যশোরের মহাসড়ক নিয়ে নেই সুখবর!

মো. জামাল হোসেন, বেনাপোল

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৫, ১০:৩৬ এএম

যশোরের মহাসড়ক নিয়ে নেই সুখবর!

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ঈদের আগে যশোরের সড়ক-মহাসড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীদের জন্য নেই কোন সুখবর। এবারও ভাঙাচোরা সড়কে ঈদযাত্রা হবে তাদের। কারণ এ অঞ্চলের অধিকাংশ সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা এখনো নাজুক। বিশেষ করে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। যশোর-খুলনা মহাসড়কের মাঝে তৈরি হয়েছে বড় বড় ঢিবি।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, যশোর-খুলনা মহাসড়কের যশোর অংশের ১২ কিলোমিটার, যশোর- সাতক্ষীরা মহাসড়কের নাভারণ থেকে ইলিশপুর পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার, যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের কালীগঞ্জ পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়ক এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এই তিনটি মহাসড়কই হচ্ছে দক্ষিণের এ জেলার সাথে রাজধানীসহ আশপাশের জেলার যাতায়াতের যোগাযোগ মাধ্যম। অথচ এই তিনটি মহাসড়কের ইট, বালি, খোয়া ও পিচ উঠে বড় বড় খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে যশোর-খুলনা মহাসড়কে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। এই মহাসড়কের যশোর অংশের চাঁচড়া থেকে রাজঘাট পর্যন্ত অন্তত ১০ টি স্পটে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের মাঝে তৈরি হয়েছে বড় বড় ঢিবি।

একই পরিস্থিতি যশোর-নাভারণ ভায়া সাতক্ষীরা সড়কের। এই সড়কের নাভারণ মোড় থেকে বাঁগআচড়া ইলিশপুর পর্যন্ত কোথাও ছোট-বড় গর্ত, আবার কোথাও উঠে গেছে পিচ। কোথাও পিচ জড়ো হয়ে সৃষ্টি হয়েছে উঁচু ঢিবি। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ঘটছে প্রাণহানি ও হতাহতের ঘটনা। একই অবস্থা যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের। এই সড়কটি উন্নয়নে অনেক আগে অর্থ বরাদ্দ থাকলেও জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে তা দীর্ঘদিন ঝুলে আছে।

যার ফলে প্রতিদিনই এই সড়ক দিয়ে শত শত যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছে। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও ছোট যানবাহনগুলো দুর্ঘটনায় পড়ছে বেশি। অনেক বাস ও ট্রাক সড়কের গর্তের কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যাচ্ছে। এতে মৃত্যুসহ অনেকে পঙ্গু হচ্ছেন। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও তা কাজে আসছে না। কাজের মান খারাপ ও অতিবৃষ্টিতে সড়কগুলো আবারও আগের অবস্থায় ফিরেছে।

শহরের পালবাড়ী মোড়ে ট্রাকচালক ইমতিয়াজ হোসেনের সঙ্গে কথা হলে বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের পুরোটা সময় ধরে দেখে আসছি যশোর-খুলনা মহাসড়ক সংস্কার হচ্ছে। কিন্তু শেষ যেন হচ্ছে না। সংস্কার শেষ করতে না করতেই তা ৬ মাসের মধ্যে ধসে যাচ্ছে। এখন দেখছি পিচের রাস্তায় ইটের সলিং বিছিয়ে উপযোগী করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

একই কথা বলেন বাসচালক শামীম রেজা। তিনি বলেন, পদ্মাসেতু নির্মাণের পর থেকে যশোর অঞ্চলের সড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় এই অঞ্চলের সড়কের উন্নয়ন হয়নি। এখন যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে সামনে বর্ষার আগে যদি এটি পূর্ণাঙ্গভাবে সংস্কার না করা হয় তাহলে এ অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ একেবারেই ভেঙে পড়বে। এ ছাড়া ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা শুভ হবে না।

নাজমুল হোসেন নামে আরেক বাসচালক বলেন, জরাজীর্ণ এসব সড়ক দিয়ে প্রতিদিন আমরা ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন নিয়ে চলাচল করছি। অথচ এখন দেখছি জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার করা হচ্ছে। এর কোনো অর্থ নেই। যশোর-খুলনা মহাসড়কের উন্নয়নে যে দুর্নীতি হয়েছে তার বিচার হওয়া উচিৎ।

