখানে ভবন নির্মাণ করে তা দীর্ঘ ৯ বছর যাবত ভাড়া দিয়ে আসছিলেন দোলন-মিলন নামের দুই ভাই, যাদের অতীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় দেখা গেছে। দুই ভাইয়ের এই অবৈধ স্থাপনা বৃহস্পতিবার অপরাহ্নে বুল্ডোজার চালিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে বরিশাল জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, তাদের কোটি টাকা মূল্যের ভূমিটি ৯ বছর পূর্বে জবরদখল করা হয়। এবং দখলকারীরা জেলা পরিষদের ভূমি উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ইজারা নেওয়ার দাবি করে আসছিল। কিন্তু ভূমিটির প্রকৃত মালিকানা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের। পরবর্তীতে তাদের বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার নোটিশ দিয়ে জাগয়া ছেড়ে দিতে বলা হলেও কর্ণপাত করেনি। বরং দখল সন্ত্রাস অব্যাহত রেখে সেখানে সারিবদ্ধভাবে ভবন নির্মাণ করে ডায়াগনস্টিক সেন্টার, খাবার হোটেলসহ
মোট ৮টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জেলা পরিষদ থেকে কাগজপত্র ইউনুস আলী নামের জনৈক ব্যক্তির নামে করা হলেও এর নেপথ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা দোলন এবং ইউসুফ আলী মিলন, সম্পর্কে তারা আপন ভাই। মূলত তাদের নেতৃত্বে ৯ বছর আগে আর্থাৎ ২০১৫ সালে ভূমি দখল দেওয়া হয়েছিল।

তৎকালীন সময়ে এ দখল নিয়ে সংবাদপত্রে লেখালেখি হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ উদ্ধার বা ভূমি রক্ষায় কার্যত কোন পদক্ষেপ নেয়নি।

সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত মিলন বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের কর্মচারী। তাকে আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিশেষ মহলের সুপারিশে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। বড় ভাই দোলনের পাশাপাশি সরকারি চাকরিজীবী মিলনকেও কর্মস্থল শেবাচিম অপেক্ষা রাজনীতিতে বেশি সময় দিতে দেখা গেছে। দুই ভাই-ই সিটির ১১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতা এবং তাদের প্রায়শই দলীয় কর্মসূচিতে বরিশাল মহানগর আ’লীগের সাধারণ
সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র কাছাকাছি দেখা যেতো।

জনশ্রুতি রয়েছে, নেতা সাদিকের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে তৎকালীন সরকারি ভূমি দখল করার সাহস দেখিয়েছেন দোলন-মিলন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল রূপালী বাংলাদেশকে জানান, ৫ আগস্ট সরকার পরিবতনের পরে দখলকারীদের সরে যেতে একাধিকবার নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু এতে তারা কর্ণপাত করেনি, ফলে বাধ্য হয়ে আদালতে যেতে হয়েছে। আদালতের রায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষে আসলে ২৭ ফেব্রুয়ারি উচ্ছেদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এরপরে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার পরে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং খাবার হোটেলসহ ৮টি প্রতিষ্ঠান বুল্ডোজার চালিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই বুল্ডোজার অভিযানে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশ এবং সেনাবাহিনীকে অংশ নিতে দেখা যায়।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, উচ্ছেদ অভিযানের সময় দখলদার দোলন-মিলন দুই ভাইয়ের কাউকে ঘটনাস্থলে দেখা যায়। তবে মোবাইল কোর্ট সেখানে পৌঁছানোর
আগেই ভাড়াটিয়ারা তাদের মূল্যবান মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন।

সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতা দুই ভাই অবৈধ ভাবে নির্মিত প্রতিষ্ঠানগুলো ভাড়া দিয়ে গত ৯ বছরে কোটি টাকার ওপরে নিয়ে গেছেন।
পাশাপাশি ডায়াগনস্টিক সেন্টারটিতে অংশীদার ছিলেন শেবাচিমের কর্মচারী মিলন।

এছাড়া প্রতিটি দোকান ভাড়ার পূর্বশর্ত অনুসারে কারও কাছ থেকে ৩ লাখ, আবার কারও কাছ থেকে ৫/৭ লাখ টাকাও অগ্রিম নিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতাদ্বয়।

স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের শাসনামলে চালানো এই দখল সন্ত্রাস এবং সর্বশেষ প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে প্রতিক্রিয় জানতে আওয়ামী লীগ নেতা মিলনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা পাওয়া যায়নি।

এরপরে হোটসঅ্যাপে বার্তা দিয়েও তাকে না পেয়ে তার ঘনিষ্ট একজনের সাথে আলাপচারিতায় জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর থেকে মিলনকে বরিশালে প্রকাশ্যে তেমন একটা দেখা যায় না।

অভিন্ন তথ্য দিয়ে সূত্র বলছে, আলোচ্চ্য মিলন আওয়ামী লীগের দোসর হলেও তিনি এখনো শেবাচিমে বহাল রয়েছেন। ৫ আগস্টের পরে তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির অসংখ্য কর্মচারীকে বদলি করা হলেও আপসরফা রয়েছে গেছেন মিলন। তার বিরুদ্ধে রড চুরিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে এবং একাধিক মামলায় অভিযুক্তও তিনি। প্রতিদিন চুপিসারে তিনি শেবাচিমে আসেন এবং দায়িত্ব পালন শেষে অত্যন্ত গোপনে কর্মস্থল ত্যাগ করেন। এবং নিরাপত্তার স্বার্থে নিজের মুঠোফোন বন্ধ রাখেন
বলে সূত্রটি নিশ্চিত করে।’

আরবি/জেডআর

Link copied!