চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘটছে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা। এতে মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে এবং আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছে অনেকেরই।
আঞ্চলিক এই মহাসড়কে সড়ক-বিভাজক (ডিভাইডার) না থাকা, অদক্ষ চালক ও লাইসেন্সবিহীন যানবাহনের বেপরোয়া গতি এবং সড়কের পাশে যত্রতত্র পার্কিংই এ দুর্ঘটনার মূল কারণ বলে মনে করছেন যাত্রীরা। সংকট সমাধানে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই বলেও জানান তারা।
জানা গেছে, গত দু`মাসে এই আঞ্চলিক মহাসড়কে ছোট-বড় প্রায় ২০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ জনের মৃত্যু ও ৩৫ জনের বেশি আহত হয়েছেন। তারমধ্যে গত ৭ ফেব্রুয়ারি স্কুল থেকে ফেরার পথে বালিবাহী ট্রলির ধাক্কায় কাঞ্চননগরে এক স্কুলছাত্রী নিহত হন। ২০ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারী ঈদগাহ এলাকায় বাস-অটোরিকশা মুখোমুখি সংঘর্ষে ব্যাংক কর্মকর্তা কামরুল ইবনে হাসান সহ দুইজনের মৃত্যু হয়।
২৫ ফেব্রুয়ারি নাজিরহাট পৌরসভাস্থ আজম রোডের মাথায় সিএনজি (অটোরিকশা)-টেম্পু মুখোমুখি সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রেহানা আক্তার তানিয়া এবং কলেজ শিক্ষার্থী মো. পারভেজের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
এর আগে ২০২৩ সালে ৭ নভেম্বর দুপুরে হাটহাজারীর মির্জাপুর ইউনিয়নের চারিয়া ইজতেমা মাঠের সামনে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই এক পরিবারের ৫ জনসহ ৭ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন আরও ৩ জন।
সচেতন মহলের দাবী মহাসড়কে প্রয়োজনের চাইতে সিএনজি (অটোরিকশা), টমটম, নসিমন, টেম্পু, মোটরসাইকেলের আধিক্য এবং মহাসড়কের দু‘পাশে যত্রতত্র বাস, ট্রাক ও সিএনজি (অটোরিকশা) পার্কিংই দুর্ঘটনার জন্য বেশি দায়ী।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) চট্টগ্রাম বিভাগ সূত্রে পাওয়া তথ্যমতে, ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ৩৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ উদ্বোধন করা হয়। এর অধীনে চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ও খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি পর্যন্ত প্রায় ৩২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণ করা হয়। কাজ শেষ হওয়ার পর থেকে দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) উপজেলা শাখার সভাপতি প্রকৌশলী মুহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, ‘প্রতিদিন মহাসড়কে যে হারে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে তা খুবই উদ্বেগজনক। একক কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দ্বারা সড়ক দুর্ঘটনা রোধ সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্টদের আরো কার্যকরী ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।`
চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মো. ফারুক খান বলেন, `মহাসড়কে সিএনজি অটোরিকশা এবং ছোট গাড়িগুলো দুর্ঘটনার জন্য বেশি দায়ী।`
সড়ক ও জনপথ বিভাগ চট্টগ্রামের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী অনুপম শর্মা বলেন, `এ সড়কটি জাতীয়ভাবে একটি আঞ্চলিক সড়ক। এটি যেহেতু একটি জেলাকে সংযুক্ত করেছে, সেক্ষেত্রে এ সড়কের ক্যাটাগরি দুই লেনের। তাই, এ সড়কে ডিভাইডার দেওয়ারও সুযোগ থাকে না।`
আপনার মতামত লিখুন :