চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে মাদকাসক্ত মেয়ের জামাই শাশুড়ি ছবুরা খাতুন (৭৫) হত্যা করেছেন। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা থেকে ওই বৃদ্ধা নিখোঁজ থাকার ১২ ঘণ্টা পর মিরসরাই থানা পুলিশ শনিবার (১ মার্চ) সকালে উপজেলার ১২ নস্বর খৈয়াছড়া ঝরনার সাবেক চেয়ারম্যান জাহেদ ইকবাল চৌধুরীর বাংলো এলাকা থেকে লাশ উদ্ধার করে।
ছবুরা উপজেলার ১২ নম্বর খৈয়াছড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব খৈয়াছড়া কাঁঠাল বাগান এলাকার মজিবুল হকের বাড়ির মৃত মাওলা বক্সের স্ত্রী।
প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে ওই বৃদ্ধাকে খুন করা হয়েছে। অভিযুক্ত মেয়ের জামাইয়ের নাম মোবারক হোসেন (৪০)। তিনি প্রায়ই মাদকাসক্ত থাকতেন। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব খৈয়াছড়া কাঁঠাল বাগান এলাকার মজিবুল হকের বাড়ির মৃত মাওলা বক্সের স্ত্রী ছবুরা খাতুন শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাড়ির পাশের মাঠে বাঁধা গরু আনতে যান। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ হন। নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে বৃদ্ধার ছেলে-মেয়েসহ আত্মীয়স্বজন এলাকায় তাকে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তার কোনো হদিস পাননি।
শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ওই বৃদ্ধার মেয়ের জামাই মোবারক বৃদ্ধার প্রতিবেশীকে ফোন করে বৃদ্ধাকে হত্যার বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, মাত্র ১ জনকে খুন করেছেন আরও ২ জন বাকি আছে। রাতে ওই খবর পাওয়ার পর বৃদ্ধার স্বজনরা লাশ খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। পরবর্তী শনিবার সকাল ৬টার দিকে লাশ খুঁজতে খুঁজতে খৈয়াছড়া ঝরনা এলাকায় সাবেক চেয়ারম্যান জাহেদ ইকবাল চৌধুরীর বাংলো এলাকায় লাশ পড়ে থাকতে দেখেন বৃদ্ধার নাতি মোশাররফ হোসেন। তখন ওই বৃদ্ধার লাশে গরুর রশি দিয়ে পেঁচানো ছিল।
এরপর মিরসরাই থানা পুলিশকে খবর দিয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। ঘটনার পর থেকে খুনের সঙ্গে অভিযুক্ত জামাই মোবারক হোসেন পলাতক রয়েছেন।
নিহত বৃদ্ধার ছেলে ওবায়দুল হক বলেন, আমার ছোট বোন নাছিমা বিয়ের কিছু সময় পর থেকে স্বামীর বাড়িতে থাকতেন না। সে আমাদের এলাকায় আমার মা ছবুরা খাতুন এবং তার স্বামী মোবারক হোসেনসহ বন বিভাগের জায়গায় নির্মিত ঘরে থাকতেন। আমার ছোট বোনের স্বামী মোবারক প্রায় মাদকাসক্ত থাকেন। মাদকাসক্ততার কারণে পরিবারের সঙ্গে প্রায়ই বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে মাত্রাতিরিক্ত মাদকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়া নিয়ে ঘরে ঝগড়া বিবাদ শুরু হয়। এরই জেরে আমার মা ছবুরা খাতুনকে মোবারক পরিকল্পিতভাবে খুন করেছেন মোবারক। আমি আমার মায়ের খুনের উপযুক্ত বিচার চাই।
তিনি আরও বলেন, আমার মা শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়ির পাশের মাঠ থেকে গরু আনতে যান। তখন পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক মোবারক আমার মাকে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে হত্যার পর লাশ ঝোঁপে ফেলে দেয়। মোবারক আমাদের এক প্রতিবেশীকে রাত ১০টার দিকে ফোন করে হত্যার বিষয়টি জানান এবং এও বলেন মাত্র ১ জনকে খুন করেছেন। আরও ২ জন বাকী আছেন। রাতে খবর পাওয়ার পর আমরা সবাই মিলে মায়ের লাশ অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। পরে সকালে ঝোপের ভেতর লাশটি দেখতে পেয়ে মিরসরাই থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করেন। খুনের ঘটনায় মোবারকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
খুনের সঙ্গে সম্পৃক্ত মোবারক হোসেনের ছেলে মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে নানুর বাড়িতে থাকি। আমার মায়ের বিয়ের পর থেকে আমার বাবা মোবারক আমাদের পরিবারের তেমন কোনো খোঁজখবর রাখেন না। তিনি মাদকসহ নানা খারাপ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমার বাবাই আমার নানুকে খুন করেছে। আমি এই হত্যার যথাযথ বিচার চাই।
মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ আতিকুর রহমান বলেন, স্থানীয় ও ওই বৃদ্ধার আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি বৃদ্ধাকে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। গলায় রশি পেঁচানো দাগ এবং মুখেও দাগ রয়েছে। এই ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। অভিযুক্তকে গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :