ঢাকা শনিবার, ০১ মার্চ, ২০২৫

৩০০ মানুষের ভরসা ৩০ ফুট গভীর কূপের একটি চাপা কল

ফিরোজ মাহমুদ, মিরসরাই
প্রকাশিত: মার্চ ১, ২০২৫, ০৩:০২ পিএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

পানি মানুষের জীবনে একটি মূল্যবান সম্পদ। যা ছাড়া বাঁচা অসম্ভব। তাইতো পানির আরেক নাম জীবন। কিন্তু সেই পানি সংকটে ভুগছেন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের ঘেরামারা আজিজনগর গ্রামের তিন শতাধিক মানুষ। গ্রামে ৫০টি পরিবারের জন্য রয়েছে মাত্র একটি চাপা কল (নলকূপ)। তাও ৭ বছর আগে মাটি খুঁড়ে কূপ তৈরি করে ৩০ ফুট গভীরে বসিয়েছেন একটি পরিবার। এখন ওই পরিবারের বসানো চাপা কলটিই ৩০০ মানুষের ভরসা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের ঘেরামারা আজিজনগর একটি পাহাড়ি গ্রাম। এই গ্রামের পূর্ব পাশে রয়েছে প্রায় ৫০টি পরিবার। এ সকল পরিবারে লোকসংখ্যা প্রায় তিন শতাধিক। কিন্তু ওই গ্রামে কোন পুকুর কিংবা টিউবয়েল নেই। ৭ বছর আগে ওই গ্রামে বসতি শুরু করা মাফিয়া বেগম এনজিও সংস্থা ‘আশা’ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি চাপা কল (টিউবয়েল) বসান। পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় প্রথমে পানি পাননি। পরে ৩০ ফুট মাটি খুঁড়ে বানানো হয় কূপ। ওই কূপে বসানো হয় চাপা কলটি। তবুও আশানুরুপ পানি উঠে না ওই কলে।

সরেজমিনে গিয়ে আজিজনগর গ্রামে দেখা গেছে, কিছুটা সমতল পাহাড়ে অনেকগুলো পরিবার। সাংবাদিক আসার খবর শুনে অনেক নারী ছুটে আসেন তাদের কষ্টের কথা জানাতে। এ সময় প্রত্যেক নারীর হাতে কলসি ও বালতি দেখা যায়। ওই সময় দেখা যায়, চাপা কলের পানি নিয়ে কূয়া থেকে উঠার জন্য মাটি ও পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ১৮টি সিঁড়ি। অনেক বৃদ্ধ নারী পুরুষ ভয়ে ওই চাপা কলের পানি নিতে আসেন না। এ সময় কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা ও চাপা কল স্থাপনকারী পরিবারের সদস্য মাফিয়া বেগমের সাথে।

তিনি বলেন, প্রায় ৭ বছর আগে এনজিও সংস্থা ‘আশা’ থেকে এক বছরের জন্য ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে চাপা কলটি বসিয়েছি। প্রথমে অনেক কষ্ট করেও পানি পাওয়া যায়নি। পরে মাটি খুঁড়ে কূয়া তৈরি করে চাপা কলটি স্থাপন করা হয়। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে আশানুরুপ পানি পাওয়া যায় না। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানিতে ডুবে থাকে কূপটি।

সেখানে আরো কথা কথা কূপের চাপা কল থেকে পানি নিতে আসা পঞ্চাশোর্ধ নারী রাবেয়া খাতুনের সাথে।

তিনি বলেন, আমাদের গ্রামটি পাহাড়ি এলাকায় হলেও কোন বিচ্ছিন্ন জনপদ নয়। তবু এখানে কোন ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পৌঁছায় না। এখানে চলাচলের ভালো রাস্তা নেই, বিদ্যুৎ নেই, পানির সংকট নিত্যদিনের সঙ্গী। আমরা সরকারের কাছে একটি গভীর নলকূপ স্থাপনের আবেদন জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. মহি উদ্দিন বলেন, বিষয়টি অবগত হওয়ার পর আমি এলাকাটি পরিদর্শন করেছি। শীঘ্রই পানি সংকট নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হবে।

এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, করেহাট ইউনিয়নের আজিজনগর এলাকায় একটি পাড়ায় মানুষের পানি সংকটের বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শীঘ্রই পানি সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।