বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধে রাজশাহীসহ মামলা হচ্ছে দেশজুড়ে। ৫ আগস্টের পর রাজশাহীতে তিন মাসে মামলা হয়েছে ৩৬৬টি। আর এখন পর্যন্ত ২৭২ জন গ্রেপ্তার হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পূর্বশত্রুতা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করা এবং চাঁদাবাজি ও হয়রানি করতে অনেককে আসামি করার অভিযোগ উঠেছে। মামলা এবং ঢালাওভাবে আসামি করার ফলে ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে থানা পুলিশ এ ধরনের মামলা নিতে না চাইলে রাজনৈতিকভাবে চাপ প্রয়োগেরও অভিযোগ উঠছে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর অক্টোবর পর্যন্ত ১২টি থানায় ৩৬৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৫ হাজারের অধিক। এর মধ্যে আগস্ট মাসে মামলা করা হয়েছে ৮৯টি। সেপ্টেম্বর মাসে মামলা করা হয়েছে ১২৭টি। অক্টোবর মাসে ১৫০টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে আদালতেও মামলা দায়ের করা হয়েছে। আগস্টে গ্রেপ্তার হয়েছে ৫৮ জন, সেপ্টেম্বরে গ্রেপ্তার হয়েছে ৬২ জন, ও অক্টোবরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৫২ জন। সব মিলে এখন পর্যন্ত ২৭২ জন আসামি গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহীন আকতার রেনী, মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনিসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এতে বাদ যায়নি রাসিকের ৩০টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা। ২০ জনের অধিক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
এর মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার। তাকে কয়েক দফা রিমান্ড শেষে এখন কারাগারে আছেন। এছাড়াও দুই অস্ত্র নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলি করা যুবলীগ কর্মী জহিরুল হক রুবেলও দুটি হত্যা মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলায় কারাগারে আছেন। তাকেও কয়েক দফা রিমান্ড নেওয়া হয়। প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মানবাধিকারকর্মী, আইন বিশেষজ্ঞ ও পুলিশের সাবেক কর্মকর্তারা মনে করেন, এভাবে ঢালাও মামলা হলে ভুক্তভোগীদের পরিবার ন্যায়বিচার পাবে না। এ ক্ষেত্রে তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত আসামি শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা এবং নির্দোষ ব্যক্তিকে হয়রানি না করতে সরকার এবং পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, মামলা যেভাবেই হোক না কেন যদি সুষ্ঠু তদন্ত হয় তাহলে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে তাদের আইনের আওতায় নেওয়া হতে পারে। বর্তমান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে যেন ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার অভিযান না করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আইনজীবি বলেন, মামলা নথিভুক্ত করার আগে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা দরকার। এতে মামলা শক্তিশালী হয়। মামলা শক্তিশালী হলে বিচার দ্রুত শেষ করা সম্ভব। নাহলে চার্জশিট দিতে বিলম্ব হবে। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হন সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আবু সুফিয়ান বলেন, দায়ের হওয়া মামলা তদন্ত করে শুধু প্রকৃত অপরাধীদের আসামি হিসেবে রেখে তাদেরই আইনের আওতায় নিয়ে আসার কাজ করা হচ্ছে। আমি নিশ্চিত করতে চাই, নিরীহ কাউকে হয়রানি করা হবে না।
আপনার মতামত লিখুন :