নিখোঁজের একদিন পর পদ্মা নদী থেকে আঞ্জুমান মায়া নামে এক গৃহবধূর ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি স্বজনদের। শনিবার (১ মার্চ) সকাল ৯ টার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের কালোয়া এলাকা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত আঞ্জুমান মায়া ওই এলাকার আজিজ শেখের ছেলে আসিফ শেখের (১৮) স্ত্রী। আসিফ কয়া মহাবিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ও একটি বেসরকারি কোম্পানির খাদ্য পরিবেশক।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রাঁধানগর এলাকায় আঞ্জুমানের নানা বাড়ি। প্রায় সাত মাস আগে নানাবাড়িতে বেড়াতে এসে আসিফের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এ সম্পর্কের প্রায় দুই মাস পরে বিয়ে করে পালিয়ে যান তারা। পালানোর সপ্তাহখানেক পর বউ নিয়ে নিজ বাড়িতে ওঠেন আসিফ। পরে সামাজিকভাবে তাদের আবারও বিয়ে হয়।
গত শুক্রবার ছিল আসিফের জন্মদিন। বাড়িতে ছিল বন্ধু ও স্বজনদের আনাগোনা। বিকেলে আঞ্জুমান তার স্বামীকে নিয়ে বাজার থেকে কেক কিনেন। রাত ৮টার দিকে স্বামী ও শাশুড়িকে নিয়ে ধুমধাম করে কেক কাটেন। রাতে স্বজনদের সঙ্গে খাওয়া দাওয়া শেষে ১০টার দিকে ঘুমিয়ে পড়েন স্বামী। আর তখনও আঞ্জুমান স্মার্টফোনে ব্যস্ত ছিলেন।
রাত ১টার দিকে আসিফ জেগে দেখেন তার স্ত্রী ঘরে নেই। ঘরের দরজা খোলা। সে সময় তিনি স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়ে রাতভর সম্ভাব্য স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও স্ত্রীকে পাননি। আজ ভোরে বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে পদ্মানদীতে আঞ্জুমানের ভাসমান মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা।
তবে আঞ্জুমানের শাশুড়ি ফেরদৌসি খাতুন বলেন, ‘প্রেম করে বিয়ে করলেও সংসারে কোনো অশান্তি ছিলো না। শুক্রবার রাতেও সবাই মিলে বউকে নিয়ে আমার ছেলের জন্মদিন পালন করা হলো। একসঙ্গেই রাতে খেয়েছিলাম। রাত ১টার দিকে ছেলের কাছ থেকে শুনি বউ ঘরে নেই। সবাই মিলে সারারাত খুঁজেও কোথাও পাইনি। সকালে নদীতে লাশ পাইছি।’
তিনি আরোও বলেন, আঞ্জুমানের শরীরে জিনের আছর ছিল। প্রায়ই ঘর থেকে হারিয়ে যেত। তারাই হয়তো আঞ্জুমানকে নদীতে ডুবিয়ে মেরেছে। আঞ্জুমানের স্বামী আসিফ শেখও একই দাবি করলেন।
আঞ্জুমানের মা পারভিন খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ‘আসিফ আমার মেয়েকে ছলাকলা করে বিয়ে করেছে। তিনদিন আগে ব্যবসার জন্য ৩ লাখ টাকা চেয়েছিল। টাকা না পেয়ে মেয়েকে নদীতে ডুবিয়ে হত্যা করেছে। আমার মেয়ের শরীরে কোনো জিনের আছর ছিল না। আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই।’
কয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রাতে নিখোঁজ ছিল ওই গৃহবধূ। সকালে নদীতে স্থানীয়রা দেখতে পান মাছধরা জালের সঙ্গে আটকে আছে তার লাশ। কি ঘটেছে তা ময়নাতদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে।’
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলায়মান শেখ বলেন, মরদেহ উদ্ধারের পর নৌপুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নৌপুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
নৌ পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. মনির উদ্দিন বলেন, মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করার পর কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।