চালু করা যাচ্ছে না শতকোটির প্রকল্প

সিলেট ব্যুরো

প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৫, ১০:৫০ এএম

চালু করা যাচ্ছে না  শতকোটির প্রকল্প

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ভারতের বাধায় পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত বাংলাদেশ। উভয় দেশের চুক্তির বদৌলতে বাংলাদেশ একটি বিশাল প্রকল্প হাতে নেয় সিলেটের জকিগঞ্জে। ২০১৬ সালে প্রকল্পের কাজও শেষ হয়। কিন্তু যখনই বাংলাদেশ সেই প্রকল্প থেকে সুবিধা নেওয়া শুরু করবে, তখনই বাধা হয়ে দাঁড়ায় ভারত। 

দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের বাধায় মুখ থুবড়ে পড়ে প্রকল্প। সেই থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হয়ে আসছে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে। বিগত শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশ পানির পাওনা আদায়ে কোনো শক্ত অবস্থান নিতে পারেনি। কোনো প্রতিক্রিয়াও জানাতে পারেনি সরকারের পররাষ্ট্র দপ্তর ও অন্যান্য বিভাগ।

সূত্র জানায়, ২০১১ সালে প্রকল্পের অধীনে রহিমপুরী খাল খনন ও পাম্প হাউস স্থাপনের কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। বাংলাদেশ যখন তার সব প্রস্তুতি ও উদ্যোগ শেষ করে ফেলে, তখন থেকেই ভারত চুক্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে শুরু করে। 

তারা দুদেশের চুক্তির ধার ধারছে না। বিএসএফের বাধায় চালু করা যাচ্ছে না শতকোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি। ফলে উৎসমুখ বন্ধ থাকায় পুরো শুষ্ক মৌসুমে মরাখালে পরিণত হচ্ছে রহিমপুরী খাল।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতে, ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী কুশিয়ারা থেকে প্রতিবছর ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের সুযোগ পাওয়ার কথা বাংলাদেশের। এর ফলে শুষ্ক মৌসুমে কুশিয়ারা নদী থেকে রহিমপুরী খাল হয়ে ঢুকবে পানি। সেই পানি নামবে সিলেটের জকিগঞ্জসহ চার উপজেলার হাওর ও বিলে। 

সেচ সুবিধা সৃষ্টি হওয়ায় চাষাবাদের আওতায় আসবে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমি। হাওর ও বিলে বাড়বে মৎস্য উৎপাদন। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ এ অঞ্চলের অনাবাদী কৃষিজমিকে আবাদের আওতায় আনতে ২০০১ সালে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার আপার সুরমা কুশিয়ারা প্রকল্পের কাজ শুরু করে। 

প্রকল্পের আওতায় ১০ হাজার ৬০০ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে নির্মাণ করা হয় প্রায় ১৪৬ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। খনন করা হয় সাড়ে ৪৮ কিলোমিটার নিষ্কাশন খাল ও সাড়ে ৩৯ কিলোমিটার সেচ খাল। 

বোর্ড সূত্র জানায়, সিলেট জেলার মধ্যে সবচেয়ে কৃষিনির্ভর উপজেলা হচ্ছে জকিগঞ্জ। আগে সেচ সুবিধা থাকায় শুষ্ক মৌসুমেও এই উপজেলায় প্রচুর ধান ও রবিশস্য উৎপাদন হতো। 

রহিমপুরী খাল, সেনাপতির খাল, মছকন্দর খাল, শিকার মাহমুদ খাল, নাথের খাল, পীরের খাল, মাদারখাল, তেলিখাল, মিলিটারি খাল, কাপনা খাল, জায়গীরদারি খাল, বরজান খাল, বিয়াবাইল খাল, শিবের খাল, বাবুর খাল, ছাগলী খাল, কুদালী খাল, হাতিদাড়া খাল, কুনাই খাল, মরইর খাল, মুরাদ খাল, সুনাম খালসহ শতাধিক খাল দিয়ে পানি নামত মইলাট ও বালাইর হাওরসহ বিভিন্ন হাওরে। কিন্তু খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় যৌবন হারায় হাওর ও বিলগুলো। 

সেচের সুবিধা না থাকায় শুষ্ক মৌসুমে হাজার হাজার একর জমি অনাবাদী পড়ে থাকে। চুক্তিটি সম্পাদন করা হয়েছিল সেই অনাবাদী জমিকে আবাদের আওতায় নিয়ে আসতে।

স্থানীয়রা বলছেন, চুক্তি অনুযায়ী রহিমপুরী খাল দিয়ে কুশিয়ারা নদীর পানি প্রত্যাহার হলে জকিগঞ্জ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার অনাবাদী জমি চাষাবাদের আওতায় আসত। রহিমপুরী খাল ও শাখা খাল দিয়ে পানি উপজেলার বালাইর হাওর, মইলাইট হাওর, মজুমদারী হাওর, ঘেচুয়ার বিল, বিলপাড় ও সিঙ্গাইরকুড়ির বিলে নামত। 

ফলে শুষ্ক মৌসুমেও খাল ও হাওর-বিলগুলো পানিতে পূর্ণ থাকত। এই পানি সেচকাজে ব্যবহার করা যেত। হাওর ও বিলগুলোতে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি খালের গভীরতা বাড়ায় বন্যার শঙ্কাও কমত। এ ছাড়া খাল, বিল ও হাওর দিয়ে পানি পার্শ্ববর্তী বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়ে নামত। এতে ওই তিন উপজেলার কৃষিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ত।

কিন্তু চুক্তি সম্পাদনের পরও বিএসএফের বাধার কারণে পাম্প হাউসটি চালু করা যাচ্ছে না। রহিমপুরী খালের উৎসমুখ (কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী অংশ) খনন করতে বাধা দেওয়ায় অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে পাম্প হাউস। এতে সিলেটের চার উপজেলার বিশাল কৃষি ও মৎস্য সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, ‘বিএসএফের বাধার কারণে রহিমপুরী খালের উৎসমুখ খনন করতে না পারায় পাম্প হাউস চালু করা যাচ্ছে না। উৎসমুখ খনন করতে গেলেই বিএসএফ বাধা দিচ্ছে। ফলে জকিগঞ্জসহ সিলেটের ৫ উপজেলার কৃষি ও মৎস্য উন্নয়নে যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।’
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!