জসিম উদ্দীন নামে এক থ্রি-হুইলার চালক বলেন, আমি যশোর-ঝিনাইদহ সড়ক দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করি। এই মহাসড়কে খানাখন্দ আর ভাঙা ইটের টুকরোর কারণে দুর্ভোগ বেড়েছে। যানবাহনগুলো চলাচল করার সময় মনে হয় যেত পানিতে ঢেউ খেলে যাচ্ছে। এতে গাড়ির ক্ষতির পাশাপাশি যাত্রীদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সড়কে ভাঙা ইটের অংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় মোটরসাইকেল ও তিন চাকার যানবাহনগুলো বেশি দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ইটের সলিং বিছিয়ে দেওয়াতে আরও বিপদ ডেকে আনছে, ঈদে দুর্ভোগ আরও বাড়বে।

শহরের মুড়লী মোড় এলাকার বাসিন্দা ইমরান হোসেন রাজ বলেন, ২০১৮ সালের পর দেখে আসছি যশোর-খুলনা মহাসড়কের সংস্কার করা হচ্ছে। কিন্তু কী সংস্কার হচ্ছে তা বলা মুশকিল। এখন আবার দেখছি সড়কে ইট বিছানো হচ্ছে। সামনে ঈদে এই সড়ক দিয়ে মানুষ কীভাবে চলাচল করবে তা ভেবে উঠতে পারছি না। আগের সরকার এসব সড়ক উন্নয়নের নামে শত শত কোটি টাকা লুটে নিয়ে গেছে। এখন যেনো এই পরিস্থিতি না হয় সেই দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়ক উন্নয়ন করতে হলে এখন টেন্ডার করা জরুরি। সেটি দীর্ঘ প্রসেসিং। যে কারণে আপাতত সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে ইটের সলিং ও এইচবিবি করে উপযোগী করা হচ্ছে। এরমধ্যে এসব সড়কের আপদকালীন মেরামতের জন্য সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। যশোর-খুলনা মহাসড়কের ৮টি স্পটে মেরামত করা হবে। সড়কের ২৩শ মিটার সংস্কারের জন্যে টেন্ডার হয়েছে। এটি এখন মন্ত্রণালয় যাছাই-বাছাই করে অর্থ বরাদ্দ দেবে। তবে কবে নাগাদ বরাদ্দ পাবেন তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি। এ ছাড়া এই সড়কের আরও ৪ কিলোমিটার সংস্কারের জন্যে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। যেটি মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাইয়ের জন্যে অপেক্ষায় রয়েছে।

তিনি বলেন, নাভারণ-সাতক্ষীরা সড়কের চার কিলোমিটার পূর্ণাঙ্গভাবে ঢালাইয়ের জন্যে টেন্ডার আহ্বান করলে চারজন ঠিকাদার দরপত্র জমা দিয়েছেন। যাচাই-বাছাই করে কাকে কাজ দেওয়া যায় সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে।

এদিকে জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে ঝুলে আছে যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের চার লেনের উন্নীতের কাজ। ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর একনেকের সভায় পাশ হওয়া ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর (উইকেয়ার) ফেজ-১ এর আওতায় এই উন্নয়ন কার্যক্রম আগামী ২০২৬ সালের জুন মাসে সমাপ্ত হওয়ার টার্গেট থাকলেও যশোর শানতলা এলাকায় জমি অধিগ্রহণ নিয়ে আপত্তি থাকায় তা আজও পর্যন্ত শুরু করতে পারেনি।

এ বিষয়ে ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর (উইকেয়ার) ফেজ-১ এর প্রজেক্ট ম্যানেজার নির্বাহী প্রকৌশলী নকিবুল বারী বলেন, যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের শানতলা এলাকায় যশোর সেনানিবাসের অংশ থাকায় ওই অংশে জমি অধিগ্রহণ সম্ভব হয়নি। কারণ সেনানিবাসের জমি কখনও অধিগ্রহণ করা যায় না। এ ব্যাপারে পরবর্তী করণীয় জন্য মিনিস্ট্র অফ ডিফেন্সে মতামত চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। এর বাইরে মিনিস্ট্রি অফ ল্যান্ডেও বিকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে এবং আমরা দ্রুত সড়ক উন্নয়নে কাজ করতে পারবো।

আরবি/এসআর

Link copied!