বাগেরহাটের চিতলমারীতে গাছে গাছে ঝুলছে পাকা টমেটো। বেশ কয়েকদিন ধরে দরপতনে ক্ষেতের পাকা টমেটো নিয়ে চাষিরা এখন উদ্বিগ্ন। ক্ষেত থেকে তুলে টমেটো আড়ৎ (মোকাম) পর্যন্ত পৌঁছানোর কামলার মজুরি ও পরিবহন খরচ না উঠছে না।
গত কয়েকদিন ধরে দুই তিন টাকা দরে বিক্রি হয়েছে, রোববার (২ মার্চ) সকালে দেখা যায় ১ টাকা দরেও কিনছেন না টমেটো। তাই কৃষকেরা টমেটো গাছ থেকে না তুলে গাছেই পাকিয়ে নষ্ট করে দিচ্ছে।
কৃষকরা জানান, বাজার দর এমন চলতে থাকলে এ বছর টমেটো চাষিরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ন্যুয়ে পড়বে তাদের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড।
চিতলমারী কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় ২ হাজার ৭২ একর জমিতে হাইটম, বিউটিফুল-২, বিপুল প্লাস, মেজর, বাহুবলী ও বিউটিসহ বিভিন্ন জাতের টমেটোর চাষ করা হয়েছে। বিরূপ আবহাওয়ার মাঝেও টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রথম দিকে প্রতিমণ টমেটো ৩ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু বেশ কয়েকদিন ধরে টমেটোর কোনো দাম না থাকায় কৃষকেরা টমেটো বাজারে তুলছেন না। দিনমজুর দিয়ে টমেটো তুলে যে টাকা বিক্রি হয় তাতে খরচের টাকা ও উঠে না।
উপজেলার দড়িউমাজুড়ি (গিরিঙ্গির) মোড়ে আড়তে বিক্রি করতে আসা টমেটো চাষি অমাল রায় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এ অঞ্চলের টমেটো ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, ভোলা ও পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার চাহিদা মেটায়। প্রতিবছর এখানে কয়েক লাখ টন টমেটো উৎপাদিত হয়। হঠাৎ টমেটোর দরপতনে আমরা চরম বিপাকে পড়েছি। এনজিও দিয়ে লোন তুলে এ বছর টমেটো চাষ করেছি, সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। এই ঋণের বোঝা নিয়ে কিভাবে কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।
পাইকারি ক্রেতা মফিজুর রহমান বলেন, আমরা প্রতি কেজি টমেটো দুই তিন টাকা দরে কিনেছি। দেশের যে সব অঞ্চলে চিতলমারীর টমেটোর চাহিদা ছিল, সেই সব এলাকায় এখন চাহিদা কম। তাছাড়া উৎপাদন অনেক বেশি। ফলে এই দরপতন। এ ছাড়া দাম কমের কারণে বাজারে পাইকারি ক্রেতাও কম।
চিতলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সিফাত-আল-মারুফ জানান, এ বছর চাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে কোল্ড স্টোর থাকলে চাষিরা টমেটো সংরক্ষণ করে পরে বেশি দামে বিক্রি করতে পারতেন। যেহেতু সে ব্যবস্থা নেই। তাই চাটনি, জুস উৎপাদন কোম্পানিগুলো এগিয়ে আসলে চাষিরা ভালো দাম পেতো এবং লাভবান হতো।
আপনার মতামত লিখুন :