জনবল সংকটের পাশাপাশি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে রয়েছে নানা সমস্যা। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এ উপজেলার সাধারণ মানুষ। দেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের সীমান্তবর্তী ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা। এই উপজেলা ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত।
এই উপজেলার ২০৬টি গ্রামে ৪ লাখের অধিক মানুষের বসবাস। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে উপজেলা সদরে মাত্র একটি ৫০ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে।
উপজেলা সদর থেকে সীমান্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার। ওইসব সীমান্ত এলাকা থেকে একটু জটিল রোগী এলেই সঙ্গে সঙ্গে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ফলে এলাকার সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকে না।
এ ছাড়াও মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটের কারণে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। ফলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ায় জনসাধারণের দুর্ভোগ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এ ছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন ধরনের টেন্ডারের ঘাপলা, রোগীদের নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহ, ব্যবহার অযোগ্য টয়লেট, নিম্নমানের ওষুধ সরবরাহ ও বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধির অভিযোগ রয়েছে।
তথ্যনুসন্ধানে জানা যায়, মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১ জন ডাক্তারের বিপরীতে সেবা দিচ্ছেন মাত্র ৬ জন ডাক্তার। কিন্তু অধিকাংশ সময় ডাক্তার গণপ্রাইভেট হাসপাতালে ব্যস্ত থাকায় তাদের চেম্বারে পাওয়া যায় না। ৫ জন পরিচ্ছন্নকর্মীর পদ থাকলেও একজনও নেই।
অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার পদে ৩ জনের মধ্যে ২ জন আছে। স্বাস্থ্য পরিদর্শক ৩ জনের মধ্যে ১ জন আছে, সহ-স্বাস্থ্য পরিদর্শক ৯ জনের মধ্যে আছে ৬ জন, আয়া আছে ২ জনের মধ্যে ১ জন, নার্স ৩৩ জনের মধ্যে আছে ৩১ জন।
ভুক্তভোগী রোগীদের কাছ থেকে জানা যায়, রোগী নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসলে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যায় না, সঙ্গে আছে নার্সদের দুর্ব্যবহার।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হেদায়েত বিন মোহাম্মদ সেতু জানান, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সংকট রয়েছে। বছর মেয়াদে এসব লোক নেওয়া হয়। মেয়াদ শেষ হওয়ায় জনবল সংকট দেখা দিয়েছে। তবে এ মাসের মধ্যে এ সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাশে কপোতাক্ষ নদ খনন করায় মাটি পড়ে ড্রেনগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। যে কারণে হাসপাতালের নোংরা পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। চাহিদামতো ওষুধ সরবরাহ না থাকার অজুহাতে সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হওয়ার কথা জানান।
এ ছাড়া উপজেলার বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়নের ভৈরবাতে প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ সম্পূর্ণ হলেও অদ্যাবধি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির কার্যক্রম শুরু হয়নি।
ঝিনাইদহ ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মিথিলা ইসলাম জানান, ডাক্তারের স্বল্পতা সারা দেশে। যার কারণে এ জেলায় প্রতিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারের অভাবে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। আমরা ভারচুয়াল মিটিং করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ডাক্তার ও লোকবল সংকটের কথা জানিয়েছি। অচিরেই এই সমস্যা সমাধান হবে বলে আশা করছি।